বিজ্ঞাপন

বিএনপির ১০ দফা অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র: ইনু

January 26, 2023 | 10:34 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপির ১০ দফাকে অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন জাতীয় সমতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দেওয়ার ও জঙ্গি সরকার কায়েমের চক্রান্ত। এই সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির ঘনিষ্ঠ ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া লন্ডনে বসে বলতেছে বাংলাদেশ মেরামত করতে চায়। আরে আগে তো তার (তারেক) মেরামত করা দরকার। তুমি পারলে বাংলাদেশে আসো। জনগণ তোমাকে মেরামত করার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশকে এগিয়ে নিতে রাতদিন কাজ করছেন, তখন বিএনপি-জামায়াতসহ কিছু রাজনৈতিক দল দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পথে কাঁটা ছড়াচ্ছে। বিএনপি ১০ দফা ও ২৭ দফা দিয়েছে, যার মধ্যে লুকিয়ে আছে গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। ওই সকল দফা অস্বাভাবিক সরকার আনা, যথা সময়ে নির্বাচন বন্ধ করা এবং ’৭১ ও ৭৫ এর খুনি, রাজাকার, জঙ্গি, জামায়াতের পক্ষ অবলম্বন। ওই একইসঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ, যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি, খুনি ও সন্ত্রাসীদের মুক্ত করার।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে কোনো আলেম বা ধর্ম প্রচারক ধর্মপ্রচারের জন্য কারাগারে নেই। যারা আছে তারা কেউ আলেম নন, সবাই হত্যা, খুন, নারী ধর্ষণকারী, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে দোষী ও অপরাধী।’

হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাজেটের ভেতর থেকেই স্বল্প সময়ের জন্য কিছু অদল-বদল করে অন্তত ৬ মাসের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ করা দরকার। নিত্যপণ্যের মূল্য ঠিক রাখতে গরিব-নিম্নবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে দৃশ্যমান শাস্তি দিয়ে সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস জ্বালানির জন্য মূল্যবৃদ্ধি আপাতত বাতিল করতে হবে। আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতের লুটপাট এবং বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ধ্বংস করতে হবে। তারেক, কোকোর পাচার করা টাকা যেভাবে ফেরত আনা হয়েছে, সেভাবে পাচারকৃত সকল অর্থ দেশে ফেরত আনতে হবে। সমাজতন্ত্র ছাড়া গণতন্ত্র এক পোড়া রুটি। সমাজতন্ত্রকে সংবিধানের পাতায় রেখে পুঁজিবাদের চশমা পরে বৈষম্য দূর হয় না, বাড়তেই থাকবে’— বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সকলের ঘনিষ্ঠ ঐক্য দরকার উল্লেখ করেন সাবেক মন্ত্রী ইনু বলেন, ‘উন্নয়নের ট্রেনে অনেক ঘরকাটা ইঁদুর ঢুকেছে। প্রশাসনের ভেতর নব্য রাজাকাররা মাকড়সার জাল বুনছে। সরকারের ভেতর দুই একটা খন্দকার মোস্তাকের ভূত ঢোকার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীসহ সবাইকে সাবধান ও হুঁশিয়ার থাকতে হবে। ’৭১ এর মীমাংসিত মৌলিক বিষয়ে বিতর্ক রেখে শুধু একটি নির্বাচন সংঘাতের সমাধান দেবে না। এই যুদ্ধ পরিস্থিতির অবসান করতে হলে গণতন্ত্র ও শান্তি চাইলে শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠান নয়, ’৭১ এর মীমাংসিত মৌলিক রাজনৈতিক প্রশ্নেও ঐকমত্য প্রয়োজন। এই যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ। শত্রুরা মিত্রবাহিনীর ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করবে। ঘরের শত্রু বিভীষণ, এটিও মনে রাখতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম বলেন, তারেক রহমান ২০০৭ সালে রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে বিদেশে গেছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তার ৩০ বছর সাজা হয়েছে। মানিল্ডারিং মামলায় সাত বছর সাজা হয়েছে। তারেক জিয়া ঢাকায় আসলে তাকে জেলে যেতে হবে। জেলে গেলে রাজনীতি তো দূরের কথা, কখনো নির্বাচনই করতে পারবে না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচন করতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

খালেদা জিয়ার ভাই ও বোন প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনার জন্য অনুরোধ করেছিল বলে জানান শেখ সেলিম। তিনি বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে সরাসরি বাসায় আনা যায় না। যদি বাসায় বসে আবার রাজনীতি করে। তখন তারা মুচলেকা দিয়ে বলেছে, খালেদা জিয়া রাজনীতি করবে না। সাজাপ্রাপ্ত আসামি রাজনীতি করবে না। মুচলেকা দিয়েছে, আর সে ১০ তারিখে (১০ ডিসেম্বর) এসে ক্ষমতা দখল করবে। শেখ হাসিনার পতন ঘটাবে। এসব হলো জনগণকে বিভ্রান্ত ও তাদের লোকদের কিছু খোরাক দেওয়ার জন্য।’

আওয়ামী লীগের ওই সংসদ সদস্য বলেন, ‘কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, আমাদের রাজনীতির ব্যাপারে কিছু কূটনীতিক তোড়জোর করছে। কারও কারও বাড়িতেও গিয়ে হাজির হচ্ছে। এ কি আশ্চর্য! কী বিচিত্র এই দেশ। আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই। আমাদের রাজনীতি নির্ধারণ করবে জনগণ। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছি। আমাদের কোনো প্রভু নেই। আমাদের প্রভু হলো এ দেশের জনগণ। কারও প্রেসক্রিপশনে এই বাংলাদেশ চলবে না। আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে কোনও বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে শেখ সেলিম বলেন, ‘কে এলো, কে এলো না, ওই সত্তর সালের নির্বাচনেও মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে উঠে চলে গেল। আজকে তার পার্টির অবস্থান কোথায়? তোমরা যদি একটার পর একটা নির্বাচন না করো, তোমাদেরও করুণ পরিণতি হবে। মুসলিম লীগ ও ভাসানী ন্যাপের মতো হবে। বাংলাদেশে কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএএইচএইচ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন