বিজ্ঞাপন

প্রচার শেষেও রূপগঞ্জে দিনভর চায়ের কাপে ঝড় তুলছে নৌকা

January 5, 2024 | 10:40 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

রূপগঞ্জ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি)। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ দিন সকাল ৮টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় নির্বাচনি প্রচার। প্রার্থীরা ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের নানারকম কাজের পাশাপাশি ভোটারদের কেন্দ্রে আনার পরিকল্পনা নিয়ে। আর নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন স্থানে, চায়ের দোকানে ভোটাররা ব্যস্ত নিজ নিজ এলাকার কোনো প্রার্থী সম্ভাব্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হতে যাচ্ছে সেই আলাপে।

বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনও এর ব্যতিক্রম নয়। শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে কিন্তু বিকেলে চায়ের দোকানের আড্ডায় ভোটারদের আলোচনায় বারবার উঠে আসছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আলাপ। এই আসনে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটারদের আলাপে উঠে আসছে ৩ জন প্রার্থীর নাম। আর এই তিনজনের মাঝে ভোটাররা এগিয়ে রাখছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীকে (বীরপ্রতীক)। বাকি দু’জন প্রার্থী হলেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার (সোনালী আঁশ মার্কা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভুইঁয়া (কেটলি)।

রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার খাঁ পাড়া এলাকায় পাশাপাশি কয়েকটি চায়ের দোকানে ভোটারদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।

শামসুল আলম নামে এক চা বিক্রেতা বলেন, ‘সকালে দোকান খোলার পর থেকে কাস্টমারদের সবার মুখেই নির্বাচনের আলাপ। জুম্মার টাইমে দোকান বন্ধ করেছিলাম। এরপরে আবার বিকেলে খোলার পরে কাস্টমার যারাই আসে সবাই জিজ্ঞেস করছে, ভোটের অবস্থা কী? ছুটি হওয়ায় ঢাকা থেকেও অনেকে বাড়ি ফিরে এসেছেন। তারাও যোগ দিচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘এই এলাকায় একটা সময় রাস্তাঘাট তেমন ভালো ছিল না। তবে গাজী সাহেব (গোলাম দস্তগীর গাজী) এমপি হওয়ার পরে অবস্থা পাল্টেছে। আর তাই সবার মুখেই খালি শুনি নৌকা মার্কার জয়ের আলাপ। তৈমুর আলম কিছু ভোট পেতে পারে আইনজীবী হিসেবে, কিন্তু গাজীর সামনে সমস্য হলো শাহজাহান ভুঁইয়া। কারণ আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় সেও কিছু ভোট কাটতে পারে। তবে সেটা গোলাম দস্তগীর গাজীর জয়ের পথে সমস্যা হওয়ার কথা না।’

রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া স্কুলের পাশেই ইদ্রিস আলমের চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্থানীয়রা। জুয়েল চৌধুরী নামে এক তরুণ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে পরিমাণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন হয়েছে গোলাম দস্তগীর গাজীর আমলে তা অন্য কেউ করতে পারে নাই। আর তাই শাহজাহান ভুঁইয়া মুড়াপাড়ার স্থানীয় হলেও উন্নয়নের কারণে অনেক বেশি ভোট পাবে গোলাম দস্তগীর গাজী। এর পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হওয়ার নৌকা মার্কার জয় এখানে খুব একটা বেশি কষ্টকর হওয়ার কথা না।’

বিজ্ঞাপন

তার মুখের কথা অনেকটা কেড়ে নিয়েই ইদ্রিস আলম বলেন, ‘রাস্তাঘাটও উন্নয়ন হয়েছে অনেক গাজীর আমলে। আর সেগুলোর কারণে গোলাম দস্তগীর গাজী একটা আলাদা ভোট ব্যাংক আছে। এর সঙ্গে নৌকা মার্কার স্থায়ী ভোটগুলো যুক্ত হলে ব্যবধান অনেক বেশি হয়ে যাবে অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে। আর তাই নৌকা মার্কা জিতে যাবে বলেই সবার ধারণা।’

সাঁঝের বেলায় গাজী সেতুতে অনেকেই গেছেন ঘোরাঘুরির জন্য। সেখানেই বাদাম বিক্রি করছিলেন খোকন মিয়া। তিনি বলেন, ‘ভোটে নৌকা মার্কার প্রার্থীর সঙ্গে অন্যরা এলে তেমন শক্ত না। তবে আপনারা মিডিয়া তো রীতিমতো যুদ্ধ লাগাইয়া দিছেন, মাঠে কিন্তু আসলে তেমন শক্ত কিছু নাই। উন্নয়নের কারণে গাজী সাব অনেক আগাইয়া আছে ভোটের মাঠে। তবে শাহজাহান ভুঁইয়া প্রচুর টাকা ঢালতেছে। আর তাই শেষ মুহূর্তে কিছু ভোট হয়তো বা তিনি যোগাড় করতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু সেই ভোটগুলো নৌকার পালে ছিদ্র করতে পারবে না। কিছুটা ভাটার কারণে নৌকার গতি কমাতে পারে কিন্তু উন্নয়নের জোয়ারেই তো জিতে যাবে গোলাম দস্তগীর গাজী। এই যে দেখেন গাজী সেতুটা দেখার জন্য সবাই আসছে সেটা কী হতো গোলাম দস্তগীর গাজী না থাকলে?’

রূপসী স্ট্যান্ড এলাকা থেকে শুরু করে তারাবো, ভুলতা ও অন্যান্য এলাকার ভোটারদের আলাপেও উঠে এসেছে প্রায় একই ধরণের কথা।

বিজ্ঞাপন

ভোটাররা বলছেন, ‘শাহজাহান ভুঁইয়া দীর্ঘদিন রাজনীতি করলেও তার নিজস্ব তেমন কিছু নাই যা দিয়ে এলাকার উন্নয়নের তিনি ভূমিকা রাখবেন। তবে গোলাম দস্তগীর গাজী ইতোমধ্যেই এলাকার উন্নয়নের ভূমিকা রেখেছেন যা দৃশ্যমান। আর তাই নৌকা মার্কার জয় নিয়ে খুব একটা বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে শাহজাহান ভুঁইয়ার পেশিশক্তি বেশি আর তাই ভোট কেন্দ্রে কোনো গোলযোগ হলে তার সুবিধা কেটলির পক্ষে যাবে। কিন্তু এগুলোর কোনোটাই না থাকায় তৈমুর আলম খন্দকারকে নিয়ে খুব একটা বেশি ভাবনা কেউ মাথায়ও নিচ্ছে না।’

উল্লেখ্য, রূপগঞ্জে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা আছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১৯জন ও নারী ভোটার সংখ্যা আছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯১জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছে ২ জন। বিগত নির্বাচনে এই আসনে ভোটার সংখ্যা ছিলো ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯০জন ভোটার। এবার ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৩৬ হাজার ২২২ জন হয়েছে।

সারাবাংলা/এসবি/এমও

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন