বিজ্ঞাপন

লিগ্যাল এইডের সেবায় ‘মন্থর গতি’

September 17, 2021 | 11:02 pm

কামরুল ইসলাম ফকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগোষ্ঠীকে আইনগত সহায়তা করে থাকে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। সংস্থাটির গত চার বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে পর্যালোচনায় দেখা যায়— সেবা প্রার্থীর সংখ্যা খুবই ধীর গতিতে বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

দেশে বর্তমানে বিচারাধীন মামলা প্রায় ৪০ লাখ। প্রতি বছর সে সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে গত দেড় বছরে করোনার কারণে বিচারপ্রার্থী দরিদ্র, অস্বচ্ছল মানুষের সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়েনি লিগ্যাল এইড অফিসের সেবা।

গত চার বছরের জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে অসহায় দরিদ্র মানুষের সেবা প্রদানের কার্যক্রম মন্থর গতিতে চলছে। গত চার বছরের মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮০৬ জন বিচার প্রার্থী লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা পেয়েছেন। ওই সময়ে কল সেন্টারের মাধ্যমে আইনি পরামর্শ ও সেবা পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৯৭৯ জন অস্বচ্ছল বিচারপ্রার্থী।

বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড অফিস, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল এবং জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের মাধ্যম আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৬ লাখ ২২ হাজার ২৭২ জন আইনি সহায়তা ও তথ্য সেবা পেয়েছেন। এ সময়ে মামলার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় করা হয়েছে ৬৪ কোটি ৮২ লাখ ৬ হাজার ৮৫০ টাকা।

এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১ লাখ ৭৯১ জন জন বিচারপ্রার্থী সংস্থাটির মাধ্যমে সরকারি আইনগত সহায়তা সেবা গ্রহণ করেছে। এ সময়ে কল সেন্টারের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন ২৯ হাজার ৫৮৪ জন।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৯২ হাজার ৫৮৫ জন আইনি পরামর্শ ও সহায়তা পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৪ হাজার ২৭১ জন কল সেন্টার থেকে সেবা পেয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১ লাখ ৮০৬ জন আইনি পরামর্শ ও সহায়তা পেয়েছেন। এর মধ্যে কল সেন্টার থেকে সেবা পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৯৭৯ জন।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সেবা পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৯১২ জন। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৯২৩ জন কল সেন্টারের মাধ্যমে আইনি পরামর্শ ও সেবা পেয়েছেন। গত চার বছরের মধ্যে জাতীয় হেল্পলাইনের মাধ্যমে এক বছরে (২০১৮-১৯ অর্থ বছর) সর্বোচ্চ ৩৩ হাজার ৯৭৯ জন সেবা পেয়েছেন।

এ ছাড়া গত অর্থ বছরে কারাগারে আটকে থাকা আর্থিক অস্বচ্ছল ৮ হাজার ৫৭২ জন কারাবন্দীকে আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা আইন’ প্রণয়নের পর ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা’ স্থাপন করে সরকার। এ সংস্থার অধীনে দেশের প্রত্যেক জেলার জজকোর্ট প্রাঙ্গণে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করে সেখানে সহকারী জেলা/সিনিয়র সহকারী জেলা জজ পদ মর্যাদার বিচারককে লিগ্যাল এইড অফিসার পদে পদায়ন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে। চৌকি আদালতে ও শ্রম আদালতে গঠিত হয়েছে বিশেষ কমিটি। এসব কমিটি ও লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন, অসমর্থ বিচারপ্রার্থী ও শ্রমজীবী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

২০০৯-২১ সাল পর্যন্ত সময়ে হেল্পলাইন কলসেন্টার (১৬৪৩০), জেলা লিগ্যাল এইড অফিস, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস এবং শ্রমিক আইন সহায়তা সেল কার্যালয়সমূহ থেকে ৬ লাখ ২২ হাজার ২৭২ জন আইনি সহায়তা ও তথ্য সেবা পেয়েছেন।

৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড অফিস: ২০০৯ সাল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৬ জন সেবা পেয়েছেন। এর মধ্যে আইনি পরামর্শ সেবা পেয়েছেন ১ লাখ ৩৭৭ জন। মামলায় সহায়তা পেয়েছেন ২ লাখ ৯২ হাজার ৫৮৫ জন। বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তিসেবা পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৫৭৬ জন। হটলাইনের মাধ্যমে তথ্য সেবা পেয়েছেন ১৭ হাজার ৩২৮ জন। আর এ সময়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে ৫৯ কোটি ৭৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৮ টাকা।

হেল্পলাইন কলসেন্টার (১৬৪৩০): প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয় হেল্পলাইন কলসেন্টারের মাধ্যমে গত অর্থ বছর পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৩ জন আইনি পরামর্শ ও তথ্য সেবা পেয়েছেন।

শ্রমিক আইনি সহায়তা সেল: প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম আইনগত সহায়তা সেলের মাধ্যমে গত অর্থ বছর পর্যন্ত ২১ হাজার ৮৭৬ জনকে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা করা হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫১২ জনকে মামলায় সহায়তা করা হয়। এবং এ সময়ে ২ হাজার ৫৮৪ জনকে বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তিসেবা প্রদান করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড অফিস: প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত অর্থ বছর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ২২ হাজার ৬৮৭ জনকে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ২০ হাজার ১৭ জন আইনি পরামর্শ সেবা পেয়েছেন। আর ২ হাজার ৬৭০ জনকে মামলায় সহায়তা করা হয়।

এ সব বিষয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামের বক্তব্য জানার জন্য তার ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন