বিজ্ঞাপন

কোটি টাকার ওষুধ ছিটায় চসিক, মশা মরে না কেন?

August 3, 2021 | 8:58 pm

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মশা নিধনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন যে রাসায়নিক ব্যবহার করছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় তা ‘প্রায় অকার্যকর’ হিসেবে উঠে এসেছে। একই গবেষণায় দেখা গেছে, ফগার মেশিনের মাধ্যমে ছিটানো ওষুধে মশা মরছে না। তবে গবেষণা দলকে সিটি করপোরেশনের সরবরাহ করা হারবাল জাতীয় এক ধরনের ওষুধ স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ছিটিয়ে প্রায় শতভাগ মশার মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া নালা-নর্দমায় ছোট মাছ লার্ভা খেয়ে ধ্বংস করছে— এমন প্রমাণও মিলেছে।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় গবেষক দল মশা নিধনে রাসায়নিকের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে নালা-নর্দমায় পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ওপরও জোর দিয়েছে।

চসিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে রাসায়নিক চবি’র গবেষক দল প্রায় অকার্যকর বলছে তা গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে ফগার মেশিনের মাধ্যমে। তবে গত চার-পাঁচ বছর ধরে ছিটানো ওষুধে মশার মৃত্যু না হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি বছর দুই কোটি টাকারও বেশি মশার ওষুধ কিনে থাকে চসিক। মেয়র ফগার মেশিনের পরিবর্তে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

গবেষণা প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর অভিযোগ উঠেছে, প্রায় অকার্যকর ওষুধ ব্যবহার করে চসিক কয়েক কোটি টাকা এরই মধ্যে গচ্চা দিয়েছে। কিন্তু ওষুধ কেন কার্যকর হচ্ছে না— সে বিষয়ে কোনো অনুসন্ধান করেনি চসিক। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর এ অভিযোগের সুরাহা করার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আক্তারের সহযোগিতা চান। এতে সাড়া দিয়ে মশার ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য গত ২৪ মার্চ ছয় সদস্যের একটি কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে গবেষণা টিমকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেন চবি উপাচার্য।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- চট্টগ্রামে ৫৭ নমুনার ১৫টিতেই এডিস মশার লার্ভা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়াকে আহ্বায়ক ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক রাসেলকে সদস্য সচিব করে গবেষণা দল গঠন করা হয়। এতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন— রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায়, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এইচ এম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী এবং সাবেক চবি শিক্ষার্থী মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আশেকুল ইসলাম।

গবেষণা টিমে সদস্য হিসেবে ছিলেন— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন, মো. খন্দকার রাজিউর রহমান, সজীব রুদ্র, সনাতন চন্দ্র বর্মণ, মো. ইকরামুল হাসান, জয়া দেন ও আরিফ হোসাইন এবং প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের মো. ওমর ফারুক।

বিজ্ঞাপন

গবেষণা দলের প্রধান রবিউল হাসান ভূঁইয়া সারাবাংলাকে জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীন ৯৯টি স্থান পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে ৫১টি ও চবি ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে আরও ছয়টিসহ মোট ৫৭টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৩৩টি স্থানে এডিসি লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ৩৯টি স্থানে পাওয়া গেছে এনোফিলিস লার্ভার উপস্থিতি।

চট্টগ্রাম নগরীতে এডিস লার্ভার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে ১৫টি স্থানে। স্থানগুলো হলো— চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, ফরিদার পাড়া, কল্পলোক আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়ক, চকবাজার ডিসি রোড বাদশা মিয়া সওদাগর বাড়ি, ডিসি রোড তুষার কলোনি, পশ্চিম বাকলিয়া চাক্তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদরঘাট রেলওয়ে কলোনি, পশ্চিম মাদারবাড়ি মাঝিরঘাট রোড, আমবাগান বাস্তুহারা কলোনি, সেগুনবাগান রেলওয়ে কলোনি, পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট, সাগরিকা জেলেপাড়া, দক্ষিণ কাট্টলী রুপালি আবাসিক এলাকা, হালিশহর এ-ব্লক এবং দক্ষিণ কাট্টলী ফইল্যাতলী বাজার।

গবেষণায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তবে ক্যাম্পাসের বাইরে জোবরা গ্রামের বখতেয়ার সড়ক ও ফকিরবাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি মিলেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে-ভেতরে ৫৭টি স্পট থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করি। লার্ভাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে লালন-পালন শেষে পূর্ণাঙ্গ মশায় পরিণত হয়। সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে, আমরা সেগুলো মশার ওপর প্রয়োগ করি। এতে আমরা যে রেজাল্ট পেয়েছি, সেটি প্রতিবেদনে সুপারিশসহ উল্লেখ করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে মশার লার্ভা ধ্বংসের জন্য ‘লার্ভিসাইড’ ও ‘এলডিও’ (লাইট ডিজেল অয়েল, যা কালো তেল নামে পরিচিতি) ব্যবহার করা হয়। আর উড়ন্ত মশা নিধনের জন্য আমরা এডাল্টিসাইড ব্যবহার করি। তবে এই মুহূর্তে আমাদের কাছে এডাল্টিসাইডের মজুত নেই।’

সহকারী অধ্যাপক এইচ এম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সারাবাংলাকে জানান, চসিক থেকে গবেষণা দলকে দুই ধরনের নমুনা ওষুধ দেওয়া হয়। প্রথম নমুনায় ছিল চারটি এডাল্টিসাইড ও একটি লার্ভিসাইড। দ্বিতীয় নমুনায় ছিল এক ধরনের হারবাল জাতীয় এডাল্টিসাইড ও লার্ভিসাইড। দুই ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করে কত শতাংশ মশার মৃত্যু হয় সেটার ওপর গবেষণায় জোর দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের ব্যবহৃত এডাল্টিসাইড ও লার্ভিসাইডের সঙ্গে কেরোসিন মিশিয়ে (প্রতি লিটারে ১৬ দশমিক ৯ মিলিলিটার) ফগার মেশিনের মাধ্যমে প্রয়োগের দুই ঘণ্টা পর দেখা গেছে, মশার মৃত্যুহার মাত্র ১৪ শতাংশ। সরাসরি এডাল্টিসাইড প্রয়োগ করে দেখা গেছে, মৃত্যুহার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ। অর্থাৎ ওষুধ প্রয়োগের পরও ৮০ শতাংশের বেশি মশা অক্ষত থেকে যাচ্ছে।

আবার হারবাল জাতীয় এডাল্টিসাইড যা সচরাচর চসিক ব্যবহার করে না, সেটি কোরোসিনের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রতি লিটারে এক মিলিলিটার) ফগার মেশিনের মাধ্যমে প্রয়োগের দুই ঘণ্টা পর দেখা গেছে, মাত্র ১৯ শতাংশ মশা মারা গেছে। সরাসরি এডাল্টিসাইড ব্যবহার করে ২৫ শতাংশ মশার মৃত্যুর প্রমাণ মিলেছে। অর্থাৎ ফগার মেশিনের মাধ্যমে হারবাল এডাল্টিসাইড ব্যবহার করার পরও ৮০ শতাংশ মশা অক্ষত থেকে যাচ্ছে। মোট ২০০টি মশার ওপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

অন্যদিকে ৫০টি মশার ওপর লার্ভিসাইড স্প্রে করে পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, লার্ভিসাইড কেরোসিনের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রতি লিটারে শূন্য দশমিক ১২৫ মিলিলিটার) দুই ঘণ্টা পর দেখা গেছে, মাত্র ১৬ শতাংশ মশার মৃত্যু হয়েছে। এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি মাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করেও শতভাগ মৃত্যু নিশ্চিত হয়নি, মৃত্যুহার ছিল ৮৪ শতাংশ।

তবে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে হারবাল জাতীয় লার্ভিসাইড কেরোসিনের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রতি লিটারে ১৬ দশমিক ৯ মিলিলিটার) মশার ওপর ছিটানো পর দেখা গেছে, শতভাগ মশার মৃত্যু হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় হারবাল জাতীয় এডাল্টিসাইড কেরোসিনের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রতি লিটারে ১৬ দশমিক ৯ মিলিলিটার) প্রয়োগের দুই ঘণ্টা পরও শতভাগ মশার মৃত্যু পাওয়া যায়।

আর চসিক যে প্রক্রিয়ায় এডাল্টিসাইড ব্যবহার করে, তার কার্যকারিতা তেমন পাওয়া যায়নি গবেষণায়। এডাল্টিসাইড কেরোসিনের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রতি লিটারে এক মিলিলিটার) স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে প্রয়োগের দুই ঘণ্টা পর মাত্র ৩৪ শতাংশ মশা মারা যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি এডাল্টিসাইড প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ মশা মারা যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

চসিক থেকে সরবরাহ করা আরও তিনটি রাসায়নিকের কার্যকারিতা মাত্র ৮ থেকে ১২ শতাংশ পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণা টিমের সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক রাসেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এখন যেসব এডাল্টিসাইড ও লার্ভিসাইড ব্যবহার করে, সেগুলো তাদের মানমাত্রা অনুযায়ী ব্যবহার করে আমরা ভালো ফল পাইনি। অর্থাৎ সেগুলোর খুব একটা কার্যকারিতা স্প্রে মেশিনের মাধ্যমেও নেই, ফগার মেশিনের মাধ্যমেও নেই। এর মধ্যে এডাল্টিসাইড প্রায় অকার্যকর। ফগার মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটালে মশার মৃত্যুহার খুবই কম হয়। লার্ভিসাইড ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ছিটানোর পর কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। তবে সেই পরিমাণ রাসায়নিকের ব্যবহার মানুষ, গাছসহ যে কোনো প্রাণি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।’

চসিকের সরবরাহ করা হারবাল জাতীয় লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ব্যবহার করে শতভাগ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান।

গবেষণার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ওমর ফারুক রাসেল বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যেসব ড্রেনের পানি প্রবহমান আছে, সেখানে লার্ভা নেই। আবার যেখানে পানি জমে আছে, সেখানে লার্ভার উপস্থিতি সর্বোচ্চ। কিন্তু ডিসি রোডে একটি এলাকায় ড্রেনে পানি জমে থাকার পরও লার্ভা পাওয়া যায়নি। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সেখানে পানিতে থাকা কিছু ছোট ছোট মাছ আমরা সংগ্রহ করে ক্যাম্পাসে নিয়ে যাই। লার্ভা সেগুলোর সামনে দেওয়ার পর দেখা যায়, মাছগুলো লার্ভা খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে। এতে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে ড্রেনে ও নালা-নর্দমায় এ ধরনের মাছ থাকহলে লার্ভার উৎপত্তি সহজ হবে না।’

গবেষণা প্রতিবেদনে চসিকের জন্য চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— বাসাবাড়ির আশপাশে খাল, নালা-নর্দমা, নদী পরিষ্কার রেখে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা; নগরবাসীকে সচেতন করা; নির্দিষ্ট সময় পরপর অথবা নতুন কীটনাশক কেনার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা যাচাই করা; এবং রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনা।

রবিউল হাসান ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা রাসায়নিকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলেছি। যেমন— মাছ চাষের মাধ্যমে লার্ভা নিয়ন্ত্রণ কিংবা অণুজীব-উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করে লার্ভা ধ্বংস করা যেতে পারে। গাছের নির্যাসের বিষয়ে আমরা সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা চেয়েছি। কারণ এতে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। এছাড়া গবেষণা করতে গিয়ে আমরা দেখেছি— যেসব স্থানে লেবু, নিম, পুদিনা, ইউক্যালিপটাস বা এ ধরনের গাছ আছে, সেখানে উড়ন্ত মশা আসে না। এসব গাছ যদি বেশি করে লাগানো হয়, তাহলে আমরা সুফল পেতে পারি।’

গবেষণা প্রতিবেদন পাওয়ার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ফগার মেশিন দিয়ে এত ওষুধ ছিটানো হয়, কিন্তু নাগরিকরা বলেন তারা মশার যন্ত্রণায় অতীষ্ঠ। কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। অথচ মশা মরছে না। তাহলে এত টাকা খরচ করে তো লাভ নেই। এখন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে— ফগার মেশিন দিয়ে আমরা এতদিন যে মশার ওষুধ ছিটিয়েছি, তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অথচ স্প্রে মেশিনের চেয়ে ফগার মেশিনের দাম একশ গুণ বেশি। এত দাম দিয়ে মেশিন কিনে কোনো সুফল মিলছে না। এই বিষয়ে আমরা অন্ধকারে ছিলাম। গবেষণা করার ফলে আমরা একটি বিষয় জানলাম।’

‘গবেষণার পর আমরা এখন স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানোকে বেশি কার্যকর বলে মনে করছি। আমরা এখন স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারি। কিন্তু এ বিষয়ে জনসাধারণকে বোঝাতে হবে ও সচেতন করতে হবে। আরেকটি বিষয় জানলাম যে কিছু ছোট মাছ লার্ভা খেয়ে ধ্বংস করে। এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না— সেটিও আমরা দেখব,’— বলেন মেয়র।

এ অবস্থায় বুধবার (৪ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে শুরু হচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম নগরীতে এডিস মশা ও লার্ভা ধ্বংসে সিটি করপোরেশনের ৩০ দিনব্যাপী ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো গত ১৫ বছর ধরে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটিয়ে আসছি। গত চার-পাঁচ বছর ধরে শুনছি যে মশা মরছে না। আমরা লার্ভিসাইড ও এলডিইউ ওষুধ ব্যবহার করি। সেগুলো কিন্তু আইসিডিডিআরবিতে পরীক্ষিত। এখন গবেষণায় বলা হচ্ছে— ওষুধগুলোর কার্যকারিতা কম, ফগার মেশিনে ছিটালে মশা মরে না। মেয়র মহোদয় নিশ্চয় একটি সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটাতে বলেন, সেভাবে করব। তবে ফগার মেশিনে আগের কিছু ওষুধ রয়ে গেছে। যদি মেয়র মহোদয় নির্দেশ দেন, সেগুলো আগে ছিটিয়ে শেষ করতে হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন