বিজ্ঞাপন

গুডস হিল ‘রাজাকার হিল’, সাকার বাড়ি ‘রাজাকারের বাড়ি’

October 29, 2022 | 3:57 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তার সন্তান সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের বাড়ির দেয়ালে ‘রাজাকারের বাড়ি’ লিখে দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। সেই বাড়িটি যে পাহাড়ে, সেই গুডস হিলকে ‘রাজাকার হিল’ লিখে টানিয়ে দেয়া হয়েছে ব্যানার। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিকামী নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে নিয়ে হত্যা-নির্যাতনের জন্য গড়ে তোলা সেই ‘টর্চার ক্যাম্প’ গুডস হিলকে বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া সাকা চৌধুরীকে ‘শহিদ’ উল্লেখ করে তার ছেলে বিএনপি নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদে শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকাল থেকে নগরীর জামালখানে ‘গুডস হিলের’ মূল প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে সমাবেশ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।

হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে প্রায় চারঘণ্টা ধরে চলা সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীর সন্তান হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া সমাবেশের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি সরওয়ার আলম চৌধুরী মণি। এসব দাবির মধ্যে আছে- হুম্মামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের ও গ্রেফতার, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের রাজনীতি ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সকল সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা, জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সকল যুদ্ধাপরাধীর তালিকা করে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং মুক্তিযুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্যাতনের জন্য রাজাকার-আলবদর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গড়ে তোলা সকল ‘টর্চার ক্যাম্পকে’ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা।

এসব দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের সন্তানদের রাজনীতিতে দেখতে চাই না, রাজাকারের সন্তানদের নির্বাচনে দেখতে চাই না। রাজাকারের বাড়িঘর, সম্পত্তি অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত করা হোক। এজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে আমরা সরকারকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। আগেভাগে বলে দিচ্ছি, সরকার যদি আমাদের দাবি প্রতি কর্ণপাত না করে তাহলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব। আবার বলছি, সময় ডিসেম্বর পর্যন্ত, এরপর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাব।’

সমাবেশে সাকা চৌধুরীর মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলার অন্যতম সাক্ষী গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার বলেন, ‘একাত্তর সালে কুখ্যাত রাজাকার ফজলুল কাদের চৌধুরী আর তার কুলাঙ্গার ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়িতে যখন তাণ্ডব চালাচ্ছিল, সেখানকার মানুষ যখন অকথ্য নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল, তখন আমি এই শহরে চন্দনপুরায় গলির মুখে সালাহউদ্দিনের গাড়িতে আক্রমণ করেছিলাম। আমাদের কাছে খবর ছিল, সালাহউদ্দিন কাদের ড্রাইভিং সীটে থাকবেন। সেজন্য ড্রাইভিং সীট লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছিলাম। কিন্তু সে ওই সীটে ছিল না, তবে আহত হয়েছিল। গাড়িচালক মারা গিয়েছিল।’

বিজ্ঞাপন

‘আমি এখানে কোনো দলের নেতা হিসেবে বক্তব্য দিতে আসিনি, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এসেছি। সেদিন যেমন সালাহউদ্দিন কাদেরকে কেউ প্রতিরোধ করতে পারছিল না, আমিসহ কয়েকজন এই শহরে আক্রমণ করেছিলাম, তেমনিভাবে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর কেউ সাক্ষ্য দিচ্ছিল না, আমি গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। নিজের জীবনের নিরাপত্তা, পরিবারের নিরাপত্তা তুচ্ছ করে আমি সাক্ষ্য দিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সেদিন সাক্ষ্য দেননি।’

 

বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালন করছে অভিযোগ করে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘কুলাঙ্গার সালাহউদ্দিন কাদেরের কুলাঙ্গার সন্তান বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য রেখেছে। বিএনপি যুদ্ধাপরাধী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজনীতি করছে। এই বিএনপিকে অবিলম্বে বিলুপ্ত করুন। আর যদি মনে করেন, আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সেই দেশের সমর্থন ও দোয়া চেয়ে বিএনপিকে রাজনীতি করার সুযোগ দেবেন, তাহলে আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই সরকারের বিরুদ্ধে নামব।’

‘মাঝে মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেসব কথা বলেন, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথার প্রতিধ্বনি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, আন্তর্জাতিক চাপ, দেশীয় লুটেরাদের চাপে যদি সরকার বিএনপিকে মাঠে নামার সুযোগ দেয়, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সেটা মেনে নেব না। আমরা বিএনপিকে রাজাকার-আলবদর ও তাদের সন্তানদের নিয়ে মাঠে নামতে দেব না।’- বলেন কাজী নুরুল আবসার

বিজ্ঞাপন

নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রাজাকারের ছেলে হুম্মাম কাদের যে বক্তব্য দিয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের শহিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, এটা ধৃষ্টতাপূর্ণ রাষ্ট্রদ্রোহমূলক বক্তব্য বলে আমি মনে করি। তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা আছি, আমাদের বয়স হয়ে গেছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আমাদের সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে।’

উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমরা গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করে সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আদায় করেছি। সেই যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান-দোসররা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতাকে ধূলিস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের প্রতিরোধ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার গণজাগরণ মঞ্চের মতো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

১৪ দলের শরীক জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যরা বহাল তবিয়তে এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ব্যবসার টাকা খরচ করছে। আজ যদি দেশে যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত, তাদের পরিবারের সদস্যদের রাজনীতি ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার আইন থাকত, তাহলে হুম্মাম কাদেরের মতো কুলাঙ্গার আস্ফালনের সুযোগ পেত না। এই সরকার ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে, তারা এই আইন কেন করেনি, এটা দুঃখজনক। যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের সামাজিক মর্যাদা হরণ করতে হবে, তাদের সকল ধরনের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিতে হবে, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এজন্য পার্লামেন্টে আইন প্রণয়নের দাবি জানাই।’

রাউজান উপজেলা চেয়ার‌ম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘কীসের গুডস হিল, আজ থেকে এটা রাজাকার হিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা এটাকে রাজাকার বাড়ি লিখে দিয়েছে। হুম্মাম কাদের, কুলাঙ্গারের ঘরে কুলাঙ্গার জন্ম নিয়েছে।’

সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নগর শাখার আহবায়ক শাহেদ মুরাদ সাকু বলেন, ‘হুম্মাম কাদের যুদ্ধাপরাধীর সন্তান। চট্টগ্রামের মাটি সূর্যসেন, প্রীতিলতা, এম এ আজিজ, জহুর আহমেদ চৌধুরী, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মাটি। চট্টগ্রামের মাটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাটি। রাজাকারের ছেলে হুম্মাম যুদ্ধাপরাধীদের শহিদ বলার, জামাতের স্লোগান দেয়ার ধৃষ্ঠতা কোথায় পেয়েছে ? আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা তাকে এই চট্টলার মাটিতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করছি। তাকে চট্টগ্রামের যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানে প্রতিহত করা হবে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.ওমর ফারুক রাসেল এবং সংগঠনের জেলা সদস্য সচিব কামরুল হুদা পাবেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার সৈয়দুল হক সৈয়দ, আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, মশিউর রহমান চৌধুরী, নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মাহবুবুল হক সুমন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম আর আজিম, হাবিবুর রহমান তারেক, ইয়াছিন আরাফাত ও নুরুল আজিম রনি, নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, চসিক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব ও নুর মোস্তফা টিনু, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম।

নগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে ‘গুডস হিল ঘেরাও’ কর্মসূচিতে আসেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমাবেশ চলাকালেই একদল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান গুডস হিলের প্রবেশপথের দেয়ালে লিখে দেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতন কেন্দ্র, রাজাকারের বাড়ি’। একইসঙ্গে গাছে টানিয়ে দেয়া হয়, ‘রাজাকার হিল’ লেখা ব্যানার। সমাবেশ মঞ্চের একপাশে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর প্রতিকৃতি রেখে সেখানে ধিক্কার জানিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য লেখা হয়।

‘হ-তে হুম্মাম, তুই রাজাকার তুই রাজাকার’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’ ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, পাকিস্তানে ফেরত যা’- এ ধরনের নানা স্লোগানে স্লোগানে মুখর ছিল সমাবেশস্থল। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর গুডস হিলের গেইটে প্রতীকী তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

১৯৭১ সালে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর নির্দেশে তার বাড়ি ‘গুডস হিলকে’ টর্চার ক্যাম্প বানিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা, যাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ফকাপুত্র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ রাজাকার-আলবদররা। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে ওই টর্চার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো বলে সাকা চৌধুরীর মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্যে উঠে এসেছে।

গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী। বক্তব্যে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘ক্ষমতা ছাড়ার পর একা বাড়ি ফিরতে পারবেন না। সকল শহিদদের কবরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে।’ তিনি ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন, যে স্লোগান বিএনপি দলীয়ভাবে ব্যবহার করে না।

এর প্রতিবাদে গত ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশ করে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাতদিনের সময় বেঁধে দেয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। অন্যথায় গুডস হিল ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন