বিজ্ঞাপন

‘চালের দাম বাড়লে সবজিনির্ভর হয়ে পড়ে গরিব মানুষ’

November 9, 2022 | 7:18 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চালের দাম বাড়লে পুষ্টিকর খাদ্য কমিয়ে দিয়ে শুধু সবজিনির্ভর হয়ে পড়ে গরিব মানুষ। এই শ্রেণির মানুষ তাদের আয়ের ৩২ শতাংশ খরচ করে শুধু চাল কেনার পেছনে। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বিলাসী খাদ্য হিসেবে বিবেচিত- মাছ, মাংস ও ফল। আয় কমলে সবার আগে এসব খাবার কেনা বন্ধ করে অথবা কমিয়ে দেয় তারা। ফলে মারাত্মক পুষ্টি ঘাটতির শঙ্কা তৈরি হয়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। বুধবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়Bi

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। ‘হোয়াট ডু উই লার্ন অ্যাবাউট হাউজহোল্ড ফুড ডিমাইন্ড প্যাটেন্টস অ্যান্ড ইলাস্টিসিটিস ফ্রম মাইক্রো-ডাটা ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ড.ওয়াসেল বিন সাদাত। এটি তৈরি করা হয়েছে দ্য কুয়াইডস মডেলে বিবিএস’র ২০১৬ সালের হাউজ হোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভের তথ্য ব্যবহার করে। এটি পুরনো তথ্যেও ভিত্তিতে করা হলেও এখনও প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মূল প্রবন্ধে ড. সাদাত বলেন, ‘গ্রামের মনুষেরা শহরের মানুষের চেয়ে বেশি ব্যয় করে চালের পেছনে। গ্রামের মানুষেরা জাতীয়ভাবে নিজের মোট আয়ের ৩২ শতাংশ ব্যয় করে চাল কেনায়। আবার গরিবেরা ধনীদের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করে চাল কেনায়। তবে গ্রাম ও শহর উভয় এলাকার গরিব মানুষের কাছে বিলাসী খাদ্যপণ্য হিসেবে বিবেচিত- মাংস, মাছ ও ফল। তবে ডিম সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য খাবার। মাংস কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে শহরের মানুষ। ফল কেনায় এগিয়ে ধনীরা। তবে শাক ও সবজি কেনার ক্ষেত্রে গ্রাম শহর সব জায়গায়ই প্রায় সমান। দরিদ্র্য মানুষের সবচেয়ে কম ব্যয় ফল ও পুষ্টিকর খাবারের পেছনে। তবে পরিবার প্রধান যদি নারী হয় তাহলে কিছুটা পুষ্টিকর খাবারে গুরুত্ব থাকে। সেইসঙ্গে বিড়ি-সিগারেট, পান, জর্দ্দা কিংবা অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ কম হয়। তবে মানুষের যদি ১০ শতাংশ আয় বাড়ে তাহলে ১৫ শতাংশ ভোগ বেড়ে যায়।’

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘যদি চালের দাম বাড়ে তাহলে জাতীয়ভাবে ডাল জাতীয় খাবার, মাছ, মাংস ফল এবং অন্যান্য খাদ্য পণ্যেও ভোগ কমে যায়। এক্ষেত্রে শুধু শাক-সবজি কিনে থাকে দরিদ্র মানুষেরা। যদি ডাল জাতীয় খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যায় তাহলে অন্যান্য খাদ্যপণ্য এবং মাছের ভোগ কমে যায়। এক্ষেত্রে বেড়ে যায় চাল, ডিম এবং সবজি কেনার পরিমাাণ। মাছের দাম বাড়লে চাল, মাংস, সবজি এবং অন্যান্য খাদ্যেও ভোগ কমে যায়। অন্যদিকে, বেড়ে যায় ফল এবং ডাল জাতীয় খাদ্য ক্রয়। ডিমের দাম বাড়লে মাছ ও মাংসের ভোগ কমে যয়, বেড়ে যায় চাল, অন্যান্য খাদ্য, ডাল জাতীয় খাদ্য, সবজি এবং ফলের ভোগ। সবজির দাম বাড়লে চাল, ডিম, মাংস ও ফলের ভোগ কমে। বেড়ে যায় অন্যান্য খাদ্য পণ্য, ডাল এবং মাছের ভোগ। ফলের দাম বাড়লে চাউল,ডাল, সবজি এবং অন্যান্য খাদ্য পণ্যেও ভোগ কমে যায়। এদিকে, বেড়ে যায় মাছ ও মাংসের ভোগ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির সময় যখন প্রথম লকডাউন হয় তখন বিভিন্ন পণ্যের ১১ শতাংশ দাম বেড়ে যায়। এ সময় জাতীয়ভাবে আয় কমে যায় ৭০ শতাংশ। দ্বিতীয় লকডাউনের সময় পণ্য মূল্য বেড়ে যায় ২০ শতাংশ। সেইসঙ্গে আয় পুনরুদ্ধার হয়ে ৪৩ শতাংশ কম থাকে। তৃতীয় লকডাউনের সময় পণ্যের দাম বেড়ে যায় ১৬ শতাংশ। সেইসঙ্গে আয় পুনরুদ্ধারের ধারা অব্যাহত থাকে। আয় কমে ৪ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়, যেহেতু চালের দাম বাড়লে গরিব মানুষ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ বাদ দেয়, সেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি খোলাবাজারে চাল বিক্রি বাড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়া যখন আয় কমে যাবে তখন আয় বর্ধকমূলক কর্মসূচি নিতে হবে।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘গরিব মানুষেরা চালনির্ভর থাকে। কারণ তাদের আয় কম থাকে। দাম বাড়লে ডিমের ভোগ ঠিক থাকলেও মাছ, মাংস, ফল এবং সবজির ভোগ কমিয়ে দেয়। এটা জাতিগতভাবে আমাদের জন্য বড় ক্ষতি। গবেষণাটি পুরনো তথ্য দিয়ে করা হলেও এখনও এমন পরিস্থিতির আশঙ্কা আছে। তবে এই অবস্থার সঙ্গে দেখা দরকার ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের অভ্যাস বা খাদ্য গ্রহণের অবস্থা কেমন।’

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন