বিজ্ঞাপন

আন্দোলন স্থগিত, অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন দাবি

April 12, 2018 | 12:03 pm

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন স্থগিতের এ ঘোষণা দেন। সেখানে আরও কথা বলেন যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর, রাশেদ খান ও ফারুক হাসান।

বিজ্ঞাপন

আন্দোলন স্থগিতের সময় ছাত্র পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন তা অবিলম্বে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে এবং দ্রুত কার্যকর করতে হবে, আন্দোলনের সময় যেসব শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে, পুলিশি নির্যাতনে যেসব শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার ভার সরকারকে বহন করতে হবে, পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নামে অজ্ঞাতনামা যে ৫টি মামলা দায়ের করেছেন তা প্রত্যাহার করতে হবে  এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বা নেতাদের কারো যদি পরবর্তীতে কোনো ধরনের হয়রানি করা হয়, তবে পুনরায় আন্দোলনে নামা হবে।

নুরুল হক বলেন, ‘সারাদেশে অসংখ্য কর্মী আমাদের এই আন্দোলন সফল করার জন্য কাজ করেছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাদের সহায়তা করেছেন। মিডিয়া কর্মীরা আমাদের আন্দোলনে অব্যাহত সমর্থন যুগিয়েছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

এ সময় আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্যের বেদীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিতে ফুলের মালা অর্পণ করেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষে আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে আনন্দ মিছিল করেন। যা শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, কলা ভবন, কমার্স ফ্যাকাল্টি, মহসিন হল, ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিলে আন্দোলনকারীরা ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’, ‘যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা, শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা’, ‘মেধাবীদের পক্ষ থেকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা’ ‘মেধাবীরা নিশ্চিত হলো, কোটপ্রথা বাতিল হলো’, এসব স্লোগান দেন।

বুধবার (১১ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটা পদ্ধতি বাতিল, এটা আমার পরিষ্কার কথা। যাতে কারো কোনও সমস্যা না হয়, বার বার যেনো রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন না হয়, বারবার যাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না হয়, সেটা বন্ধ করতে আমি এই কোটা পদ্ধতি বাতিল করে দিতে চাই।’

বিজ্ঞাপন

তবে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা সংস্কারে কি করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি কি সুপারিশ আসে।’

এ সময় কোটা সংস্কার নিয়ে চলমান আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের নামে যা হচ্ছে তা কোনওভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।’

‘কেউ যদি কোটা না-ই চায়, তাহলে কোটা আমরা বন্ধ করেই দেবো। কিন্তু সহিংসতা কোনওভাবেই সহ্য করবো না,’ বলেন শেখ হাসিনা।

জাতীয় সংসদ অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও জেলা পর্যায়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন চাকরি প্রত্যাশীরা।

রোববার (৮ এপ্রিল) দুপুর ৩টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এতে শাহবাগ থেকে মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট এবং দোয়েল চত্বরে যাওয়ার রাস্তাগুলোতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে দুপুর ২ টায় ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর ব্যানারে পূর্বঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। পরে পদযাত্রা করে নীলক্ষেত ও কাঁটাবন ঘুরে শাহবাগ মোড়ে যান তারা। পরে সেখানেই অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা চারপাশের রাস্তার মোড় আটকে দেন ও রাস্তার উপরে বসে পড়েন। এ সময় কেউ কেউ রাস্তায় শুয়ে অবস্থান নেন। বিকেল থেকে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে রাতে কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে এবং ধাওয়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পর আন্দোলনকারীরা ফের সংগঠিত হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ লাঠি চার্জ করলে আন্দোলনকারীরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে।

শাহবাগ মোড় থেকে টিএসসি মোড় পর্যন্ত কয়েকটি জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এ সময় তারা পুলিশে পিকআপ ভ্যান এবং কয়েকটি প্রাইভেট কারে ভাঙচুর চালায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থান নেয়। হামলা করার সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করে। আগুন নেভাতে পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি ছোড়ে।

পরদিন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের একটি দল আলোচনায় বসে। তিনি তাদের দাবি যাচাই-বাছাই করার জন্য ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখতে বলেন। তবে আন্দোলনকারীরা সেটি উপেক্ষা করেই তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকেন।

সারাবাংলা/আইএ/টিএম/একে

আরও পড়ুন

হলে ফিরছি, তবে ছাত্রদের পাশে আছি’
এবার ছাত্রীদের ওপর চড়াও ছাত্রলীগ, ঢাবি ক্যাম্পাসে র‌্যাব
কার্জন হলেও দাঁড়াতে পারলেন না আন্দোলনকারীরা
আন্দোলন দমাতে পুলিশ-ছাত্রলীগ, ঢাবি ক্যাম্পাসে ভীতি-উত্তেজনা
পুলিশি হামলার প্রতিবাদে হল ছেড়ে রাস্তায় ঢাবি ছাত্রীরা
শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীরা ঢাবিতে, সংঘর্ষ চলছেই
কাঁদুনে গ্যাসে ছত্রভঙ্গ শাহবাগে আন্দোলনকারীরা
কোটা সংস্কার: মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা
কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন
ঢাবিতে ছাত্রী হলে মারধরের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেত্রী বহিষ্কার
হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ-খবর নিলেন ঢাবি ভিসি
বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকাল বন্ধ সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন