বিজ্ঞাপন

‘কষ্টে আছেন’ সেবকহীন বাবুনগরী, মুক্তি চান হেফাজত নেতাদের

June 27, 2021 | 10:34 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সারাদেশে তাণ্ডবের ঘটনায় গ্রেফতার হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ‘মানবিক বিবেচনায়’ মুক্তি দাবি করেছেন সংগঠনটির আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী। গ্রেফতার হওয়া শীর্ষ নেতাদের অনেকেই হেফাজতে ইসলামের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাননি। তবে তাদের ‘হেফাজতের নেতাকর্মী’ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন বাবুনগরী।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদরিসের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীর এ দাবির কথা বলা হয়েছে।

জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘বিনা দোষে আজ দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম জেলখানায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের অনেকেই বয়োবৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। জেলেখানার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে জুনায়েদ আল হাবীবসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে খবর পেয়েছি ৷ মানবিক বিবেচনায় নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে কওমি মাদরাসা খুলে দিন।’

নিজেও অসুস্থ থাকার কথা উল্লেখ করে বাবুনগরী বলেন, ‘হেফাজতের ২০১৩ সালের আন্দোলনে গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডের পর থেকেই আমি অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগসহ ডায়াবেটিস-প্রেসারে ভুগছি। তিনবেলায় দৈনিক আমার অর্ধশত ট্যাবলেট খেতে হয় এবং ইনসুলিন নিতে হয়। খাদেমদের সহযোগিতা ছাড়া একাকী চলাফেরা করতে পারি না। আমার ব্যক্তিগত খাদেম এনামুল হাসান ফারুকীকেও সম্পূর্ণ বিনা দোষে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে জেলে আটক থাকায় ওষুধ সেবনসহ নানা কাজে আমি কষ্ট পাচ্ছি। আমার সেবক এনামুল হাসানেরও মুক্তি চাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

‘জেলখানায় আটক থাকা ওলামায়ে কেরাম কোন অন্যায় অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন। তারা মাদরাসায় কুরআন-হাদিসের পাঠদানে নিমগ্ন থাকতেন। ওয়াজ-নসিহত করতেন। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। আজ তাদের দোষী সাজিয়ে জেলখানায় বন্দি রাখা হয়েছে। এটা বড়ই দুঃখজনক। শীর্ষ ওলামায়ে কেরামকে এভাবে জেলখানায় আবদ্ধ রেখে কষ্ট দিলে তাদের বদদোয়ায় আল্লাহর গজব আসতে পারে’- বলেন বাবুনগরী।

তার দাবি, দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা মামলায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা জেলে আটক থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ক্ষোভের বিস্ফোরণ হলে এর দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে।’ করোনাভাইরাসের ‘বালামুসিবত’ দূর করতে কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ারও দাবি করেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের নেতাকর্মীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। দেশজুড়ে তাণ্ডবে জড়ান হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে গণমাধ্যমে। দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংসতায় হতাহত, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় তাণ্ডবের পর হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হন। অবশ্য গ্রেফতারের আগে গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে কথিত স্ত্রীসহ অবকাশ যাপনে গিয়ে স্থানীয় জনতার হাতে অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক।

বিজ্ঞাপন

এসব ঘটনা নিয়ে নানামুখী বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত। এক পর্যায়ে গত ২৫ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন জুনায়েদ বাবুনগরী। বিলুপ্তির দেড় মাসের মধ্যে গত ৭ জুন আবার ৩৩ সদস্যের নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। নতুন কমিটিতে মামুনুলসহ বিতর্কিত নেতাদের রাখা হয়নি।

২০১০ সালে দেশের কওমি অঙ্গনের প্রবীণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়। আহমদ শফী আমীর এবং জুনায়েদ বাবুনগরী প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শাহ আহমদ শফী মারা যান। এরপর গত বছরের ১৫ নভেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে ১৫১ সদস্যের হেফাজতের নতুন কমিটি হয়। কমিটিতে শফীপন্থীদের বাদ দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলের নেতাদের ঠাঁই দেওয়ার অভিযোগে ওঠে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন