বিজ্ঞাপন

নৌকার বিপক্ষে আ.লীগ নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক

November 28, 2023 | 11:49 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে সব আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। যারা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন, তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতেও উৎসাহ দিয়েছে দলটি। তাতে মনোনয়নবঞ্চিতদের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন। অনেকেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। জমাও দিয়েছেন কেউ কেউ। বাকিরাও ৩০ নভেম্বরের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে দলীয় হাইকমান্ড ভোটে উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করতে দলের মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের প্রার্থী হতে বললেও সে ঘোষণা নিয়ে এখনো সংশয় কাটেনি সবার। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কৌশল আছে— দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমন ইঙ্গিত দিলে সে সংশয় আরও ঘনীভূত হয়েছে। সব আসনে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র হিসেবে পূর্ণ ছাড় দেওয়া হবে কি না— এমন জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই চলছে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদান কার্যক্রম।

দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিএনপির প্রত্যাখ্যান করা ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ আসনে সংসদ সদস্যরা জয় পান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এর পুনরাবৃত্তি চায় না আওয়ামী লীগ। তাই নৌকার প্রত্যাশ্যায় যারা দলের মনোনয়ন ফরম নিয়েছিলেন, তাদের সবাইকে কাজে লাগাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিলেন খোদ দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন- স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়টি ফ্রি স্টাইল হবে না: ওবায়দুল কাদের

বিজ্ঞাপন

এদিকে আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও তারা সবাই যে শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতীক পাবেন, তারও নিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। বলছেন, শেষ পর্যন্ত জোট শরিকদের সঙ্গে ভোটের আসন ভাগাভাগির সমীকরণে আওয়ামী লীগ যেতেও পারে। সেক্ষেত্রে ওই আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ নাও দিতে পারে আওয়ামী লীগ।

এরকম পরিস্থিতিতে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো তথ্য ও সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের ঘোষিত ২৯৮ আসনের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাদে প্রায় সব আসনেই মনোনয়নবঞ্চিত দলীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যদের প্রার্থী হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

বরিশাল-৫ আসনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। সাদিক বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- রাজশাহীর বাদ পড়া ‘হেভিওয়েট’রা আসছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মনোনয়ন না পাওয়া যে কেউ নির্বাচন করতে পারবে। দলের এই সিদ্ধান্ত জেনে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তো বটেই, সুশীল সমাজের নেতারাও সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রার্থী করার দাবি তুলেছেন। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। মনোনয়ন পেয়েছেন বিপ্লব হাসান পলাশ। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন প্রতিমন্ত্রী জাকির। শুধু তাই নয়, তার ছেলে সাফায়াত বিন জাকিরের জন্যও নেওয়া হয়েছে মনোনয়নপত্র।

প্রতিমন্ত্রীর ছেলে সাফায়াত বিন জাকির বলেন, ‘এলাকাবাসী আমাদের চাচ্ছে। এ জন্য মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘রাজশাহী-১’ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন মাহিয়া মাহি

যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নাসির উদ্দিনকে বাদ দিয়ে রাজনীতির মাঠে রাজনীতিতে অপরিচিত মুখ ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিনকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ডা. তুহিন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের জামাতা।

এ আসনে এরই মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনিরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষণা করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তিনি আগামী ৩০ নভেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দেবেন।

সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার অভিপ্রায়ে স্থানীয় জনপ্রিয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার নিদের্শনা দিয়েছেন। তাই স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেব। আমি ও আমার পরিবার আজীবন আওয়ামী লীগের প্রতি নিবেদিত। তাই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমার পাশে জনগণের ভালোবাসা আছে, দলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা আছে।

আরও পড়ুন- স্বতন্ত্রের ফরম নিলেন গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও তার ছেলে

বগুড়া-৫ (ধুনট-শেরপুর) আসনে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়া বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের ছেলে আসিব ইকবাল সনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ওই আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুকে।

গাজীপুর-৫ (সদর-কালীগঞ্জ) আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান। তিনি এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এর আগে আখতারুজ্জামান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া ১৯৭৯-৮০ সালে ডাকসুর জিএস এবং ১৯৮২-৮৪ সালে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

কক্সবাজার-১ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত সংসদ সদস্য জাফর আলমও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ কে আজাদ। নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন সেলিম এবার দলের মনোনয়ন পাননি। তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন।

আরও পড়ুন- স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে পঞ্চমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মুন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী। আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়াও এই আসন থেকে ভোট করবেন বলে জানিয়েছেন। চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহীও এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

রাজশাহী-৪ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ। মনোনয়নবঞ্চিত সংসদ সদস্য এনামুল হকও ফেসবুকে ভিডিওবার্তায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রাজশাহী-৫ আসনে সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা এবার নৌকা পেয়েছেন। এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

রাজশাহী-৬ আসনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম চতুর্থবার মনোনয়ন পেয়েছেন। সেখানে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন আসনের সাবেক এমপি রায়হানুল হক। এর আগে ১৯৯৯ সালের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন রায়হানুল।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে। নির্বাচনে যে কেউ প্রার্থী হতে পারে। কেউ নির্বাচনে করে হারলে মেনে নিতে হবে। নির্বাচন শতভাগ ফেয়ার অ্যান্ড ফ্রি হবে। জয়-পরাজয় প্রার্থীর জনপ্রিয়তার ওপর নির্ভর করবে। কারা কীভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, সেটার জন্য আপাতত অপেক্ষা করতে হবে।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন