বিজ্ঞাপন

হাসপাতালে শিশুর মৃত্যু: স্কয়ারের চিকিৎসকের অব্যাহতির আদেশ বাতিল

February 23, 2021 | 9:15 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সাড়ে চার বছরের শিশু মির্জা অরুনিমা শাহপারের (অহনা) মৃত্যুর অভিযোগে করা মামলায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের এক চিকিৎসককে অব্যাহতি দিয়ে বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দেওয়া আদেশ বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের অবহেলায় শিশুমৃত্যুর অভিযোগ অধিকতর অনুসন্ধান করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারিক আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজিবের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে আজ শুনানিতে আবেদনকারী স্থপতি মির্জা শাহপারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খান খালিদ আদনান। আর স্কয়ার হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন মোহাম্মদ বাকির উদ্দিন ভূইয়া, এস এম ইকবাল বাহার ভূইয়া ও শিকদার মাহমুদুর রাজী।

রায়ের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে আইনজীবী খান খালিদ আদনান সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিশু মির্জা অরুনিমা শাহপারের (অহনা) চিকিৎসায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে করা মামলায় স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কাজী নওশাদ উন-নবীরকে অব্যাহতি দিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে শিশু মৃত্যুর বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’

বিজ্ঞাপন

স্কয়ার হাসপাতালের আইনজীবী এস এম ইকবাল বাহার ভূইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিশু অহনার মৃত্যুর বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে একজন চিকিৎসককে অব্যাহতি দিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় রাতিল করেছেন। একই সঙ্গে শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’

এর আগে বিচারিক আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়। পরে এ বিষয়ে রায়ের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। আজ নির্ধারিত দিনে এই রায় দেন আদালত।

রায়ের পর আইনজীবী খান খালিদ আদনান আরও জানান, শিশু অহনা ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালের ২৩ আগস্ট মৃত্যুবরণ করে। অহনার বাবা স্থপতি মির্জা শাহপার জলিল তার মেয়েকে বাঁচাতে চিকিৎসককে দেখান। পরে ওই বছরের ১৫ আগস্ট দেশের প্রথিতযশা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন। এক পর্যায়ে অবস্থার অবনতি হলে ১৭ আগস্ট তাকে ব্যাংককের সামিতিভেজ শ্রীনাকারিন শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। স্কয়ার হাসপাতালে অহনার ভিপি শান্ট অপারেশনের পর আড়াই দিনেও তারা শিশুটির ব্রেইনের পোস্ট অপারেটিভ অবস্থা জানার জন্য সিটি স্ক্যান অথবা এমআরআই করেনি। অথচ এরপর অহনাকে ব্যাংককের হাসপাতালে ভর্তির পরপরই লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তারা সিটি স্ক্যান করেছিল, যাতে অহনার দুটি ব্রেইন হ্যামারেজ সংঘটনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যদিও পরবর্তীতে অহনাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপের পর অহনার বাবা বুঝতে পারেন, অহনার চিকিৎসাতে অবহেলায় মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনায় মির্জা শাহপার জলিল বাদী হয়ে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী নওশাদ উন-নবী, ডা. মো. মাসুদুর রহমান, অধ্যাপক ডা. সানোয়ার হোসেন ও স্কয়ার হাসপাতালকে আসামি করে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ ক/৩৪ ধারায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে মামলা করেন।

ডা. মো. মাসুদুর রহমান ওই সময় স্কয়ার হাসপাতালের শিশু বিভাগ ও পিআইসিইউ কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং অধ্যাপক ডা. সানোয়ার হোসেন স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বিভাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বিচারিক আদালত বাদীর অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) তৎকালীন ভিসিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। এই আদেশের প্রায় দেড় বছর পর সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উল্লিখিত কারণে ভুক্তভোগী মৃত্যুর জন্য কে দায়ী বা আদৌ দায়ী কি না তার পূর্ণাঙ্গ মতামত দেওয়া সম্ভব নয়। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট ডা. কাজী নওশাদ উন-নবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বাকিদের অব্যাহতি প্রদান করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে বাদী মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করলে, পরে তা খারিজ করে দেন আদালত। ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ২০১৭ সালে একটি আবেদন করেন মির্জা শাহপার জলিল।

বিজ্ঞাপন

এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ আবেদনের শুনানি শেষে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বহাল রাখা কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ওই রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজ (২৩ ফেব্রুয়ারি) রায় এই রায় দিলেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন