প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বিক্রি: ২ এজেন্সিকে পাট অধিদফতরের জরিমানা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাজারে (কৃষি মার্কেট) চটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বিক্রি করায় দুই প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পাট অধিদফতর। জরিমানা করা প্রতিষ্ঠান দু’টি হলো মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ‘থ্রি স্টার রাইস এজেন্সি’ এবং ‘ফরিদপুর রাইস এজেন্সি’। এর মধ্যে প্রথম প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

শনিবার (৪ মার্চ) সকাল ১১টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাজারে (কৃষি মার্কেট) পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সেলিনা আক্তারের (অতিরিক্ত সচিব) নেতৃত্বে পাটের বস্তার সঠিক ব্যবহার, পাটের বস্তার যোগান ও দেশব্যাপী পরিচালিত অভিযানের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে এই জরিমানা করা হয়েছে।

একইসঙ্গে কৃষি মার্কেটের সব পাইকারী চাল ব্যবসায়ীকে আগামী এক মাসের মধ্যে বিভিন্ন দোকানে থাকা বিদ্যামান প্লাস্টিকের বস্তায় থাকা চাল বিক্রি করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর কোনো ব্যবসায়ী প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সেলিনা আক্তারের (অতিরিক্ত সচিব) নেতৃত্বে দু’জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এরা হলেন- নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ, সালেহা নূর।

এছাড়াও পরিদর্শক দলে ছিলেন, এসএম সোহরার হোসেন উপ পরিচালক (প্রশাসন) পাট অধিদফতর, সমন্বয় কর্মকর্তা মো. সওজাতুল আলম, মুখ্য পরিদর্শক মাহবুব হোসেন এবং পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম।

ড. সেলিনা আক্তার বলেন, ‘দেশে কোথাও চটের বস্তার সংকট নেই। পর্যাপ্ত চটের বস্তার রয়েছে। কিন্তু অনেক স্থানে ২ টাকা কমবেশির কারণে মিল মালিকরা চটের বস্তা নিচ্ছেন না। অথচ একটা চটের বস্তা ৩/৪ বার ব্যবহার করা যায়। ফলে প্লাস্টিকের বস্তার তুলনায় চটের বস্তার খরচ কম। ফলে কোন অজুহাতে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাট অধিদফতরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) সোহরার হোসেন বলেন, ‘মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বিক্রি করায় দুইটি দোকানকে মোট ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক বস্তা ব্যবহার করতে উচ্চ আদালতে ৩৫টি রিট করা হয়েছিল। আমরা খবর নিয়ে দেখেছি ভুল তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে এসব রিট করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বাজারে পাটের বস্তার সংকট রয়েছে। বাস্তবে বাজারে চটের বস্তার সংকট নেই। ইতিমধ্যে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে ২৫টি মামলার রিট খারিজ করে দিয়েছেন। বাকি ১০টি মামলার রিটও দ্রুত নিস্পত্তি করে সরকারের পক্ষে রায় দেবে বলে আশা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক রয়েছে এসব পণ্যে কেউ যদি প্লাস্টিকের ব্যবহার করে তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশব্যাপী অভিযান চলছে এবং এসব অভিযান সারাবছর চলে। তবে বর্তমানে পাট দিবস উপলক্ষে একটি বিশেষ অভিযান চলছে।’

মোহাম্মদপুর সরকারি কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘আমাদের এক মাসের সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো এক মাসের মধ্যে আমাদের কাছে যে সব প্লাস্টিকের বস্তায় চাল রয়েছে সেগুলো বিক্রি করে ফেলতে। নতুন করে এই বাজারে আর প্লাস্টিক বস্তায় চাল বিক্রি করা হবে না।’

উল্লেখ্য, পরিবেশ দূষণ রোধ ও পার্টের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতালক ব্যবহার আইন, ২০১০’ প্রণয়ন করেছে। এ আইনের আওতায় ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, পোল্ট্রি ফিড, ফিস ফিড ও তুষ-খুদ-কুঁড়া মোড়কীকরণে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আইন অমান্যকারীর অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য লাইসেন্স গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। লাইসেন্সবিহীন পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবসা পরিচালনার শাস্তি অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/এমও