বিজ্ঞাপন

আদালত অবমাননা: কুষ্টিয়ার ডিসি-এসপির বিষয়ে আদেশ সোমবার

August 21, 2022 | 9:44 pm

স্টাফ করেসপনডেন্ট

ঢাকা: আদালত অবমাননার অভিযোগে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও ব্যবসায়ী আবদুর রশিদের বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার (২২ আগস্ট) দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের তলবে রোববার (২১ আগস্ট) আদালতে হাজির হয়েছিলেন তারা। তবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় কুষ্টিয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আদালতে হাজির হননি। এদিন বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের তারিখ ধার্য করেন।

বিজ্ঞাপন

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ারেস আল হারুনী, ডিসি ও এসপির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান। ব্র্যাক ব্যাংকের এমডির পক্ষে সৈয়দ মিনহাজুল হক এবং রিটকারী ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী।

আদালতে হাজির হন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খাইরুল আলম, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসাইন ও নিলামকৃত সম্পত্তি গ্রহণকারী ব্যবসায়ী রশিদ অ্যগ্রো ফুড লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী মো. আবদুর রশিদ। তাদের সোমবারও আদালতে হাজির থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট।

এদিন শুনানিতে কুষ্টিয়ার ডিসি ও এসপিকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহিত দিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আবেদন জানালে তা না মঞ্জুর করে সোমবার আদেশের সময় উপস্থিত থাকতে হবে উল্লেখ করে আদালত বলেন, ‘এটা আদালত অবমাননার মামলা। আদেশের সময় তাদের আদালতে হাজির থাকতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

আদালত অবমাননার মামলায় কুষ্টিয়ার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় আদালতে হাজির হননি। তার আইনজীবী কোভিড সংক্রান্ত রিপোর্ট ও চিকিৎসকের সনদ আদালতে দাখিল করেন।

মামলার শুনানিতে আদালত জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এই সম্পত্তি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নাই। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’ পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খায়রুল আলম বলেন, ‘আদালতের আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার ওসি আমাকে অবহিত করেননি। যার কারণে বিষয়টি আমার জানা নাই।’

তখন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খাইরুল আলমের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনি জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে একজন ক্ষমতাবান কর্মকর্তা। এই ক্ষমতা আপনার দু’ভাবে ভোগ করার সুযোগ রয়েছে। এক. জনগণের সেবা করে। দুই. স্বেচ্ছাচারীভাবে। এখন বলুন, আপনি এই ক্ষমতা কীভাবে ভোগ করেন?’ জবাবে এসপি বলেন, ‘জনগণের সেবার মাধ্যমে এই ক্ষমতা ভোগ করে থাকি।’

বিজ্ঞাপন

এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসাইনকে হাইকোর্ট বলেন, ‘ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামকে আপনারা একটি চিঠি দিলেন। সেখানে নিলাম হওয়া হওয়া সম্পত্তি সাতদিনের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে বললেন। যদি সম্পত্তি বুঝিয়ে না দেয় তাহলে প্রশাসনের সাহায্য নেওয়ার কথা বলেছেন। যদি ওই সময়ের মধ্যে বুঝিয়ে না দেয় তাহলে আইনানুযায়ী প্রশাসনের সাহায্য নিতে আপনি কি কোনো চিঠি দিয়েছিলেন?’

তখন এমডি বলেন, ‘আমি কোনো চিঠি দিইনি।’ এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘নিলাম কার্যক্রমের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। সেটা জানার পর কি নিলাম ক্রয়কারী ব্যক্তিকে অবহিত করেছিলেন?’ এমডি বলেন, ‘জানা নাই।’

এরপর ডাকা হয় নিলামকৃত সম্পত্তি ক্রয়কারী ব্যক্তি রশিদ অ্যগ্রো ফুড লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী ব্যবসায়ী আবদুর রশিদকে। আদালত তার কাছে জানতে চান, ‘নিলাম সম্পত্তি কেনার পর ব্র্যাক ব্যাংক কি আপনাকে তার দখল বুঝিয়ে দিয়েছে?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘জ্বি, ব্যাংক বুঝিয়ে দিয়েছে।’ আদালত বলেন, ‘সেটা কীভাবে? দখল বুঝিয়ে দেওয়ার কোনো কাগজ কি আপনার কাছে আছে?’ তখন ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কোনো কাগজ আমার কাছে নাই।’

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘তাহলে কীভাবে আপনি ওই সম্পত্তির দখল নিলেন? নিজেই কি ওই সম্পত্তির দখল নিয়েছেন? ব্যবসায়ী বলেন, ব্যাংক আমাকে নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু দখল বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো কাগজ দেয়নি।’ পরে আদালত অবমাননার বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করে দেন।

বিজ্ঞাপন

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালে কুষ্টিয়ার পোড়াদহের আইলচারা বাজারে অবস্থিত মো. শফিকুল ইসলামের ধান, চাল, আটা ও ভুষি উৎপাদনের তিনটি প্রতিষ্ঠান বন্ধক (মরগেজ) রেখে ব্র্যাংক থেকে ৩৬ কোটি টাকা পরের বছর তা বাড়িয়ে ৪২ কোটি ঋণ নেন। তারপর থেকে তিনি নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে আসছিলেন। তবে করোনা মহামারির কারণে প্রতিষ্ঠান তিনটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় একটা সময় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় শফিকুল ইসলাম। এ কারণে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শফিকুল ইসলামকে খেলাপি দেখিয়ে তার বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তুলতে গত ২৪ মার্চ দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়। এবং ১৮ এপ্রিল নিলাম আয়োজন করে ১৩৩ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি মাত্র ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। পরবর্তীতে গত ২৮ জুলাই নিলামকারী মো. আবদুর রশিদকে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির হস্তান্তর প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসনের কাছে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি চিঠি দেয়।

এরপর, গত ৩১ জুলাই নিলামের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন শফিকুল ইসলাম। ২ আগস্ট ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত নিলাম সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। সেইসঙ্গে শফিকুল ইসলামকে এক মাসের মধ্যে ২০ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আগামী এক বছরের মধ্যে ছয় কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলেন আদালত। ওই টাকা পরিশোধ না করতে পারলে রিটকারীকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে বলে আদেশে বলা হয়।

হাইকোর্টের লিখিত আদেশ বিবাদীদের কাছে পৌঁছাতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। এ কারণে গত ৩ আগস্ট হাইকোর্টের আদেশ আইনজীবীর মাধ্যমে দ্রুত সময়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে গত ৫ আগস্ট ভোররাতে ওই সম্পত্তি নিলামকারীকে প্রশাসনের সহায়তায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর গত ৭ আগস্ট আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে আবেদন করেন শফিকুল ইসলাম। আদালত অবমাননার শুনানি নিয়ে গত ১১ আগস্ট কুষ্টিয়ার ডিসি-এসপিসহ পাঁচজনকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে প্রতিষ্ঠান তিনটি নিলাম পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন