বিজ্ঞাপন

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট বিষয়ে বাংলাদেশ সতর্ক: প্রধানমন্ত্রী

April 6, 2022 | 7:27 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট বিষয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত সতর্ক। বিরোধী দলীয় ‍উপনেতা (জি এম কাদের) আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শ্রীলঙ্কার বিষয়টি নিয়ে, এটি বাস্তব। তবে আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে এ পর্যন্ত উন্নয়নের ক্ষেত্রে যত ঋণ নিয়েছি তা সময়মতো পরিশোধ করছি। বাংলাদেশ একটি দেশ, যে দেশ কোনোদিন ঋণ পরিশোধে ডিফল্টার হয়নি, হবেও না। সেদিক থেকে আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক মজবুত। আমি বলে রাখতে চাই, আমরা অত্যন্ত সতর্ক।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলে অধিবেশনের কার্যক্রম।

সমাপনী অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে জি এম কাদের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতি, যানজট, প্রকল্প বাস্তবায়নের খরচ বেড়ে যাওয়া, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সংকটের প্রসঙ্গ ধরে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি শঙ্কা জানান। এসব বিষয়ের জবাব সমাপনী বক্তব্যে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সংবিধানের ৭০ ধারা নিয়ে জি এম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ আছে বলেই রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আছে। ভারসাম্য আছে। এটি হলো বাস্তবতা।’

দ্রব্যমূল্যসহ জাতীয় জীবনের নানা সমস্যা নিয়ে বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদেরের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা যে সব কথা বলেছেন, আমাদের সংবিধান পাঠদান করিয়েছেন। তার প্রতিটির উত্তরই আছে। তার সবগুলোর জবাব দেব।’

বিজ্ঞাপন

জি এম কাদেরের সংবিধান নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য হলো এমন একটি দলের থেকে সংবিধানের বিষয় শুনতে হচ্ছে, যে দলটি ক্ষমতায় এসেছিল সংবিধান লঙ্ঘন করে, ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে মার্শাল ল জারি করে। মার্শাল ল-এর মাধ্যমে যাদের জন্ম, যার নেতা ক্ষমতাই দখল করেছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে বিদায় দিয়ে। সেই সময়ের সেনাপ্রধান হয়ে গেলেন রাষ্ট্রপ্রধান। সংবিধান স্থগিত করে ক্ষমতায় এসেছিল তার দল। তাদের কাছ থেকে  আজকে আমাদের সংবিধান শিখতে হচ্ছে। সংবিধানের ব্যাখ্যা শুনতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘একে তো করোনা, তারপর ইউক্রেনে যুদ্ধ। সমস্ত ইউরোপে সাড়ে সাতভাগের ওপরে মূল্যস্ফীতি। কোনো কোনো দেশে ৮০ ভাগ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি হয়ে গেছে। একদিকে করোনার ধাক্কা, অন্যদিকে যুদ্ধের ধাক্কা।  তবুও বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৬-এর ঘরে আছে।’

তিনি বলেন, ‘করোনার ধাক্কার মধ্যেও আমরা প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৫১১ মার্কিন ডলার হয়েছে। জিনিসের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বেড়েছে। দারিদ্র্যসীমাও হ্রাস পেয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকতে বিদেশ থেকে কোনো জিনিস কেনার সময় ১০ টাকার জিনিস ২০ টাকায় কিনে বাকি ১০ টাকা পকেটে ঢুকাত। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে সেটি হয় না। আমরা বরং দাম কমিয়ে আনি।’

সময়মতো প্রকল্প শেষ না হওয়া বিষয়ে জি এম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্ট আট মাস আগে উদ্বোধন করেছি। এতে প্রায় ৮০ কোটি টাকা বেঁচে গেছে। আমরা প্রত্যেকটি কাজ আগে করি কিছু টাকা বাঁচাই। কিছু কিছু জায়গায় কাজ হয়।’

উন্নয়নে জন-ভোগান্তির অভিযোগের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, ‘উন্নয়ন কাজ কাদের জন্য? উন্নয়ন তো এ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য। মানুষ যেন চলাচল করতে পারে, তার জন্য। এখন হয়তো আপাতত কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এটি (মেট্রোরেল) সম্পন্ন হওয়ার পর উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে ৬০ হাজার লোক যাতায়াত করতে পারবে। আজকে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি।’

প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে জিনিসের দাম বেড়েছে। রড সিমেন্ট-প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এটি কেবল আমাদের দেশে নয়, সব দেশে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার জন্য আমেরিকার অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এক ডলারের তেল চার ডলার হয়ে গেছে। কোনো কিছুর দাম বাড়লে তার সঙ্গে অ্যাডজাস্টমেন্ট করে নিতে হয়। না হলে আমাদের কাজ সম্পন্ন হবে না।’

বিজ্ঞাপন

নিত্যপণ্যের মূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মোটা চালের দাম এখন ৪৬ টাকার মতো আছে। সেটি খুব বেশি বাড়েনি। চিকন ‍ও মাঝারি চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। আলু পাইকারি বাজারে ২০ টাকা খুচরা বাজারে ২৫ টাকা। পেঁয়াজের দামের জন্য এখন কৃষক হাহাকার করছে। বেগুনের দাম ১১০ টাকার ওপরে চলে গেল। সেটা এখন কমে ৮০ টাকায় এসেছে। তা বেগুন দিয়ে বেগুনি না খেয়ে আরও যেসব সবজি সহজলভ্য আছে সেগুলো দিয়ে খেলেই হয়। আমরা তো তাই খাই। বেগুনি না বানিয়ে মিষ্টিকুমড়া দিয়ে খুব ভালো বেগুনি বানানো যায়। আমরা এভাবে করি।’

জিনিসপত্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ যেন বেশি কষ্ট না পায়, সেই পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।’

যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত গাড়ি এখন রাস্তায় চলে। সবাই ট্রাফিক রুল মেনে চললে আর গাড়ি কম বের করলে যানজট তো থাকে না। গাড়িতেও চড়বেন; একেকটি পরিবার দুই-তিনটি গাড়ি বের করবেন আবার ট্রাফিক জ্যাম হলে গালি দেবেন— এটা তো চলবে না।’

নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয় সেই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন