বিজ্ঞাপন

সিসা দূষণের ভয়ংকর ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: গবেষণা

September 13, 2023 | 12:34 pm

স্টাফ করেসপেন্ডেন্ট

ঢাকা: বিশ্বে সর্বোচ্চ সিসা দূষিত দেশের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের মানুষের রক্তে মাত্রাতিরিক্ত সিসা শিশুদের মস্তিষ্কের ক্ষতি করে বুদ্ধিমত্তা কমিয়ে দিচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্করা প্রাণ হারাচ্ছেন হৃদরোগজনিত কারণে। দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

‘গ্লোবাল হেলথ বারডেন অ্যান্ড কস্ট অব লেড এক্সপোজার ইন চিলড্রেন অ্যান্ড অ্যাডাল্টস: অ্যা হেলথ ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড ইকোনমিক মডেলিং অ্যানালাইসিস’ শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের এই গবেষণায় দেখা যায়, সিসা দূষণের কারণে ক্ষতির পরিমাণ আগে যা অনুমান করা হয়েছিল বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি।

গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশে সিসা দূষণের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বুদ্ধিমত্তার সূচক বা আইকিউ পয়েন্ট প্রায় ২ কোটিরও বেশি (২০,৫৯৬,৩০৬) কমে গেছে; বাড়ছে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীতার ঝুঁকি, গুনতে হচ্ছে প্রায় ১০,৮৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক ক্ষতি। কমে যাচ্ছে দেশের ৩.৭ শতাংশ বার্ষিক জিডিপি। সিসা বিষক্রিয়ার শিকার হলে শিশুদের বুদ্ধি কমে যায়, পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ে, মনোযোগে সমস্যা হয়, আচরণগত সমস্যা যেমন মেজাজ খিটখিটে, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা যায়।

২৫ বছর বা তার ঊর্ধ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সিসা দূষণের কারণে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি) বা হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে যার কারণে বছরে প্রায় ১৩৮,০৫৪ জন মানুষ মারা যাচ্ছে যা আগের অনুমানের চেয়ে চারগুণ বেশি।

বিজ্ঞাপন

বুদ্ধিমত্তা হ্রাস ও হৃদরোগে মৃত্যুর ফলে দেশের আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ২৮,৬৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার কারণে দেশে ২০১৯ সালে ৬ থেকে ৯ শতাংশ জিডিপিতে ঘাটতি হয়েছে।

লেড-সেফ বাংলাদেশ কোয়ালিশন এর তরফ থেকে বলা হয়েছে, আমরা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করি এমন অনেক জিনিসপত্রে সিসা থাকতে পারে। যেমন, দেয়াল রঙ, অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিকের বাসনপত্র, মসলা, খেলনা, কসমেটিকস বা প্রসাধনী, সার, চাষকৃত মাছের খাবারসহ আরও অনেক কিছুতেই সিসা মেশানো হয়। অনিরাপদে, খোলা জায়গায় যখন সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি ভাঙা ও সিসা গলানো হয় রিসাইক্লিং এর জন্য তখন সিসা পরিবেশে উন্মুক্ত হয়ে দূষণ ছড়ায়।

‘লেড-সেফ বাংলাদেশ কোয়ালিশন’ হলো বাংলাদেশে সিসা দূষণ প্রতিরোধে কাজ করছে এমন সংগঠনগুলোর একটি জোট, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, জাতিসংঘ, গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত। জোটের সদস্যরা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং সরকার ও নীতিনির্ধারকদের কাছে তাদের প্রস্তাবিত দশ-দফা কর্মপরিকল্পনা অনুসরণ করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়। সমষ্টিগতভাবে জোটের সদস্যরা সিসা দূষণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তরান্বিত করতে এ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানায়।

বিজ্ঞাপন

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)-এর সেক্রেটারি জেনারেল ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, মানদণ্ড থাকা সত্ত্বেও, ডেকোরেটিভ এবং শিল্পখাতে ব্যবহৃত রঙ বা পেইন্টগুলোতে এখনও উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া যায় এবং বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং বহুজাতিক কোম্পানি এখনও মানদণ্ড অনুসরণ করে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য, বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ, শিল্পখাতে ব্যবহৃত রঙের মান উন্নয়ন এবং দূষণকারীদের জরিমানার আওতায় আনতে হবে। ক্রমাগত অ্যাডভোকেসি এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে মাল্টি-সেক্টরাল উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

সিসা দূষণ মোকাবেলায় দশ-দফা কর্ম পরিকল্পনার সুপারিশ করেছে লেড-সেফ বাংলাদেশ কোয়ালিশন। তার মধ্যে রয়েছে গবেষণার মাধ্যমে সিসার সম্ভাব্য উৎসগুলো খুঁজে বের করা এবং সে অনুযায়ী সিসা দূষণ বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া ইত্যাদি।

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন