বিজ্ঞাপন

নির্বাচনি রোডম্যাপে ইভিএমে‘র পক্ষে জোরালো অবস্থান ইসির

September 14, 2022 | 9:38 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারপরেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগেই জানিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করবে। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ইসির ঘোষিত নির্বাচনি রোডম্যাপেও এ বিষয়টির পুনরুল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইসির রোডম্যাপে ইভিএম ব্যবহারের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়েছে, আগামীতে সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরের আসনগুলোতে এ ইলেকট্রনিক ভোটিং যন্ত্র ব্যবহারে প্রাধান্য দেওয়া হবে। ইভিএমে কোনোপ্রকার জাল জালিয়াতির সুযোগ নেই দাবি করে রোডম্যাপে ইসি বলেছে, শুধু মনস্তাত্বিক ধারণা থেকে কারচুপির অভিযোগ করা হয়।

আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে রোডম্যাপে বলা হয়েছে, ইভিএমে বায়োমেট্রিক যাচাই করে ভোট দেওয়ার সিস্টেম থাকায় জাল ভোট অর্থাৎ একজনের ভোট অন্যজনের দেওয়ার সুযোগ নেই। ওয়ান টাইম চিপস ব্যবহার ও এমবেডেড পার্টস থাকায় একইসঙ্গে একজন ভোটার একাধিক ভোট দিতে পারে না। একই ইভিএম বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়, বিধায় প্রোগ্রামের জালিয়াতি করা সম্ভব নয়, বিল্টইন ঘড়ি থাকায় নির্বাচনের সময় আরম্ভ হওয়ার আগে ভোট দেওয়া যায় না। একইভাবে ভোটগ্রহণের সময় শেষ হলে প্রিজাইডিং অফিসার বন্ধ বাটনে চাপ দিলে এর পরে ভোট দেওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকে না; ভোট গণনা করতে হয় না, বাটনে চাপ দিলেই ফলাফল পাওয়া যায়। এগুলো প্রমাণিত হয়েছে।

অন্যদিকে নির্বাচনে ব্যালটের পরিবর্তে ইভিএমের বিষয়ে যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়, ব্যালটে ভোট হলে কেন্দ্র দখল করে ভোটের আগে পরে ইচ্ছামতো বাক্সে ব্যালট ভর্তি করা সম্ভব। কিন্তু ইভিএমে এ ধরনের অন্যায় করার কোনো সুযোগ নেই; ইভিএম-এ ভোট ম্যানিপুলেশনের বিষয়ে বা কারচুপি করা সম্ভব এমন প্রমাণ কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

এতে আরও বলা হয়, ইভিএম-এ ভোট ম্যানুপুলেশনের বিষয়ে কেউ এ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেনি। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইভিএম-এ কারচুপি করা সম্ভব এমন প্রমাণ করার জন্য বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ এ অভিযোগটি প্রমাণ করতে পারেনি। তাই দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র মনস্তাত্ত্বিক ধারণা থেকে এ অভিযোগটি করা হয়।

রোডম্যাপে বলা হয়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ৪৪ থেকে ৬২ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে; জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে ১২টি আসনে ২৭ দশমিক ০৫ শতাংশ ৬ টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ১৯টি উপজেলায় ২৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ১৭১টি পৌরসভায় ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ৫১৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় দেশে করোনার প্রবল সংক্রমণ ছিল। ভোটাররা সফলভাবেই ইভিএম-এ ভোট দিতে সক্ষম হচ্ছে। আঙুলের ছাপ নিয়ে ভোটারদের সমস্যা হলেও ভোট দিতে তাদের কোনও সমস্যা হয় না। তবে এই অনুমতি মোট ১ শতাংশের বেশি দিতে পারেন না। ইভিএম ভোট যেমন সুষ্ঠু ও সঠিক হয় তেমনি কোনো প্রকার জালজালিয়াতির সুযোগ থাকে না।

ইসি রোডম্যাপে উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সংলাপে অংশগ্রহণকারী ২৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইভিএম-এর পক্ষে মত দিয়েছেন ১৭টি রাজনৈতিক দল। বিপক্ষে মত দিয়েছেন ১২টি দল। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের মত ইভিএম এর পক্ষে থাকায় ইভিএম ব্যবহার না করা যুক্তি সঙ্গত হবে না বলেও কমিশন মনে করে। উভয় পক্ষের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তাই কমিশন অনুর্ধ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যুক্তিসঙ্গত মনে করছে। ইভিএমগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরের আসনগুলোতে অগ্রাধিকারে ব্যবহার করা হবে। অবশিষ্ট ১৫০ আসনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ইসির রোডম্যাপের প্রকাশিত তথ্য নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। রোডম্যাপে বলা হয়েছে, ইসির সংলাপে অংশ নেওয়া ১৭টি দল ইভিএমে‘র পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ১২টি দল। অথচ গত ৩১ জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপে শেষ দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, ইসির সংলাপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা তা নিয়ে আমরা এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।

উল্লেখ্য ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইসির সংলাপে অংশ নেয় ২৯টি। এর মধ্যে ১৯টিই নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এদের কেউ কেউ ইভিএম বিপক্ষে, কেউ কেউ আবার আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যবহার, কেউবা আবার শুধুমাত্র স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। সরাসরি ইভিএমে পক্ষে অবস্থান নেয়, আওয়ামীগসহ কয়েকটি শরিক দল।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন