বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রে ভোটার টানতে পারেনি নিরুত্তাপ উপনির্বাচন

July 30, 2023 | 6:24 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা এবং কোনো ধরনের উত্তাপ ছাড়াই চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট শেষ হলো। তবে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম দেখা গেছে। অধিকাংশ কেন্দ্রে দিনভর ভোটারের অপেক্ষায় থেকে অলস সময় পার করেছেন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা। দু’য়েকটি কেন্দ্র অবশ্য ব্যতিক্রমও দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, মাত্র পাঁচ মাস মেয়াদের জন্য নির্বাচন হওয়ায় ভোটারদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। ভোটার না আসার হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরাও।

নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছয়জন। তারা হলেন- নৌকা প্রতীকে মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির সামসুল আলম, সোনালি আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত, ছড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশিদ মিয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রকেট প্রতীকে মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও বেলুন প্রতীকে মো. আরমান আলী।

রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি অংশ না নেওয়ায় কিংবা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীতে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল না। যদিও নৌকার প্রার্থী জোরালো প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা শুরু থেকেই ভোটারদের কেন্দ্রে আনাকেই মূল চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কার্যত ভোটারদের তারা কেন্দ্রে টানতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা’র স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট শ্যামল নন্দী ও স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইমরান চৌধুরী নির্বাচনী এলাকায় বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরেছেন। হাতেগোনা দু’য়েকটি কেন্দ্র ছাড়া কোনো কেন্দ্রে ভোটারের সারি দেখতে পাননি তারা।

নগরীর আমবাগান এলাকায় রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে সকাল থেকে মোটামুটি ভোটারের উপস্থিতি ছিল। দুপুর ১টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ২ হাজার ৪৩২ জন ভোটারের মধ্যে ৩৫০ জন ভোট দিয়েছেন বলে প্রিজাইডিং অফিসার মো. তোফায়েল হোসেন জানান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। সাতটি বুথে ভোটার উপস্থিতি ভালো।’ তবে সেই ভোটকেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট ছিল না।

বিজ্ঞাপন

নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রের ১৯টি বুথে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। এই কেন্দ্রে মোট পুরুষ ভোটার ৩৮১৬ এবং মহিলা ভোটার ৩৩৮৫। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২৬০ জন পুরুষ ভোটার ও ১৪৫ জন মহিলা ভোটার ভোট দিয়েছেন।

এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সুজন কান্তি দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন ভোটার উপস্থিতি সকালের দিকে কম হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে। আমি কয়েকমাস আগে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছি। সেই নির্বাচনের তুলনায় এখানে ভোটার উপস্থিতি ভালো।’

নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রেও নৌকা ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর এজেন্ট উপস্থিত ছিল না। নগরীর লালখান বাজারে শহীদনগর সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারের কোনো সারিই দেখা যায়নি। সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে একজন, দু’জন করে ভোটার কেন্দ্রে আসতে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় পার্টির প্রার্থী সামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনি প্রচারণায় মানুষের ঘরে-ঘরে গিয়েছি। ভোটাররা জানতে চেয়েছেন, ভোট কি রাতে হয়ে যাবে এবং ভোটকেন্দ্রে গেলে কেউ গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে কি না। এ জন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছিলাম, ভোটের দিন সেনাবাহিনীর টহলের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেটা করেনি। এটা যদি করতো, তাহলে মানুষ হুড়হুড় করে ভোটকেন্দ্রে চলে আসতো। এখন যা অবস্থা, ফাইভ পারসেন্ট ভোট কাস্ট হবে বলে মনে হচ্ছে না।’

তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দীপক কুমার পালিত সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ চমৎকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা খুবই ভালো। কিন্তু মানুষ যে কেন ভোটকেন্দ্রে আসছে না, সেটা বুঝতে পারছি না। হয়তো মানুষ ভাবছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজনকে নমিনেশন দিয়েছেন, তিনিই জিতে যাবেন, ভোট দেয়ার দরকার কী! এজন্য ভোটার উপস্থিতি একদম কম, সর্বোচ্চ আট-নয় পারসেন্ট ভোট কাস্ট হতে পারে।’

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে। সকালে কিছু কেন্দ্রে ভালো ভোটার ছিল। পরে আবার কমে গেছে। তবে ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। ভোটার বেশি সেটাও বলতে পারছি না, আবার একেবারে কম সেটাও বলতে পারছি না।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলা যায়। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটার উপস্থিতি কম, এটা আমরা অস্বীকার করছি না। একে তো উপনির্বাচন, তার ওপর মেয়াদ মাত্র পাঁচ মাস, সেজন্য ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ কম হতে পারে।’

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, হালিশহর, খুলশী, পাঁচলাইশের একাংশ) আসনে মোট ওয়ার্ড আটটি- শুলকবহর, দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, পাহাড়তলী, লালখান বাজার, উত্তর আগ্রাবাদ, রামপুর এবং উত্তর হালিশহর। মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৩। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯২৯ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮০ জন নারী ভোটার।

মোট ১৫৬টি কেন্দ্রের ১ হাজার ২৫১টি বুথে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিজিবি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেছে। সাথে বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও ছিলেন।

চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে তিন দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আফছারুল আমীন। গত ২ জুন তিনি মারা গেলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন