বিজ্ঞাপন

সমাজ-যুক্তিবিদ্যায় অর্ধেক ফেল, অর্থনীতি-ফিন্যান্সেও ‘খারাপ ফল’

February 13, 2022 | 9:26 pm

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে সমাজবিজ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যা বিষয়ে প্রায় অর্ধেক পরীক্ষার্থীই ফেল করেছে। তবে মানবিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য বিষয়গুলোতে তুলনামূলক ভালো ফল এসেছে। অর্থনীতি এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা বিষয়েও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরীক্ষার্থী ‘খারাপ ফল’ করেছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া অকৃতকার্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগের ছয় বিষয়ের মধ্যে পাঁচটিতেই পাসের হার ৮০ শতাংশের নিচে, যেখানে অন্যান্য বিষয়ে শতভাগ পাসেরও রেকর্ড আছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার নামে যেনতেনভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং ভালো শিক্ষকের অভাব বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার কারণ। বিশেষত বেসরকারি কলেজগুলোতে মানহীন শিক্ষাব্যবস্থার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বিলম্বে এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত এবারের পরীক্ষায় ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যদিও এই ফলাফল দেশের অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের চেয়ে পেছনে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা মিলিয়ে এবার পরীক্ষার্থী ছিল ৯৯ হাজার ৬২৮ জন। পাস করেছে ৮৯ হাজার ৬২ জন। ফেলের সংখ্যা ১০ হাজার ৫৬৬ জন।

বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৮৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মানবিক বিভাগে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এইচএসসির ফলপ্রকাশের পর হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস [ছবি- শ্যামল নন্দী]

বিষয়ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে কম পরীক্ষার্থী পাস করেছে সমাজবিজ্ঞান প্রথম পত্রে, ৫১ দশমিক ৯২ শতাংশ। যুক্তিবিদ্যা প্রথম পত্রে পাস করেছে ৫৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। এরপর অর্থনীতি প্রথম পত্রে ৬৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা প্রথম পত্রে ৬৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। অর্থাৎ এ দু’টি বিষয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ পরীক্ষার্থী ফেল করেছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমাজবিজ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যার মতো বিষয়ে ফেল করার কোনো কারণ নেই। এটা আমাদের মনে হয়েছে, একেবারে অবহেলাজনিত। করোনা পরিস্থিতিতে সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকায় বিষয়গুলোর ওপর শিক্ষার্থীরা একটু কম গুরুত্ব দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অর্থনীতি এবং ফিন্যান্সের কারণ ভিন্ন। দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের সংকট আছে।’

সাত বিষয়ের বিষয়ের ১৩ উত্তরপত্রে শতভাগ পরীক্ষার্থীই পাস করেছে, যার অধিকাংশই মানবিক বিভাগে অন্তর্ভুক্ত। বিষয়গুলো হচ্ছে— ইসলাম শিক্ষা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, পৌরনীতি ও সুশাসন প্রথম পর্ব, সমাজকর্ম প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, খাদ্য ও পুষ্টি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, শিশুর বিকাশ প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র এবং ইতিহাস প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, পৌরনীতি ও সুশাসন দ্বিতীয় পত্র এবং ব্যবসায়ী সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে ৯৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। ভূগোল দ্বিতীয় পত্রে ৯৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে।

ভূগোল প্রথম পত্রে ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা দ্বিতীয় পত্রে ৮৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে।

বিজ্ঞাপন

অর্থনীতি দ্বিতীয় পত্রে ৭২ দশমিক ২৩ শতাংশ, সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রে ৭০ দশমিক ১১ শতাংশ, যুক্তিবিদ্যা দ্বিতীয় পত্রে ৬৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে।

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের অন্তুর্ভুক্ত হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে ৭৫ দশমিক ৭৭ ও ৭৬ দশমিক ৫১ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে যথাক্রমে ৭৩ দশমিক ১৩ ও ৭৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী ফেল করেছে। অর্থাৎ এসব বিষয়ে মোট পরীক্ষার্থীর গড়ে প্রায় ২৫ শতাংশ ফেল করেছে।

বিজ্ঞান বিভাগের ছয়টি বিষয়ের মধ্যে কেবল পদার্থবিদ্যা দ্বিতীয় পত্রে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী পাস করেছে— ৮৫ শতাংশ। পদার্থবিদ্যা প্রথম পত্রে ৭৩ শতাংশ, রসায়ন প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে যথাক্রমে ৭২ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও ৭৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং জীববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে যথাক্রমে ৭৬ দশমিক ৩১ ও ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। উচ্চতর গণিত প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে যথাক্রমে পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৮৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী ফেল করেছে গ্রামগঞ্জের বেসরকারি কলেজগুলো থেকে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়লেই হয় না, সেগুলো দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হয়। এসব কলেজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের সংকট আছে। বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী নিচ্ছে, অথচ তাদের মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার সাপোর্ট নেই— এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার অনেক অঞ্চল দুর্গম হওয়ায় সেখানেও ভালো শিক্ষকের অভাব আছে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের শহরের বাইরে বেসরকারি কলেজগুলোতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিৎ, এমনটাই মনে করছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন