বিজ্ঞাপন

উত্তরপত্রে নিম্নমানের কাগজ, ক্ষুব্ধ কুবি শিক্ষার্থীরা

September 29, 2023 | 11:01 am

মোহাম্মদ রাজীব, কুবি করেসপন্ডেন্ট

কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) গত কয়েক বছরের তুলনায় নিম্নমানের কাগজে তৈরি উত্তরপত্রে সেমিস্টার ও মিডটার্ম পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, অমসৃণ, খসখসে ও মোটা নিউজপ্রিন্ট কাগজের উত্তরপত্র দেওয়া হচ্ছে সেমিস্টার ও মিডটার্ম পরীক্ষায়। এ কাগজে ঠিকমতো লিখতে পারছেন না তারা। এ ছাড়া এক পৃষ্ঠার লেখা বিপরীত পৃষ্ঠায় ভেসে ওঠে। কাগজে ছোট-বড় ছিদ্র তো রয়েছেই, রয়েছে বিভিন্ন স্থানে কালো দাগও।

বিজ্ঞাপন

এ পরিস্থিতিতে উত্তরপত্রের কাগজের মান নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন কুবি শিক্ষার্থীরা। পেপার রিকুইজিশন কমিটি, যাচাই-বাছাই কমিটি ও ক্রয় কমিটির দায়িত্ব পালন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেমিস্টার ও মিডটার্মের উত্তরপত্রের কাগজ নিম্নমানের হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করছে কুবি প্রশাসনও। তবে এ কাগজেই পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন কুবি কর্তৃপক্ষ।

মানহীন উত্তরপত্রের অভিযোগ তুলে কুবি অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান আহমেদ বলেন, ‘খাতার প্রথম পৃষ্ঠায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় লেখাসম্বলিত যে লোগো, আইডি নেম ও অন্যান্য তথ্য, সেগুলো আরেক পৃষ্ঠায় দেখা যায়। ওই জায়গাগুলোতে লিখলে লেখাগুলো স্পষ্ট হয় না। আমরা অনেকে লেখার সময় কলমে চাপ কম দিই। অনেকে বেশি চাপ দিয়ে লিখি। যারা বেশি চাপ দিয়ে লিখে অভ্যস্ত, তাদের লেখাগুলো ওই পৃষ্ঠায় একটু হিজিবিজি দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

নিম্নমানের কাগজে লেখা যায় না মন্তব্য করে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাফাত মুহাম্মদ ওয়াসিব বলেন, আগে আমরা মিডটার্মে যে উত্তরপত্র পেয়েছি, সেগুলোর কাগজ অনেক ভালো ছিল। হঠাৎ কর এখন দেখি কাগজের অবস্থা খুব বাজে। ঠিকমতো লেখা যায় না। এতে পরীক্ষার আমাদের হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) অর্থনীতি বিভাগের মাইক্রো-ইকোনমিক থিওরি (ইকো-৩২১) বিষয়ের সেমিস্টার ফাইনালে অংশ নেন বনলতা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার খাতাগুলো অনেক নিম্নমানের ছিল। খাতার মাঝখানে ছেঁড়া, কালো কালো দাগ ছিল। খাতা অমসৃণ, খসখসে হওয়ায় লিখতে সমস্যা হয়েছে। খাতাগুলো খোলা চোখে দেখতেও খারাপ লাগে। কারণ খাতার একেক পৃষ্ঠায় একেক রঙ!’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগের অর্থবছরগুলোতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পেপার মিলস থেকে সরবরাহ করা হোয়াইট প্রিন্ট মসৃণ কাগজে পরীক্ষা নেওয়া হতো। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জরুরি পরিস্থিতিতে উপাচার্যের নির্দেশে জি-টু-জি পদ্ধতিতে এ বছরের মে ও জুন মাসে দুই লক্ষাধিক খাতা সরবরাহ করে কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড। এর আগে পরীক্ষার কাগজ কিনতে দরপত্র আহ্বান করা হলেও এবার সেটি করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

কুবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর কুবিকে কাগজ সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ হয় ঢাকার ফকিরাপুলের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘বর্ণলিপি’। ওই নিলামের চুক্তিমূল্য ছিল ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৮০ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী কাগজ সরবরাহ করার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বৈশ্বিক সংকটের কারণে দাম বেড়ে গেলে চুক্তি অনুযায়ী বর্ণলিপি কাগজ সরবরাহ করতে পারেনি। পরে কর্ণফুলি পেপার মিলস থেকে জরুরিভিত্তিতে কাগজ কেনা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে কাগজের মান যাচাই না করার অভিযোগ উঠেছে যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে।

এর আগে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আহসান উল্যাহকে আহ্বায়ক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরীকে সদস্যসচিব করে খাতা রিকুইজিশন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবদুল্লাহ-আল-মামুন, অর্থ ও হিসাব দফতরের সহকারী পরিচালক এস এম মাহমুদুল হক এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের সেকশন অফিসার মো. তাজুল ইসলাম।

এবার দরপত্র না হলেও কাগজ কেনার আগে যাচাই-বাছাই কমিটিতে কারা ছিলেন, তারা কীভাবে মান যাচাই করেছেন— এসব বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতরের প্রধান মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী। তবে বর্তমানে সরবরাহ করা কাগজ নিম্নমানের হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আহসান উল্যাহ বলেন, খাতাগুলো খোলা চোখে দেখতেও ভালো দেখায় না। খাতার মান যেহেতু খারাপ তাই এ বিষয়ে নূরুল করিমকে বলেছি যে এ খাতা দিয়ে মিডটার্ম পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীরা স্বচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। এ খাতা দিয়ে সেমিস্টার পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। বিষয়টি প্রশাসনের উচ্চ মহলে অবগত করতে বলেছি।

বিজ্ঞাপন

ড. আহসান উল্যাহ আরও বলেন, আগে কাগজ কেনা হতো বসুন্ধরা থেকে। এবার সংকট দেখা দিলে জরুরি প্রয়োজনে উপাচার্যের নির্দেশে কর্ণফুলী পেপার মিলস থেকে কাগজ নেওয়া হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় খাতার মান ঠিক থাকবে। এখন দেখছি খাতার মান তেমন ভালো নয়।

একই কথা বলছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, খাতাগুলোর মান আগের চেয়ে খারাপ। পৃষ্ঠাগুলো অনেকটাই মাল্টিকালার। তবে এই খাতা দিয়েই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া হবে। তারপরও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমি উপাচার্য স্যারকে অবহিত করেছি, এ কাগজ আর আনা বা ব্যবহার করা উচিত হবে না।

নিম্নমানের কাগজের দায় কার— জানতে চাইলে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কর্ণফুলী পেপার মিলের অতীত ঐতিহ্য আর নেই। আমরা কাগজ আনার পর সেটি বুঝতে পেরেছি। তবে এক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই কাগজ কিনতে আমরা বাধ্য হয়েছি। এখানে কমিটি বা কারও কোনো দায়ভার নেই।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে আপাতত কিছু করার নেই বলেই জানাচ্ছেন কোষাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, কাগজ কেনা তো হয়েই গেছে। সেজন্য এখন ব্যবহার করতেই হবে। অন্য উপায় নেই। তবে চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ভালো মানের কাগজ কেনার বিষয়টি আমরা লক্ষ রাখব।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এফ এম আবদুল মঈন এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমার অনেক প্রোডাক্টিভ কাজ আছে। এ বিষয়ে আমাকে কল দেবে না।’

সারাবাংলা/টিআর/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন