বিজ্ঞাপন

ক্ষমতায় থাকা মানে মানুষের সেবা করার সুযোগ: প্রধানমন্ত্রী

June 20, 2021 | 5:14 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অর্থনীতির মূল কথাটাই হচ্ছে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়ে, তাদের জীবনটাকে উন্নত করে দেওয়া। ক্ষমতায় বসে শুধু নিজে খাবো, নিজে ভাল থাকব, সেটি তো না। ক্ষমতায় থাকা মানে হচ্ছে মানুষের সেবা করার একটা সুযোগ, মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২০ জুন) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের (২য় পর্যায়) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ৪৫৯টি উপজেলার কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন। এ সময় কয়েকটি উপজেলা প্রান্তে যুক্ত হয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

দ্বিতীয় পর্যায়ে আজ মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকা ঘর প্রদান কার‌্যক্রমের উদ্বোধন করেন। গত জানুয়ারিতে প্রথম পর্যায়ে ৭০ হাজার পরিবারকে ঘর প্রদানের পর রোববার (২০ জুন) দ্বিতীয় পর্যায়ে এক সঙ্গে আরও প্রায় ৫৩ হাজার ৩৪০ টি অসহায় পরিবারকে ঘর দিচ্ছে সরকার। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরও ১ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে।

গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। তিনি জানান, একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দেওয়ার ঘটনা গৃথিবীতে নজিরবিহীন।বিভিন্ন দেশে ভূমিহীন, গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেওয়ার নজির থাকলেও ভূমিহীন-গৃহহীনদের ডেকে তাদের বাড়ি-ঘর দেওয়ার নজির আর নেই।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির মূল কথাটাই হচ্ছে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়ে, তাদের জীবনটাকে উন্নত করে দেওয়া। ক্ষমতায় বসে শুধু নিজে খাব, নিজে ভাল থাকব, সেটি তো না। ক্ষমতায় থাকা মানে হচ্ছে মানুষের সেবা করার একটা সুযোগ। মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ। মানুষের সেবক হিসাবে যখনি প্রথম সরকার গঠন করেছি এই ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেবক হিসাবেই নিজেকে আমরা তৈরি করেছি এবং সেভাবে সাহায্য করে যাচ্ছি, কাজ করে যাচ্ছি।’

‘এ পর্যন্ত আমরা সরকারের প্রথমবার ৫ বছর এবং পরপর একটানা তৃতীয়বার, এর মধ্যে প্রায় আমরা ১০ লাখের ওপর মানুষকে এরইমধ্যে গৃহ নির্মাণ করা করে দিতে সক্ষম হয়েছি। তারা বাসস্থানের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। কারণ আমাদের সঙ্গে আবার অনেকেই এগিয়ে আসছেন।’

সারাাদেশে গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের ক্যাটাগরি করে ধীরে ধীরে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে যত আমাদের স্বাবলম্বিতা আসবে আমরা মানুষের জন্য তত বেশি করতে পারব, তত বেশি দিতে পারব। আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা দিয়ে ধীরে ধীরে আমরা যেভাবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি পাশাপাশি আমাদের সমস্ত সম্পদগুলো চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষ তৃণমূল মানুষ তাদের কাচে পৌঁছাতে তাদের হাতে দিতে এবং তাদের জীবনমান উন্নত করতে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য আমরা সেটাই করে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুনর্ণজয়ন্তীতে মুজিববর্ষ উদযাপন করার কথা প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করে করেছেন, আমাদের লক্ষ্য তার সৃষ্ট এই বাংলাদেশ এই বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষ একটা ঠিকানা পাবে এবং সেইভাবে বাঁচবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা তার কাজ করে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরইমধ্যে আমরা সেমিপাকা ঘর প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি পরিবারকে দিতে সক্ষম হয়েছি। প্রায় ৬৬ হাজার আমরা আলাদা ঘর দিয়েছি বাকিটা ব্যারাক করে দিয়েছি। আজকে আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে দুই শতক খাস জমিসহ সেমিপাকা ঘর ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সুযোগ করে দিচ্ছি।’

সংসদ সদস্য, দলীয় নেতাকর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই কর্মসূচিতে এগিয়ে এসেছেন সেজন্য সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি খুব আনন্দিত যে কমিটিটা তৈরি করার পর সমাজের অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। আমাদের অনেক সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তারাও এগিয়ে এসেছেন। সেখানে তারা অনুদান দিয়েছেন। যেখানে আমরা জমি পাব না, সেখানে এই তহবিল থেকে জমি কিনে দেব, সেখানে আমরা ঘরে করে দেব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবেই আমরা চাচ্ছি যে বাংলাদেশের কোন মানুষ গৃহহারা থাকবে না। তাই আমি দেশবাসীকেও আহ্বান জানাব, আপনারারও নিশ্চয় অবশ্যই দেখবেন, কোন মানুষ যদি গৃহহীন ভূমিহীন থাকে অবশ্যই সেটা আমাদের জানালে আমরা তাদের জন্য ঘর বাড়ির ব্যবস্থা করে দেব।’

বিজ্ঞাপন

‘‘আমি মনে করি যে অন্তত এইটুকু করলে পরে আমার বাবার আত্মটা তো শান্তি পাবে। তিনি তো খুশি হবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করি, সেই উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে যাদের আমরা জমি নেই তাদেরও আমরা ঘরবাড়ি করে দেওয়া হয় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তাদেও জমি নেওয়া হয়েছে তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। অর্থ্যাৎ কোনো মানুষ যেন একেবারে কষ্টে না থাকে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তাছাড়া আপনারা জানেন যে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় আামাদের কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষষ্ঠীও আছে তাদের জন্য আলাদাভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এটাই আমার লক্ষ্য, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তার সৃষ্ট বাংলাদেশে একটি মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। এই নীতি নিয়েই আমরা চলছি এই নীতি নিয়েই চলব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস, এর প্রভাবটা কিন্তু শেষ হয়ে যাচ্ছে না। আমরা ভ্যাকসিন কিনে নিয়ে আসছি,ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি এবং আরও ব্যাপকভাবে করবো আরও আনব। কিন্তু সকলের কাছে আমার অনুরোধ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিমালাটা মেনে চলা, মাস্ক পরে যাওয়া, হাত ধোয়া দুরত্ব বজায় রাখা, যেন একজনের দ্বারা আরেকজন সংক্রামিত না হয়। এই ব্যাপারে সবাই একটু সচেতন থাকবেন। সেই অনুরোধ জানাচ্ছি কারণ অনেককে হারিয়েছে এটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। আমি সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি, শান্তি কামনা করি। সেই সঙ্গে বলি, আর আমরা আপনজন হারাতে চাই না। কাজেই সবাই যেন একটু স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলেন। আমি মনে করি নিজেসহ ভালো থাকবেন, অপরকে ভালো থাকতে সাহায্য করবেন।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন