বিজ্ঞাপন

নতুন প্রজন্মকে কৃষিতে আগ্রহী করতে প্রযুক্তি কাজে লাগাতে হবে

March 16, 2022 | 1:59 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে কৃষি খাতে বাংলাদেশের অনন্য অগ্রগতি হয়েছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তবে এখনো অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। সেসব ঘাটতি দূর করতে ও তরুণ প্রজন্মকে কৃষি খাতে যুক্ত করতে প্রযুক্তি সাহায্যে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিরও আধুনিকায়ন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ইনোভিশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ মিরাকল সিজন-২’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা এসব মতামত দেন। প্রথম পর্বের থিমেটিক পার্টনার ছিল ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ এবং আলোচনার বিষয় ছিল ‘খাদ্য নিরাপত্তা থেকে ডিজিটাইজেশন: বাংলাদেশের কৃষির অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ’।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) অনলাইনে ইনোভিশন বাংলাদেশের আয়োজনে এই পর্বের স্পন্সর ছিল লাল তীর সিড লিমিটেড। আলোচক হিসেবে ছিলেন ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের সিইও ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. আরিফ হোসেন, জাতিসংঘের শিল্পায়ন বিষয়ক সংস্থা ইউনিডোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জাকি উজ জামান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম, কোওয়াটার ইন্টারন্যাশনাল-প্রোনার্স প্রজেক্টের জেন্ডার সমতা বিশেষজ্ঞ নাদিরা খানম, ভালো সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজেসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সুব্রত কুমার এবং লাল তীর সিড’র পরিচালক তাজওয়ার এম আওয়াল।

ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের সিইও মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘দেশে ৮ মিলিয়ন হেক্টর আবাদযোগ্য ভূমিতে ১৬ কোটি মানুষের খাবার উৎপাদন হচ্ছে। ১৯৭২ সাল থেকে কৃষিচাষ পদ্ধতিতে বড় ধরনের গুণগত পরিবর্তন এসেছে। এই সময়ে শস্য উৎপাদন ও বৈশ্বিক ক্ষুধা নিরাময় সূচকেও উন্নয়ন হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

কি-নোট স্পিকার হিসেবে মো. আরিফ হোসেন ৫০ বছরে বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নের একটি চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কৃষি নিজেই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ টুল (যন্ত্র), যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জলবায়ু ইত্যাদির সঙ্গে সংযুক্ত। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য এটিতে গুরুত্ব দিতেই হবে। কৃষির উন্নয়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি কোলাবোরেশনের পাশাপাশি গবেষণা নির্ভর ডেটা বের করে বিনিয়োগ করতে হবে। এসব ডেটাই পরে পলিসিগত উন্নয়নে ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি নিরাময়ে কাজে লাগবে।

ইউনিডো’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জাকি উজ-জামান বলেন, ডিজিটাইজেশনের জন্য পর্যাপ্ত ভিত্তি প্রস্তুত আছে। কিন্তু বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থার কোনো সুনির্দিষ্ট অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। বর্তমানের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জলবায়ু পরিবর্তন এসব সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত তথ্যের অপ্রতুলতা তো আছেই। বেশিরভাগ কৃষকই প্রয়োজন না জেনেই অতিরিক্ত উৎপাদন করেন। এছাড়াও অনিরাপদ খাবারও এখন একটি বড় সমস্যা। তাই সঠিক তথ্যের জোগান দেওয়া খুব জরুরি, যেন তারা মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী ফসল উৎপাদন করতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সময় অনুযায়ী খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ফসল নষ্টের হার কমানো, বিতরণব্যবস্থা ও দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য জানা যায়। এছাড়াও প্রযুক্তি সাহায্যে ফসল উৎপাদনের গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম বলেন, খাদ্য নিরাপত্তায় স্থায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য ব্যবস্থার বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। প্রয়োজন খাদ্য ব্যবস্থার বিভিন্ন মাত্রার মধ্যে সমন্বয় স্থাপন। স্ট্র্যাটেজিক ভিলেজ কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ বা অনুরূপ সংস্থা (কী সমন্বয়কারী) হল মূল সমন্বয়কারী সংস্থা যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে কার্যকর রাখতে সরবরাহ ব্যবস্থাকে সচল রাখে। স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, গবেষণা, সম্প্রসারণ এবং আর্থিক সংস্থাগুলোর উচিত এই সংস্থাগুলোকে সহায়তা করা। ফসল কাটার সময় কিংবা মহামারি চলাকালীন শ্রমিকরা অবাধে চলাচল করতে পারে না। সরকারের এদিকে সুদৃষ্টি দেওয়া দরকার। কাজ এখনই শুরু করুন, ধীরে ধীরে সংহত করুন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আবার দেখা যায় একটি উপজেলায় প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠান কৃষির সঙ্গে জড়িত। এত বড় সংখ্যক সংস্থাকে একসঙ্গে সমন্বয় করা খুবই কঠিন। সুতরাং, এতগুলো সংস্থা না রেখে ভূমি কাঠামো উন্নয়ন এবং মেয়াদ নীতি পুনর্গঠন করা যেতে পারে।

কৃষিতে জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যার কথা উল্লেখ করে প্যানেলিস্ট স্পিকার নাদিরা খানম বলেন, ৬০ শতাংশেরও বেশি নারী কৃষিতে অবৈতনিক শ্রম দেন। কৃষি খাতে নারীদের অবস্থার উন্নয়নের জন্য শুধুমাত্র একটি নীতিই যথেষ্ট আর তা হলো নারী-পুরুষের অসম অবস্থা দূর করা। এছাড়া নারীরা সমান শ্রম দিয়েও পুরুষদের সঙ্গে তাদের বিরাট মজুরি ব্যবধান রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ বা পরিষেবাগুলোতে পুরুষের সমান অ্যাক্সেস থাকতে হবে নারীদের। ডিজিটাল হাবেও নারীদের সমান সুযোগ নেই। এর অন্যতম প্রধান কারণ গ্রামীণ নারীরা স্মার্টফোন নয়, মোবাইল ফোনের মালিক। আবার প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও পুরুষকেন্দ্রিক হস্তক্ষেপ বেশি।

তিনি আরও বলেন, নারী বৈষম্য মেনে নিয়েছে। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে এটাই আইন, এটাই নীতি। কোথায় যাবে, নারী জানে না। প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা কম। কীভাবে তারা তথ্য পাবে, কোথা থেকে পাবে তাও জানে না। এর ওপর সংসার সন্তান মিলিয়ে নারীদের কাজের চাপ বেশি। আবার গ্রামীণ পর্যায়ে কোনো সহায়তার ব্যবস্থাও নেই। তাই নারীদের অগ্রগতির জন্য আলাদা কৌশল প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

লাল তীর সিড লিমিটেডের পরিচালক তাজওয়ার এম আওয়াল বলেন, বর্তমানে লাল তীর সিড নানা জাতের ফসলের ১৯০ রকমের বীজ উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ৯৫টি হাইব্রিড জাতের। খাদ্য উৎপাদনমূলক প্রতিষ্ঠানকে আরও টেকসই করতে ও আদর্শ অবস্থায় নিতে এই খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভ্যালু চেইন তৈরি করতে হবে। আগামী ২০ বছরে বেসরকারি খাতকে গবেষণা, প্রযুক্তি ও ক্যাপাসিটি তৈরিতে গুরত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কৃষক ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন দিনের কৃষিতে অবদান রাখার জন্য তৈরি করতে হবে। এ মুহূর্তে অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারে, এমন বীজ উৎপাদনে জোর দিতে হবে। সেইসঙ্গে বীজগুলো যেন লবণ ও ক্ষরা সহিষ্ণু হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে এলাকাভেদে তাজা ফসল উৎপাদনই মূল কথা।

ভালো সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠাতা সুব্রত কুমার বলেন, বর্তমানে একাধিক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান কৃষি খাতে কাজ করছে কিন্তু তারা অনেক সংখ্যক কৃষকের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। এটি খুব জরুরি। আবার এখন দেশে অনেক ছোট ছোট কৃষক আছেন, যারা সংখ্যায় অনেক কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। ফলে অ্যাগ্রো-প্রসেসিংয়ে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

সারাবাংলা/আরএফ/এএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন