বিজ্ঞাপন

আজও স্টেশনে মানুষের ভিড়, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ

April 21, 2023 | 3:52 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: এবার ঈদের তিন দিন আগেই ছুটি শুরু হওয়ায় শেষ কর্মদিবস গত মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) থেকেই বাড়ি ছুটতে শুরু করেছে মানুষ। গত দু’দিন ধরেই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। আজ শুক্রবারও (২১ এপ্রিল) রাজধানীর প্রতিটি স্টেশনে ছিলো যাত্রীর ভিড়। ঈদকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তে ঘরমুখো মানুষের ভিড়ের চিত্র চোখে পড়েছে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে। রয়েছে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথের মধ্যে যাত্রাবাড়ি অন্যতম। এখান থেকে বাসযোগে দেশের পূর্ব, দক্ষিণ এমনকি পশ্চিমাঞ্চলের একটা বড় অংশের যাতায়াত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এই যাতায়াত আরও বেড়েছে। শুক্রবার যাত্রাবাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাস কাউন্টারে ঈদের আগের দিনই ঘরমুখো মানুষের ভিড়। তবে বেশিরভাগই স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনছেন যাত্রীরা।

বাস কাউন্টারের কর্মীরা জানান, এবার ঈদের ছুটি আগে শুরু হওয়ায় অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা আগেই চলে গেছেন। তবে যেসব যাত্রী উপস্থিত হয়ে এখন টিকিট কাটছেন তাদের অভিযোগ, বাসগুলো স্বল্প দূরত্বেও অতিরিক্ত বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে।

ইলিশ পরিবহনের এক যাত্রী নাজমুল হুদা সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাত্রাবাড়ি থেকে ভাঙা পর্যন্ত ভাড়া লেখা ২৫০ টাকা। কিন্তু আমার কাছ থেকে নিয়েছে ৪০০ টাকা। সবার কাছ থেকে এই টাকা নেয়। পরে সব যাত্রীরা প্রতিবাদ করায় ১০০ টাকা করে ফেরত দিয়েছে। তারপরও তারা ২৫০ টাকার ভাড়া নেয় ৩০০ টাকা।’

বিজ্ঞাপন

আরেক বাস যাত্রী নওশের জানান, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস যাত্রীদের কাছ থেকেও।

দেশের উত্তরাঞ্চলের বাস ছেড়ে যায় মূলত রাজধানীর গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে। শনিবার ঈদ হলেও শুক্রবারও মানুষের বাড়ি ফেরার চিত্র দেখা গেছে। অনেকেই অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ বাসের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। এখন ভাড়া নিয়ে কিছু বাস পরিচালনা করা হচ্ছে। সেসব বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

তেঁজগাওয়ের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন আবু মোহাম্মদ নাঈম। তার বাড়ি জয়পুরহাটে। বেলা ১টার দিকে গাবতলীর শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে যান তারা। নাঈম বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বাড়ি যেতে হবে, উপায় নেই বলে ১ হাজার টাকা দিয়ে একটা টিকিট কিনেছি। শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে সাঁটানো ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী গাবতলী থেকে জয়পুর হাটের দূরত্ব ২৪৭ কিলোমিটার। এই দূরত্বে টোলসহ ভাড়া জনপ্রতি ৭১২ টাকা। অর্থাৎ শ্যামলী পরিবহন প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৮৮ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।’

তবে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. জাহিদ বলেন, ‘অগ্রিম টিকিট সব বিক্রি হয়ে গেছে। এখন যাত্রীদের চাপ কম। কিছু সিট ফাঁকা নিয়ে ফিরতে হবে। সেজন্য কিছু টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে লোকসান পোষাতে।’

বাড়তি ভাড়া আদায় করছে দূরপাল্লার অনেক বাস কোম্পানিই। গাবতলী থেকে রংপুরের দূরত্ব ৩০৮ কিলোমিটার। এই দূরত্বে টোলসহ বাস ভাড়া ৮৭৯ টাকা। কিন্তু হানিফ পরিবহন নিচ্ছে ১ হাজার টাকা। সে হিসাবে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে ১২১ টাকা। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকেও। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি রুটেরই বাসভাড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

বিজ্ঞাপন

পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, তার মালিকানাধীন এনা পরিবহন কোনো বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে না। অন্য কোনো বাস নিচ্ছে কি না তা তার জানা নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়তি ভাড়া নেওয়ার তো কথা নয়। কারণ সব টিকিট তো অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। যদি কেউ নিয়ে থাকে তাহলে তা মনিটরিং করতে সরকারের আইন শৃঙ্খলাবাহিনী রয়েছে।’

এদিকে শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ট্রেন ছিল যাত্রী পরিপূর্ণ। ছিলো বরাবরের মতোই ট্রেনে ওঠার প্রতিযোগিতা। স্ট্যান্ডিং টিকিট কেনার জন্য প্রচুর ভিড় ছিলো কাউন্টারে। ট্রেনের ভেতরে যারা সিট পাননি তারা ঠাঁই নিয়েছেন ছাদে। এদিকে সায়েবাদ বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলোতে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে তা গত তিন দিনের তুলনায় কিছুটা কম। তবে ট্রেনের ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়ার সুযোগ নেই।

তবে চাপ কমেছে সদরঘাটে লঞ্চ টার্মিনালে। গত দু’দিন ঘরমুখো মানুষের যে চাপ ছিলো তা অনেকটাই কম ছিলো শুক্রবার। লঞ্চের ক্ষেত্রেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ছিলো যাত্রীদের।

ঢাকা-বরিশাল রুটে সুরভী-৬ লঞ্চের যাত্রী ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, ১৫০০ টাকার টিকিট এখন ১৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ ছিলো ঢাকা পটুয়াখালী রুটে সুন্দরবনের মতো বড় বড় লঞ্চগুলোর বিরুদ্ধে।

যদিও লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন। তারা বলছেন, ঈদের আগের দিন যাত্রী সংখ্যা অনেকটা কম। কেবিনের ভাড়া বাড়ানো হয়নি, তবে অন্যান্য সিটের ভাড়া সামান্য কিছু বাড়তি নেওয়া হচ্ছে উৎসবকে ঘিরে।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন