বিজ্ঞাপন

ছেলের হাতে নৌকার বৈঠা তুলে দিতে চান মোশাররফ

November 18, 2023 | 10:08 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রথমদিনে চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন অর্ধশতাধিক নেতা। তবে দলটির বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নিজের পরিবর্তে ছেলের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। সাতবারের সংসদ সদস্য মোশাররফ নির্বাচনী রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন বলে আলোচনা চলছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে প্রথমদিনে ১৪টি আসন থেকে মোট ৬৯ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, যার মধ্যে প্রায় প্রতিটি আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যরা আছেন। তবে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালীর একাংশ) ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসন থেকে কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ বোস্তামি)।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) থেকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এদিন সকালে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন নেতারা। এরপর বিক্রি কার্যক্রম উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন, প্রথমদিনে সারাদেশের বিভিন্ন আসনের জন্য এক হাজার ৬৪টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এক হাজার ৫০ জন। অনলাইনে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ১৪ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯৮ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনি রাজনীতি ছাড়ছেন মোশাররফ?

১৯৭০ সাল থেকে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসন থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এখনও তিনি ওই আসনের সংসদ সদস্য। শেখ হাসিনার দু’বারের শাসনামলে তিনি দু’দফায় মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের আওয়াম লীগের হাল ধরা অন্যতম নেতা মোশাররফ বর্তমানে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডে সদস্য।

মনোনয়ন পত্র বিক্রির প্রথমদিনে শনিবার সকালে মোশাররফ হোসেন যান বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। তবে নিজের জন্য মনোনয়ন পত্র না কিনে তিনি নিজের আসন মীরসরাইয়ে ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলের জন্য মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন। মোশাররফ নিজেই জানালেন, প্রায় ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম তিনি নিজের জন্য মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেননি।

বিজ্ঞাপন

সন্ধ্যায় টেলিফোনে সারাবাংলাকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি সাতবার এমপি। সত্তর সাল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছি। আমার মতো এতবারের এমপি চট্টগ্রামে আর কেউ নেই। আমার বয়স এখন ৮১ বছর। আর কত ! এবার আমি চিন্তা করলাম, নতুন মুখ আসুক। ব্যক্তিগতভাবে আমি আর নির্বাচনে দাঁড়াতে চাই না। তবে সামনে আরও সময় আছে, দেখা যাক কী হয় ! নির্বাচন না করলেও দলের সঙ্গে আছি, নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকব।’

আওয়ামী লীগের মধ্যেই আলোচনা আছে, মীরসরাইয়ের পরিবর্তে ফটিকছড়ি বা সীতাকুণ্ড থেকে দল মনোনয়ন দিলে মোশাররফ হোসেন লড়বেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি আর মনোনয়ন চাইবেন না।

মাহবুব রহমান রুহেল চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। তরুণ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী হিসেবে চট্টগ্রামে তার পরিচিতি আছে।

নগরে প্রার্থী হতে চান আ জ ম নাছির

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। স্বাভাবিকভাবেই সেবার তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন না। এবার তিনি মেয়র পদে নেই, নির্বাচন করতে চান চট্টগ্রাম মহানগরীতে।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া, চকবাজার), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, খুলশী ও হালিশহর) এবং চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনটি আসনের বর্তমান সাংসদেরা হলেন- শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মহিউদ্দিন বাচ্চু এবং এম এ লতিফ।

চট্টগ্রাম-৯ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নওফেল সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান। তিনি এখনও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। এম এ লতিফও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। তবে মহিউদ্দিন বাচ্চু প্রথমদিনেই মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, যিনি তিনবারের সংসদ সদস্য ডাক্তার আফছারুল আমীনের মৃত্যুর পর গত ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রত্যাশী অনেক

২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন দফায় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ বোস্তামি) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরীক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর তিনি মারা গেলে চলতি মেয়াদের প্রথম দফায় আসনটি শূন্য হয়।

২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। তিনি চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। ২৭ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ।

মেয়াদের শেষবেলার সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদসহ ১১ জন প্রথদিনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আছেন, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও আলোচিত। এ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, খোরশেদ আলম, মনসুর আলম, এটিএস আলী রিয়াজ খান রক্সি, জিন্নাত সোহানা চৌধুরী, মোহাম্মদ এমরান, জাবেদুল আযম মাসুদ, আরশেদুল আলম বাচ্চু, সাইফুল ইসলাম, কফিল উদ্দিন খান, নোমান আল মাহমুদ ও আব্দুল কাদের।

চট্টগ্রাম নগরকন্দ্রিক রাজনীতিতে জড়িত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু গেল উপ-নির্বাচনেও মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির পাশাপাশি ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আরশেদুল আলম বাচ্চু সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রয়োজন স্মার্ট তরুণ নেতৃত্ব। সেই বিবেচনায় আমি দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশী। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে আমরা মহিউদ্দিন ভাইয়ের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি। আমি বঙ্গবন্ধু আদর্শের কর্মী, জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী। আমি মহিউদ্দিন ভাইয়ের পরীক্ষিত কর্মী। আশা করি মনোনয়ন পাব।’

যারা মনোনয়ন ফরম নিলেন

চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে মাহবুব রহমান রুহেল, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মোহাম্মদ শাহজাহান, সাদাত আনোয়ার সাদী, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার, বেলাল মোহাম্মদ নূরী ও সাবরিনা চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে রাজীবুল আহসান, বর্তমান সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা, মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে সাবেক মহানগর পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া, পারভেজ উদ্দিন, নিছার উদ্দিন আহমেদ ও মোহাম্মদ ইমরান, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম, মোহাম্মদ শামীম, শাহজাহান চৌধুরী, মনজুরুল আলম চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, ইউনূস গণি চৌধুরী মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ বোস্তামি) আসনে খোরশেদ আলম, মনসুর আলম, এটিএস আলী রিয়াজ খান রক্সি, জিন্নাত সোহানা চৌধুরী, মোহাম্মদ এমরান, জাবেদুল আযম মাসুদ, আরশেদুল আলম বাচ্চু, সাইফুল ইসলাম, কফিল উদ্দিন খান, নোমান আল মাহমুদ, আব্দুল কাদের, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী, বাকলিয়া) আসনে শাহজাহান চৌধুরী, আমিনুল হক, শাহজাদা মোহাম্মদ ফৌজুল, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, শফিক আদনান, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, আ জ ম নাছির উদ্দীন, শফর আলী ও রাশেদুল হাসান, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, খুলশী ও হালিশহর) আসনে মহিউদ্দিন বাচ্চু, এমদাদুল ইসলাম, আ জ ম নাছির উদ্দীন, শফর আলী, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা) আসনে শেখ মোহাম্মদ ইসহাক, এনামুল হক, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আ জ ম নাছির উদ্দীন, শফর আলী, জিয়াউল হক সুমন, রাশেদুল হাসান মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, তসলিম উদ্দিন, আব্দুর রশিদ, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ, বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) : আফতাব মাহমুদ, বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, এম মাসুদ আলম চৌধুরী, ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমদ আসিফ, রফিকুল ইসলাম, নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে বর্তমান সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, সৈয়দ মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব, আরেফ উল হক, মুজিবুর রহমান চৌধুরী মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন