বিজ্ঞাপন

রানে ৭ম, উইকেটে ১১তম— ওয়ানডে বিশ্বকাপ অধ্যায় শেষ সাকিবের

November 7, 2023 | 9:43 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

১৭ মার্চ ২০০৭। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপে অভিষেক। বয়স তখন ২০ বছর। প্রথমে বল হাতে ১০ ওভারে ৪৪ রান দিয়েও পাননি উইকেট। তবে রান তাড়ায় ব্যাট হেসেছিল তার। তুলে নিয়েছিলেন অর্ধশত রান। লক্ষ্য বড় না হওয়ায় তার ৮৬ বলে ৫৩ রানের ইনিংস ছিল দারুণ কার্যকর। দল পেয়েছিল জয়।

বিজ্ঞাপন

৬ নভেম্বর ২০২৩। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ মুখোমুখি শ্রীলংকার। বিস্মরণযোগ্য এক বিশ্বকাপে টানা হারে বিপর্যস্ত দলটি এবারও প্রথমে বোলিংয়ে। এবার বল হাতে ১০ ওভারে ৫৭ রান দিলেও তার শিকার প্রতিপক্ষের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দুই ব্যাটার। ব্যাটিংয়ে নামার সময় লক্ষ্যটা একটু বড়। রান তাড়া করতে নেমে ঝড় তুললেন। ৬৫ বলে করলেন ৮২ রান। দলও পেল জয়। হলেন প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ।

দুই বিশ্বকাপের মাঝে ব্যবধান ১৬ বছরের। এর মধ্যে সেই অলরাউন্ডার ক্রিকেটার হাজারও অর্জনে নিজেকে করেছেন সমৃদ্ধ, দলকে এনে দিয়েছেন অনন্য-অসাধারণ সব মুহূর্ত। ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন আর একাগ্রতা দিয়ে মাঝের এই ১৬ বছরে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডার তো বটেই, তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবেও। আর কেউ নন, তিনি সাকিব আল হাসান। গতকাল শ্রীলংকার ম্যাচ দিয়েই সম্ভবত শেষ হলো তার ওয়ানডে বিশ্বকাপের যাত্রা।

না, বিশ্বকাপে নকআউটে যাওয়ার সুযোগ না হলেও গ্রুপ পর্বেই বাংলাদেশের খেলা এখনো শেষ হয়নি। ১১ নভেম্বর রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শেষ ম্যাচ। সাকিবও অবসর নেননি ক্রিকেট থেকে। তাহলে শ্রীলংকার সঙ্গে তার ম্যাচটিকেই কেন বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ বলছি?

বিজ্ঞাপন

কারণটা প্রথমত সাকিবের আঙুলের ইনজুরি। শ্রীলংকা ম্যাচে তার আঙুলে যে চিড় ধরেছে, তাতে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটি আর খেলা হবে না তার। আজ মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) আইসিসি নিশ্চিত করেছে, সাকিব দেশে ফিরছেন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শেষ ম্যাচটি না খেলেই।

দ্বিতীয়ত, সাকিব নিজেই বিশ্বকাপের আগে বলেছিলেন, ওয়ানডেতে এটিই তার শেষ বিশ্বকাপ। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পরই তিনি ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে চান। তাছাড়া সামনের বিশ্বকাপে তার বয়স হবে ৪০ বছর, ততদিন পর্যন্ত ফিটনেস ধরে রেখে তিন ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশাও বাড়াবাড়ি। ফলে শ্রীলংকার সঙ্গে ম্যাচটিই কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারে ওয়ানডে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ হয়ে থাকছে, সেটি একরকম নিশ্চিতই।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বকাপে সাকিবের শুরু আর শেষটা একই সুতোতেই বাঁধা থাকল। ১৬ বছর আগে ভারতকে হারানো বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটিতে ছিল তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, সেখানে শ্রীলংকার সঙ্গে শেষ ম্যাচে জয় এলো অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ পোড় খাওয়া এক ক্রিকেটারের হাত ধরে। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার সেই শেষ মুহূর্তকে যেন রাঙিয়ে দিল রঙিন করে।

৩৬ ম্যাচে থামল সাকিবের ওয়ানডে বিশ্বকাপযাত্রা। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচটি খেলতে পারলে সেটি হতো ৩৭ ম্যাচ। কিন্তু লংকানদের বিপক্ষে বোলিংয়ের সময়ই বাম হাতের তর্জনীতে আঘাত পেয়েছিলেন সাকিব। আঘাত নিয়েই পেইনকিলার খেয়ে ব্যাটিং চালিয়ে গেছেন। খেলা শেষে হাসপাতালে স্ক্যানের পর জানা গেল, আঙুলের চিড় থেকে সেরে উঠতে সময় লাগবে তিন থেকে চার সপ্তাহ। আজই দেশে ফিরে আসছেন তিনি।

শেষের ম্যাচটা সাকিব সুখস্মৃতি নিয়ে শেষ করলেও দলগতভাবে শেষ বিশ্বকাপটি একদমই মনে রাখার মতো হয়নি। তবে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলা বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার ব্যক্তিগত অর্জনে রয়েছেন অনন্য উচ্চতাতেই। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সাকিব আল হাসান রয়েছেন সপ্তম স্থানে, উইকেট শিকারির তালিকাতেও রয়েছেন ১১তম স্থানে। এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করা ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

প্রথম বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচ খেলে ২০২ রান আর ৭ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন সাকিব। ২০১১ বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে করেন ১৪২ রান, তুলে নেন ৮ উইকেট। ২০১৫ সালের তৃতীয় বিশ্বকাপেও পান ৮ উইকেট, ৬ ম্যাচে সংগ্রহ করেন ১৯৬ রান। আর এবারের শেষ বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে তার সংগ্রহ ১৮৬ রান, সঙ্গে ৯ উইকেট।

বিজ্ঞাপন

মাঝে ২০১৯ সালের চতুর্থ বিশ্বকাপটির কথা ওপরে বলা হয়নি সেটি বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো বলেই। বলা চলে সেটি স্বপ্নের একটি বিশ্বকাপ ছিল সাকিবের জন্য, যা যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই ঈর্ষণীয়। ওই বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচ খেলে দুটি শতক আর পাঁচটি অর্ধশতকে ৯৬ গড়ে সাকিব সংগ্রহ করেছিলেন ৬০৬ রান! বল হাতেও তুলে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। দল ভালো করলে হয়তো সেবার টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারটিও বাগিয়ে নিতেন সাকিবই।

সব মিলিয়ে ভারত বিশ্বকাপ শেষে সাকিব আল হাসানের নামের পাশে ৩৬ ম্যাচে রান সংখ্যা ১৩৩২, উইকেট ৪৩টি। ব্যাটিং-বোলিংয়ে এমন পারদর্শিতা এর আগে দেখাতে পারেননি কেউই। কিংবদন্তি অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস কিংবা ইমরান খানরাও বিশ্বকাপের মঞ্চে পারেননি ব্যাট ও বল হাতে এভাবে নিজেদের মেলে ধরতে।

বিশ্বকাপের আগে এক সাক্ষাৎকারে সাকিব জানিয়েছিলেন, জাতীয় দলের হয়ে তিন ফরম্যাটে আর নিয়মিত দেখা যাবে না তাকে। বাংলাদেশ ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কোয়ালিফাই করতে পারলে সেটিই হবে ওয়ানডেতে তার শেষ টুর্নামেন্ট। অনেকব যদি-কিন্তুর মারপ্যাচে আটকে রয়েছে সেই যোগ্যতা। শেষ পর্যন্ত সেটি বাংলাদেশ অর্জন করতে না পারলে হয়তো আরও আগেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন সাকিব। তবে ২০২৭ বিশ্বকাপে তিনি থাকছেন না, সেটি নিশ্চিতই বলা চলে।

ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে সব্যসাচী সাকিব আল হাসান ক্রিকেটার পরিচয়ের বাইরেও নানা পরিচয়ে পরিচিত, মাঠে-মাঠের বাইরেও নানা বিতর্কে জড়িয়ে তার নাম। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে তার যে ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্ক, তার অনুপস্থিতি বাংলাদেশ দলের জন্য নিঃসন্দেহে হবে এক বড় শূন্যতা। ওয়ানডে বিশ্বকাপও নিশ্চয় করবে সময়ের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিবকে।

এক নজরে বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স

বিশ্বকাপ ম্যাচ রান সর্বোচ্চ রান ৫০/১০০ স্ট্রাইক রেট গড় উইকেট সেরা বোলিং ৪/৫ উইকেট
২০০৭ ২০২ ৫৭* ২/০ ৫৭.২২ ২৮.৮৬ ২/১২ ০/০
২০১১ ১৪২ ৫৫ ১/০ ৭১.০০ ২৩.৬৭ ২/২৮ ০/০
২০১৫ ১৯৬ ৬৩ ২/০ ৯৩.৭৮ ৩৯.২০ ৪/৫৫ ১/০
২০১৯ ৬০৬ ১২৪* ৫/২ ৯৬.০৩ ৮৬.৫৭ ১১ ৫/২৯ ০/১
২০২৩ ১৮৬ ৮২ ১/০ ৮২.৩০ ২৬.৫৭ ৩/৩০ ০/০
মোট ৩৭ ১৩৩২ ১২৪* ১১/২ ৮২.২৭ ৪১.৬৩ ৪৩ ৫/২৯ ১/১

 

য়ানডে বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র‍্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ।

সারাবাংলা/এসএস/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন