বিজ্ঞাপন

বৃষ্টিতে ভূমিধসের শঙ্কা, পাহাড় থেকে সরানো হলো ৯২ পরিবার

July 28, 2021 | 1:52 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতে ভূমিধসের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত ৯২টি পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ সময় ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের টিম নগরীর পাহাড়ে অভিযান চালায়। চট্টগ্রামের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং ছয় জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ অভিযানে ছিলেন।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছয়টি পাহাড় থেকে ৯২ পরিবারের ৩১০ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের চারটি আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। অভিযান এখনও চলমান আছে। আমরা বিভিন্ন পাহাড় পরিদর্শন করে দেখছি, কারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন। সবাইকে আমরা সরিয়ে নেব।’

গত এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় থেমে থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে চট্টগ্রামে গত তিনদিন ধরে কখনও হালকা থেকে মাঝারি, আবার গত (মঙ্গলবার) রাতে ভারি বৃষ্টিপাত হয়।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় ভূমিধসে হতাহতের আশঙ্কায় নগরীর বাটালি হিল, মতিঝর্ণা, আকবরশাহ, হিল-১, হিল-২ এবং বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন পাহাড়ে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের টিম। সেখান থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত ৩১০ জনকে সরিয়ে চারটি আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- বায়েজিদের আল হেরা মাদরাসা, রউফাবাদ রশিদিয়া মাদ্রাসা, ফিরোজ শাহ কলোনি প্রাথমিক বিদ্যাল এবং লালখান বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান জানিয়েছেন, আশ্রয়কেন্দ্রে আনা পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বুধবার দুপুরে তাদের ভুনাখিচুড়ি ও ডিম সরবরাহ করা হবে। রাতের খাবারও দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের পাহাড় থেকে সরে যেতে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সরকারিভাবে গঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি চট্টগ্রামে বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা করেছিল। সেই তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রামে মোট ১৭টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে। এর মধ্যে ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়। বাকি সাতটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার। এসব সংস্থার মধ্যে আছে- রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত বিভাগ, বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের তালিকায় ১৭টি পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য চিহ্নিত করা হয়।

এরপর প্রায় ছয় কিলোমিটার বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ছোট-বড় ১৮টি পাহাড় কাটে। সেখানকার আটটি পাহাড়ে আছে কয়েক’শ অবৈধ বসতি। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম নগরী ও সংলগ্ন এলাকায় ২৫টি পাহাড়ে কয়েক হাজার পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে বলে ধারণা জেলা প্রশাসনের।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ২০০৭ সালে পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে বড়ধরনের মর্মান্তিক বিপর্যয় ঘটে। ওই বছরের ১১ জুন নগরীর কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, সেনানিবাসের লেডিস ক্লাব সংলগ্ন লেবুবাগান, বায়েজিদ বোস্তামী, লালখান বাজারের মতিঝর্ণা পাহাপড়সহ সাতটি স্থানে পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে মারা যায় শিশু-নারী ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের ১২৭ জন।

পাহাড় ধসে ২০০৮ সালে মারা যায় ১২ জন। ২০১১ সালে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ১৭ জন, ২০১২ সালে মারা যায় ২৩ জন। এভাবে প্রতিবছরই পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন