বিজ্ঞাপন

সাজেদা চৌধুরীর অবদান ভোলার নয়, শোকপ্রস্তাব আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

October 30, 2022 | 9:05 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের যে অবদান রেখে গেছেন তা ভোলার নয়। চরম দুর্দিনে আওয়ামী লীগের হাল ধরা এবং এগিয়ে নিয়ে যেতে তারা কাজ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে সংসদে আনা শোকপ্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ সাজেদা চৌধুরী একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদেরও সংগঠিত করেছেন, খোঁজ-খবর নিয়েছেন। স্বাধীনতার সংগ্রামে যেমন তার অবদান রয়েছে। আমাদের জাতীয় জীবনেও অবদান রয়েছে তার। ১৫ আগস্টের পর তো আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর অকথ্য নির্যাতন নেমে আসে। সাজেদা চৌধুরীও এর শিকার। জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেফতার করে। তার অপারেশন হয়েছিল, গায়ে জ্বর ছিল- এই অবস্থায় জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। মতিয়া চৌধুরীকেও গ্রেফতার করে। তিনিও অসুস্থ ছিলেন। তাদেরকে ডিভিশনও দেয়নি। সাধারণ কয়েদির মতো জেলে ফেলে রাখে।’

তিনি বলেন, ‘এদেশের প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রামে সাজেদা চৌধুরী সব সময় সামনে থাকতেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমরা তাকে ফুফু বলে ডাকতাম। জিয়াউর রহমান আইন করেছিল পার্টির রেজিস্ট্রেশনে কারও নাম দেওয়া যাবে না। কিন্তু এ ব্যাপারে সাজেদা চৌধুরী অটল ছিলেন। তিনি বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু ছাড়া পার্টি হয় না ‘

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশে আসার পর সাজেদা চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সব কাজ তিনি সুচারুরূপে করতেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তাকে বন ও পরিবেশমন্ত্রী বানিয়েছিলাম। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে এর অবদান সাজেদা চৌধুরীর।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রায় দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ ছিল। ৭৫ এর পর চট্টগ্রামে যে সংঘাত শুরু হয় সেই সংঘাতের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা ক্ষমতায় এসে শান্তি চুক্তি করি। ১ হাজার ৮০০ অস্ত্রধারী আমার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে। আমার প্রতিটি কাজে সাজেদা চৌধুরী সহযোগিতা করতেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে সাজেদা চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সংবিধান সংশোধনেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ছাত্র রাজনীতি যখন করতাম তখন থেকেই সাজেদা চৌধুরীকে চিনতাম। তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা। তাকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিত প্রাণ নেতাকে হারালো। আমি আমার চলার পথে তাকে সবসময়ই পাই। ফুফু বলতাম। তিনি চলে যাওয়াতে শুধু আওয়ামী লীগের নয়, দেশেরও ক্ষতি হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

সংসদ নেতা বলেন, ‘একে একে সবাই ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বয়স হয়ে গেছে যেতেই হবে। হয়ত আমিও একদিন চলে যাব। তবে যে যেটি করেছে আমাদের তো স্মরণ করতেই হবে। জিয়াউর রহমানের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার আমাদের আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী। শুধু আওয়ামী লীগ কেন আমাদের বিরোধী দলের যারা আছে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, জেনারেল এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু যারাই বিরোধীদলে আছেন তারাও নির্যাতনের শিকার।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সাজেদা চৌধুরী ও মতিয়া চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছিল জিয়াউর রহমান। তাদের ডিভিশন না দিয়ে জেলখানায় ফেলে রাখা হয়েছিল। খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার বেলায় তা করিনি। তিনি অসুস্থ বলে বাড়ি থাকার নির্বাহী আদেশে তার শাস্তি প্রাপ্তি স্থগিত রেখে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি করা হয়েছে। খালেদা জিয়া কিন্তু তা করেনি। বিমানবাহিনীর প্রধান জামাল উদ্দিন। তাকে গ্রেফতার করে তার নামে একটি ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে কোনো ডিভিশন না দিয়ে মাত্র দুটি কম্বল দিয়ে জেলখানায় পাঠিয়েছিল। এভাবে মানুষকে তারা অত্যাচার করেছে নির্যাতন করেছে। জাতীয় পার্টি বোধহয় সেই নির্যাতনের কথা ভুলেই গেছে । আওয়ামী লীগ তো সবার আগে নির্যাতিত। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, জেনারেল এরশাদ সবাই নির্যাতন করেছে। সাজেদা চৌধুরীর মতো অসংখ্যা নিবেদিত নেতাকর্মীরা দলের হাল ধরেছিল বলেই এই সংগঠন নীতি-আদর্শ হারায়নি। নীতি আদর্শ বজায় রেখে আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে। আশা করি, আমাদের নেতারা প্রয়াত নেতাদের আদর্শ অনুসরণ করেই সংগঠন করবে।’

আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সংসদের জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন