বিজ্ঞাপন

ইউক্রেন যুদ্ধ: শরণার্থীদের ঘিরে সক্রিয় মানবপাচার চক্র

March 17, 2022 | 11:13 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইউক্রেন যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত নারী ও শিশুদেরকে ঘিরে মানপাচারকারী চক্রগুলো সক্রিয় রয়েছে বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে পোল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

দেশটির মানবাধিকার ন্যায়পাল মারচিন ভিয়াচেক ইউক্রেন সীমান্তে দায়িত্বরত রক্ষীদের সঙ্গে মানবপাচারের ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পুলিশ এই ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বেশ কয়েকটি ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে, যেখানে এ ধরনের পরিস্থিতির ইঙ্গিত মিলেছে।

পোল্যান্ডের পাশাপাশি জার্মানিতেও একই ধরনের শঙ্কা রয়েছে। বার্লিনের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন যে, কিছু ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের আশ্রয়ের বিনিময়ে এমন প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে যা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই, সেখানে নিরাপত্তা আরও কঠোর করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

বিজ্ঞাপন

জার্মান পুলিশও মানবপাচার চক্রের ব্যাপারে ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের সতর্ক করেছে। প্রয়োজন পুলিশ ছাড়া অন্য কারো সাহায্য না নিতে এবং সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে দ্রুত পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী শহর শেমিসেলে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকরা অভিযোগ করে বলেছেন, কেউ কেউ সেখানে শরণার্থীদেরকে বিদেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছে।

শেমিসেলে কাজ করা একটি বেসরকারি উন্নয়নসংস্থার প্রধান ইহর হরকিভ জানান, তিনি একটি ঘটনার কথা জানেন, যেখানে এক ইউক্রেনীয় নারীকে বিদেশে যাওয়ার টিকিট ধরিয়ে দেওয়ার পর পুলিশি হস্তক্ষেপ দরকার হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে শরণার্থী ঢল সামলাতে গিয়ে মানবপাচারের ব্যাপারে দিকে গুরুত্ব দিতে পারেনি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো। তবে, এখন এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মানবপাচারকারীদের খপ্পর থেকে বাঁচতে স্বেচ্ছাসেবকরা বলেছেন, কেউ সহায়তা করতে চাইলে তার সঙ্গে একটি সেলফি তুলে রাখা। যদি কেউ এভাবে সেলফি তুলতে আগ্রহী না হয় তাহলে তার সহায়তা না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, একটি অ্যাপও চালু করা হয়েছে যেখানে কোন চালকের সঙ্গে কারা কোথায় যাচ্ছেন তা নথিভুক্ত করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে শেমিসেলের মেয়র ভিটল্ট ভলচিক জানিয়েছেন, ২০ হাজারের মতো মানুষ অ্যাপটি ব্যবহার করছেন। কেউ সেখানে নিবন্ধন করলে কর্তৃপক্ষ খোঁজ রাখতে পারে। এই উদ্যোগ শরণার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে এক ধরনের স্বস্তি তৈরি করছে।

প্রসঙ্গত, মানবপাচারকারীরা অসহায়দের টার্গেট করে। গরিব মানুষ পাচার হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। যারা যুদ্ধ, সহিংসতা কিংবা অস্থির পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজেন, তারাও পাচারের ঝুঁকিতে থাকেন। আর ইউক্রেনসহ সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলো থেকে নারীদেরকে পতিতাবৃত্তিতে জড়ানোর চেষ্টা বেশ কয়েকবছর ধরেই চলছে।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসি ২০০৬ সালের এক প্রতিবেদনে জানায়, ইউক্রেন মানবপাচারকারীদের জন্য লোভনীয় দেশ। সেখান থেকে অনেক নারীকে পাচার করে পতিতাবৃত্তিতে যুক্ত করা হয়েছে। যদিও অধিকাংশ পাচারকারী পুরুষ। তবে এই কাজে নারীদেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। শরণার্থী নারীদের বিশ্বাস অর্জন করতে নারী পাচারকারীদের ব্যবহার করে কিছু চক্র।

ইউএনওডিসি জানিয়েছে, সোভিয়েত ব্লকে কাজ করা মানবপাচারকারীদের অধিকাংশই নারী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অতীতে নিজেরাই পাচার কিংবা সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

এর আগে, ফ্রান্স ২৪ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পোল্যান্ডে ৪৯ বছর বয়সী এক পুরুষকে ১৯ বছর বয়সী এক ইউক্রেনীয় শরণার্থী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক করা হয়েছে। ওই নারীকে বাসস্থানের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করেন সন্দেহভাজন। পুলিশও এই ঘটনা নিশ্চিত করেছে।

সারাবাংলা/একেএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন