বিজ্ঞাপন

আগের ভিসির ‘সীমাহীন’ ব্যয়ে বিপাকে বর্তমান উপাচার্য

May 29, 2022 | 8:20 am

সাজ্জাদ বাসার, কুবি করেসপন্ডেন্ট

কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে অত্যধিক ব্যয়ের কারণে বিভিন্ন দিবস ও কর্মসূচি কেন্দ্রিক বরাদ্দ করা বাজেটে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে আগামী ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের আয়োজনেও কাঁটছাট করতে হয়েছে কর্মসূচি।

বিজ্ঞাপন

তবে কর্মসূচি কমানোর ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করতেই হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, আর্থিক ঘাটতির কারণে কর্মসূচি বাড়ানো যাচ্ছে না।

অর্থ দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের জুলাই মাসে শুরু হওয়া চলতি অর্থ বছরে (২০২১-২২) দিবস উদযাপন সংক্রান্ত খাতে বরাদ্দ ছিলো ৮ লাখ টাকা। অর্থ বছরের প্রথম ৭ মাসে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী দায়িত্বে থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাদ্দকৃত অর্থের ৭ লাখ ২১ হাজার ৭৫২ টাকা নানা অনুষ্ঠানে খরচ করে ফেলে। ফলে বছরের বাকি ৫ মাসের জন্য অবশিষ্ট থাকে মাত্র ৭৮ হাজার ২৪৮ টাকা।

এর মধ্যে গত বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ২১ হাজার ৮৬৮ টাকা, শেখ রাসেল দিবসে ১৩, ৯৫২ টাকা, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে ৪ হাজার ৯১৩ টাকা, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০৯ টাকা, শপথ অনুষ্ঠান প্রচারে ৭ হাজার ২১৭ টাকা, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ৮ হাজার ২৯৩ টাকা, একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ৫ হাজার টাকা, বিভিন্ন সমিতির আনন্দভ্রমণে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে এ বছরের জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখ বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন দায়িত্ব নেন। কিন্তু সাবেক উপাচার্যের আমলের অত্যধিক ব্যয়ের কারণে পরবর্তী ৫ মাসের ব্যয় নির্বাহে অর্থের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আরও ৪ লাখ টাকা বর্ধিত বাজেট বরাদ্দের অনুমোদন দেয়।

যার মধ্যে ২৬ মে’র পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন দিবস ও খাতে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৬৩২ টাকা খরচ করার পর অবশিষ্ট থাকে ৫ হাজার ৬১৬ টাকা।

এর মধ্যে স্বরস্বতী পূজা উদযাপনে ২৫ হাজার টাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসে ২৯ হাজার ২৮১ টাকা, ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানে ৯৫ হাজার ৯১০ টাকা, ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে ১ লাখ ৮১ হাজার ৬৩১ টাকা, নবীন বরণে ১ লাখ টাকা, পহেলা বৈশাখে ৩২ হাজার ৮১০ টাকা, নাট্য কর্মশালায় ৮ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়।

বিজ্ঞাপন

অর্থ সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ হিসাব দফতরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বরে (আগের ভিসির সময়) খরচ বেশি হয়েছে। এছাড়া শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতিকে এই খাত থেকে এবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, না হয় অর্থ সংকট হয়তো হতো না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে দূরদর্শিতার অভাবে অপরিকল্পিত ব্যয় হওয়ায় বছরের শেষে এসে অর্থ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বছরের শুরুতেই যদি গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলো বিবেচনায় এনে গুছিয়ে পরিকল্পনা করা হতো তাহলে আরও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানগুলো করা যেত, এই অর্থ সংকটও হতো না। তবে আমার জানামতে, সাবেক উপাচার্য স‍্যার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত পরিসরে সুন্দর ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের জন্য একটি কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছিলেন।’

এ বিষয়ে জানতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। জানা যায়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন থেকেই সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতেন ও বিভিন্ন সাংবাদিকের ফোন নাম্বার ব্লক করে রেখেছেন।

বিজ্ঞাপন

টাকার ঘাটতির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন বলেন, ‘একাউন্টস থেকে জানলাম টাকা ছিল মাত্র ৪ হাজার। কিন্তু এটা দিয়ে কিছুই হবেনা। যেহেতু টাকা নাই সেহেতু অতিরিক্ত অনুষ্ঠান স্পন্সর নিয়ে করবো। আর যদি স্পন্সর না পাওয়া যায় তবে এবারের মতো বাদ রাখবো। তবুও কমিটিকে আমি বলেছিলাম আমাদের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মিলে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারে। কিন্তু কমিটি বললো বাইরে থেকে শিল্পী এনে কনসার্ট করবে। কিন্তু এটার তো টাকাই নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে সামনে আমরা আগে থেকেই প্ল্যান রেখে করবো। সবার এটা বুঝতে হবে সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে আসলে কখনো কিছু করা যায় না। আমারও ইচ্ছা হয় সর্বোচ্চ সুন্দর আয়োজন হোক। কিন্তু সীমাবদ্ধতার কথাও একটু বিবেচনা করতে হবে।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন