বিজ্ঞাপন

টুপ্লাসটু সংলাপের আগেই বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত!

November 10, 2023 | 12:12 pm

আতিকুল ইসলাম ইমন

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উচ্চপর্যায়ের কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা টুপ্লাসটু সংলাপে বসছে আজ শুক্রবারে (১০ নভেম্বর)। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন ভিসানীতিসহ অন্য বিষয়গুলোর কারণে এই সংলাপ ঘিরে ঢাকায় ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এজেন্ডায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের এই কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বার্ষিক টুপ্লাসটু সংলাপের ঠিক আগের দিন অবশ্য বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান অনেকটাই খোলাসা করে দিয়েছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। বাংলাদেশে বিরোধী দলীয় নেতাদের গ্রেফতার নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই দেশটির।

বৃহস্পতিবার এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি। একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভিশনের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ভারতের একজন সাংবাদিক উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ২৮ অক্টোবর বিরোধীদের মহাসমাবেশের পর নেতা-কর্মীদের ওপর ক্র্যাকডাউন শুরু হয়েছে এবং শীর্ষস্থানীয় নেতাদের জেলে পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ তুলে ধরে ওই সাংবাদিক ভারতের অবস্থান জানতে চান।

বিজ্ঞাপন

জবাবে সাংবাদিকের শব্দচয়নের ব্যাপারে আপত্তি করেন অরিন্দম বাগচী। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উত্তর দেওয়ার আগেই আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই, আপনি যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন সেগুলো আমার ভাষা নয়, ওগুলো আপনার। যেমন, ক্র্যাকডাউন বা বিরোধী নেতাদের জেলে ঢুকানো। এগুলো আপনার শব্দচয়ন ও ব্যাখ্যা। দয়া করে এগুলো আমার মুখে বসাবেন না।’

বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও শীর্ষ নেতাদের কারাগারে পাঠানো প্রসঙ্গে জবাবের শুরুতেই ভারতের অবস্থান এভাবে স্পষ্ট করেন অরিন্দম বাগচী। এরপর তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে আমরা সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি। একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যে ভিশন, তার প্রতিও আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’

বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দৃশ্যত দুই মেরুতে। ভারত মনে করে এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের মান নিয়ে খোলামেলাভাবে তাদের মত জানাচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট কাটাতে সংলাপ আয়োজনের তাগিদ দেওয়া, বিরোধীদের গ্রেফতারে উদ্বেগ প্রকাশসহ নানাভাবে যুক্ত থাকার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। গত কয়েক মাসে দেশটির একাধিক কূটনৈতিক ও পর্যবেক্ষক মিশন বাংলাদেশ সফর করেছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা যেকোনো এজেন্ডায় বাংলাদেশ সফরে এলেও নির্বাচনের বিষয়ে তাদের অবস্থান বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ওই বৈঠকেও বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নানা দিক আলোচিত হয়েছে। আলোচনা হয়েছে আসন্ন নির্বাচন নিয়েও। এর আগে বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভিসানীতি প্রয়োগেরও ঘোষণা দেয় স্টেট ডিপার্টমেন্ট।

তবে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ থাকলেও প্রতিবেশী ভারত অপেক্ষাকৃত নীরব। যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোতে এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া উচিত নয় যা দিল্লির জাতীয় স্বার্থের প্রতি বিরূপ প্রভাব ফেলে— এমন একটি অভিমত গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত জানিয়েছে বলে সে দেশের অনেক গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এর বাইরে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারতের মনোভাব খোলামেলা সামনে আসেনি। এবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীর মন্তব্যে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে সমান্তরাল নয় বলে আভাস মিলেছে।

টুপ্লাসটু সংলাপের এজেন্ডা, ঢাকার নজর

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উচ্চপর্যায়ের কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা ইস্যুতে বার্ষিক সংলাপ টুপ্লাসটু শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। আজ শুক্রবার নয়াদিল্লিতে টুপ্লাসটু পঞ্চম সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব আরও গভীর করা অন্যতম এজেন্ডা।

বিজ্ঞাপন

সংলাপে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এই সংলাপ প্রসঙ্গে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমান সংঘাতের বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে আলোচনা করবে। এটি টুপ্লাসটু মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলোর পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, রাশিয়া এবং ইউক্রেন নিয়েও আলোচনা করবে।

এই সংলাপ প্রসঙ্গে গত ১ নভেম্বর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সাংবাদিকদের বলেন, একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক সমর্থন করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে এই অঞ্চলে সহযোগিতার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে এজেন্ডায় রয়েছে। আমি মনে করি, চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সম্পর্কিত আলোচনা কীভাবে হচ্ছে— সেটি আমরা শুনতে আগ্রহী হব। অন্যদিকে, ভারতের কর্মকর্তারাও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং এপেক (এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনোমিক কো-অপারেশন) শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে ঘোষিত বৈঠক সম্পর্কে শুনতে খুব আগ্রহী হবেন।

দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপের এজেন্ডায় চীন প্রসঙ্গ রয়েছে। এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে দিল্লিতে আলোচনা করবে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র। অনির্ধারিত হলেও আলোচনায় বাংলাদেশ ও আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠতে পারে। বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হলে ভারতের চাওয়া একটি স্থিতিশীল ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক চাপের ব্যাপারে দিল্লি মতামত জানাতে পারে।

সারাবাংলা/আইই/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন