বিজ্ঞাপন

সাক্কুর অভিযোগে যা বললেন রিটার্নিং কর্মকর্তা

June 16, 2022 | 8:55 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

কুমিল্লা থেকে: কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করেছেন সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। ভোট পুনরায় গণনার জন্য তিনি আদালতে রিট করে আইনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, প্রিসাইডিং অফিসাররা যে ফলাফল দিয়েছেন, তা সমন্বয় করে এই ফলাফল পেয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্র থেকে গতকাল বুধবার (১৫ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এই ফল ঘোষণা করেন কুসিক নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলে জানানো হয়েছে, ১০৫টি কেন্দ্রে রিফাত নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। আর তৃতীয় স্থানে থাকা নিজাম উদ্দিন কায়সার পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।

নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘গুটিকয়েক কেন্দ্রের ফল আটকে রাখা হয় পরিকল্পিতভাবে। আমি হারিনি। কিন্তু আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

শেষ মুহূর্তে যখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক (রিফাত) ও মনিরুল হকের ভোট প্রায় সমান সমান ছিল, তখন ফল প্রকাশে বিলম্ব হয়। এ বিষয়টি প্রশ্ন তৈরি করে কি না- জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘তিন থেকে চারজন প্রিসাইডিং অফিসার ফলাফল পাঠাতে দেরি করেছেন। সে কারণে ফল প্রকাশে দেরি হয়েছে।’

এদিন ফল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মনিরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তার প্রথম পরীক্ষায় বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলাফল ঘোষণা দেরি করে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে পরিকল্পিতভাবে আমাকে হারানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার হিসাবে ৯৮০ ভোটে এগিয়ে ছিলাম। শেষ মুহূর্তে ফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্র করে আমাকে হারানো হয়েছে। ভোট পুনরায় গণনার জন্য আমি আদালতে রিট করব, আইনি ব্যবস্থা নেব।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘ইভিএমে ভোটগ্রহণ হলো। কিন্তু ফল ঘোষণা করতে এত দেরি হলো কেন? ১০১ কেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর বিশৃঙ্খলা ও হট্টগোল তৈরি করা হলো কেন? তখন পর্যন্ত আমি ভোটে এগিয়ে ছিলাম। পরে চার কেন্দ্রের ভোট নিয়ে ষড়যন্ত্র করে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।’

সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তার প্রথম পরীক্ষায় বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলাফল ঘোষণা দেরি করে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে পরিকল্পিতভাবে আমাকে হারানো হয়েছে। আমি এই ফলাফলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেব।’

এদিন ফলাফল ঘোষণার এক পর্যায়ে রাত ৮টার দিকে মনিরুল হক সাক্কুর সমর্থকরা শিল্পকলা একাডেমির দিকে আসতে থাকে। এ সময় মনিরুল হক সাক্কুর নামে তারা বিভিন্ন রকমের স্লোগান দেন।

এ সময় কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, এখনো কিছু কেন্দ্রের ফলাফল বাকি আছে। কেন্দ্র থেকে ফলাফল আসতে দেরি হওয়ায় চূড়ান্ত ফলাফল জানানো সম্ভব হচ্ছ না। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফলাফল জানানো হবে।

বিজ্ঞাপন

এ সময় ক্ষোভে ফেটে পড়েন মনিরুল হকের সমর্থকেরা। তারা দ্রুত ফলাফল ঘোষণার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের কিছুটা বাক্য বিনিময় হয়। এরপরেই শিল্পকলা একাডেমিতে এসে উপস্থিত হন মনিরুল হক সাক্কু। রাত ৮টা ৩০ মিনিটের দিকে মনিরুল হক সাক্কু তার নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করার সামনে বসে পড়ে।

পরে রাত ৯টার দিকে শিল্পকলা একাডেমির দিকে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের সমর্থকরা। এ সময় তারা ফলাফল ঘোষণা করার স্থানে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে বেশিক্ষণ সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বেসরকারিভাবে আরফানুল হক রিফাতের বিজয়ী হওয়ার ঘোষণা দেন।

এর আগে, গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট হয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে। ১০৫টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দিয়ে ভোট নেওয়া হয়েছে। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিক থেকে ফলঘোষণা শুরু হয়।

ফল ঘোষণার শুরু থেকেই মনিরুল হক সাক্কু ও আরফানুল হক রিফাতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। নতুন নতুন কেন্দ্রের ফল যোগ হতেই কখনো এগিয়ে যাচ্ছিলেন রিফাত, কখনো এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাক্কু। সবশেষ ১০১ কেন্দ্রের ফলে সাক্কুই এগিয়ে ছিলেন ৬২৯ ভোটে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সবশেষ ঘোষিত ফল বলছে, শেষ চারটি কেন্দ্রে সাক্কুর তুলনায় ৯৭২ ভোট বেশি পেয়েছেন রিফাত।

এদিন ভোটগ্রহণ শেষে কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানিয়েছিলেন, নির্বাচনে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। পরে সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালও একই তথ্য জানান সাংবাদিকদের।

কুমিল্লা সিটির এবারের নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ের পরিকল্পনায় প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। এই সিটির আগের দুই নির্বাচনেই তিনি মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছিলেন— একবার স্বতন্ত্র এবং একবার বিএনপি প্রার্থী হিসেবে। এবারে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিলেও সাক্কু প্রার্থিতা বহাল রেখেছিলেন। সে কারণে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি নিজে অবশ্য দাবি করেন, দল থেকে বহিষ্কারের আগেই তিনি পদত্যাগ করেছিলেন।

সাক্কু বারবারই বলে আসছেন, সিটি করপোরেশন হওয়ার আগেও কুমিল্লা পৌরসভায় তিনি মেয়র ছিলেন। এরপর টানা দুই মেয়াদে কুমিল্লা সিটির মেয়র হয়েছেন তিনি। তাকেই ফের কুমিল্লাবাসী মেয়র হিসেবে বেছে নেবেন বলে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি।

এদিকে, আরফানুল হক রিফাতের এটিই প্রথম কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলের আরও ১৩ জন আগ্রহী মনোনয়প্রার্থীর সঙ্গে তিনিও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। দল থেকে শেষ পর্যন্ত তাকেই কুমিল্লায় নৌকা প্রতীকের টিকিট দেওয়া হয়। সে হিসাবে প্রথম নির্বাচনেই বাজিমাত করলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের এই নেতা।

সারাবাংলা/এসবি/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন