বিজ্ঞাপন

বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন হলেও শেষ হয়নি প্রস্তুতি!

January 1, 2023 | 8:46 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রতিবছর ১ জানুয়ারি বাণিজ্যমেলা শুরু যেন একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রোববার (১ জানুয়ারি) ‘২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিইটিএফ)-২০২৩’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু রাজধানীর পূর্বাচলে স্থায়ী এক্সিবিশন সেন্টারে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি এখনও শেষ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে চলে যাওয়ার পর দুপুরে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় মেলা প্রাঙ্গন। সরেজমিনে দেখা গেল, মেলার ৩২০টি স্টলের অধিকাংশেরই প্রস্তুতি চলছে। কোথাও কোথাও চলছে স্টল বা প্যাভিলিয়ন বানানোর কাজ। আবার কোথাও চলছে সাজসজ্জা।

মেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব (উপসচিব) মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্থায়ী এক্সিবিশন সেন্টারে ভেতরে ও বাইরে মিলিয়ে মোট স্টল ও প্যাভিলিয়ন ৩৩১টি। ৩২০টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি ১১টি বরাদ্দের কাজ চলমান। এর মধ্যে ছোট-বড় প্যাভিলিয়ন ৫৭টি। বাকিগুলো স্টল ও খাবারের দোকান।

এবারের বাণিজ্য মেলায় ১০টি দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলা ঘুরে দেখা গেল, কেউ কেউ কোনোরকমে পণ্য গুছিয়ে নিয়েছেন। গুছিয়ে নেওয়া দোকানের মধ্যে রয়েছে রান্নাঘরের দরকারি জিনিসপত্র, বিছানার চাদর, রেডিমেড ব্লেজার, আচার, চিপস ও ড্রাই ফুডের কিছু দোকান। এগুলোতেই ভিড় সবচেয়ে বেশি।

বিজ্ঞাপন

তবে এখনও প্রস্তুতি শেষ হয়নি শিশু কর্নারের। সেখানে রাইড বসানোর কাজ চলছে। জানা গেল, এখানে ঢুকতে ও রাইড উপভোগের জন্য লাগবে আলাদা আলাদা ফি, যা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। এখনও নির্মাণ ও গুছিয়ে নেওয়া চলছে অধিকাংশ খাবারের দোকানের। এর মধ্যেই আগত দর্শনার্থী ও মেলার কর্মীরা ভিড় করছেন।

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করে চলে যাওয়ার পর পরই অনেকে ভিড় করতে থাকেন মেলাপ্রাঙ্গণে। টিকিট কাউন্টার প্রস্তুত না থাকার মেলার প্রবেশ গেটের বাইরে কাঠের টেবিল পেতে সাময়িক টিকিট বিক্রি শুরু করে মেলা কর্তৃপক্ষ। পরে বিকেল নাগাদ খুলে দেওয়া হয় টিকেট কাউন্টার। দুপুরের পর থেকেই মূলত ভিড় শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে মেলা ঘুরে দেখা গেল, ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীই বেশি। মূলত মেলার আশপাশের এলাকা থেকেই দর্শনার্থীরা এসেছেন। অনেকেই জানালেন প্রতিবছর মেলায় আসা একটা উৎসবের মতো। কেউ এসেছেন পরিবারের সঙ্গে, কেউ আবার বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেল হোম অ্যাপ্লায়েন্সের দোকানগুলোতে।

গাজীপুরের হারিকেন থেকে দল বেঁধে এসেছেন শারমিন ও তার বন্ধুরা। প্রতিবছর বাণিজ্যমেলার প্রথমদিন ঘুরতে আসা তাদের একটি রীতির মতো। কেনাকাটা করেন টুকটাক, কিন্তু ঘোরাঘুরিই মূল আকর্ষণ।

উত্তরা থেকে শিশু সন্তানের হাত ধরে মেলায় এসেছেন চিকিৎসক দম্পতি ডা. নাজমুল ও ডা. মুবিনা। প্রতিবছর মেলা শুরুর অপেক্ষায় থাকেন তারা। তাই আজ উদ্বোধনের পর পরই চলে এসেছেন। মেলায় একই জায়গায় বিভিন্ন দেশের নানা ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। সেই আকর্ষণেই মূলত বাণিজ্যমেলায় ছুটে আসেন তারা।

রাজধানী বাসীর অভিযোগ, মেলা অনেক দূরে চলে গেছে। তবে যারা বাণিজ্যমেলায় যান, তারা এমনিতেই যান। এমনই একজন ইন্দিরারোডের মেরি। তিনি জানালেন, যতদিন বাণিজ্যমেলা চলে ততদিনই আসেন তারা। মূলত সংসারের নানা জিনিস কিনতে আসেন। হাড়ি-পাতিল, চাদর, খাবার ইত্যাদি। জায়গাটা ভালো হলেও এত দূরে হওয়ার কারণে আগের মতো বার বার মেলায় আসতে পারছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আশা করছি দুয়েক দিনের মধ্যে মেলা গুছিয়ে নেওয়া যাবে। গতবার প্রায় ২৫ লাখ মানুষ মেলায় এসেছিলেন। এবার রাস্তার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় ৫০ লাখ দর্শনার্থী আসবে বলে আশা করি। মেলায় আসার জন্য কুড়িল বিশ্বরোড থেকে প্রতিদিন বিআরটিসির ৫০টির ওপর দ্বিতল বাস চলাচল করছে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিন দেড়শর ওপর বাস রাখা হবে।’

এছাড়াও মেলা প্রাঙ্গণে দ্বিতল পার্কিংয়ে একসঙ্গে পাঁচশ গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে। এর বাইরে মেলার পেছনে নিজস্ব আট একর জায়গা রয়েছে, যেখানে আরও আট/নয়শ গাড়ি পার্ক করা যাবে। এছাড়াও স্থান সংকুলান না হলে কাছেই রাজউকের অফিসেও রাখা যাবে আরও হাজার খানেক গাড়ি।

দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও হয়রানিমুক্ত কেনাকাটার জন্য ভোক্তা অধিকারের একটি অফিস রয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন তারা। এছাড়াও এখানকার মেলা সচিবালয়ে সার্বক্ষণিকভাবে দেখাশোনার লোক রয়েছে।

মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিজস্ব ৪২ জন সিকিউরিটি গার্ড ছাড়াও রয়েছে পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারের কয়েকশ সদস্য। মেলায় কেউ অসুস্থ হলে তার জন্য রয়েছে মেডিকেল সেন্টার। এখানে সার্বক্ষণিকভাবে একজন চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয় থাকেন। রয়েছে বেড, অক্সিজেন সিলিন্ডার, জরুরি ওষুধ ইত্যাদি সেবার ব্যবস্থা।

জানা গেল, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এবারে মেলায় প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকেট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ডিসকাইন্টের সুযোগ থাকবে।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন