January 15, 2024 | 10:08 pm
রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের দিন থেকে গত পাঁচ দিনে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারিতে বেড়েছে। ধান-চালের পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও দামের এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে পাইকারি বাজারে অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, হাল আমলে চালের ব্যবসায় যোগ দেওয়া দেশের কিছু করপোরেট হাউজ, চালকল মালিক ও আড়তদাররা মিলে ধান-চাল মজুত শুরু করেছে। এতে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়ে দাম বাড়ছে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা বাড়তি দামে বাজারে চাল সরবরাহ করবে।
চট্টগ্রাম নগরীতে চালের পাইকারি বাজার আছে দুটি— চাক্তাই ও পাহাড়তলী। একাধিক সূত্রে তথ্য সংগ্রহ করে জানা গেছে, নির্বাচনের আগের দিন অর্থাৎ গত ৬ জানুয়ারি পাইকারি বাজারে সিদ্ধ চালের মধ্যে প্রতি বস্তা জিরাশাইল ছিল ৩১৫০ টাকা, পাইজাম ২৫০০ টাকা, নূরজাহান ২৩০০ টাকা, মিনিকেট ২৩৫০ টাকা, ভিয়েতনামের বেতি ২২৫০ টাকা ও দেশি বেতি ২৪০০ টাকা।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) পাহাড়তলী পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বস্তা জিরাশাইল ৩৩০০ টাকা, পাইজাম ২৬৫০ টাকা, নূরজাহান ২৫০০ টাকা, মিনিকেট ২৭০০ টাকা, ভিয়েতনামের বেতি ২৫০০ টাকা ও দেশি বেতি ২৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আতপ চালের মধ্যে কাটারি প্রতিবস্তায় ৪০০ টাকা বেড়ে ৩৬০০ টাকা, মিনিকেট ৩০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার টাকা, নাজিরশাইল ২০০ টাকা বেড়ে ৩৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনিগুড়া চালের দামও বস্তায় ১০০০ টাকা বেড়ে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সোমবার পাহাড়তলী বাজার ঘুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিমও বলছে, প্রতিবস্তা চাল পাইকারিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজার ঘুরে আমরা জানতে পেরেছি, অনেকের ধান-চালের ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স বা অনুমতি নেই। কিন্তু তারাও সিন্ডিকেটের অংশ হয়ে ধান-চাল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদার ও চালকল মালিকরা বাজারে চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। চাহিদার চেয়ে জোগান কম হওয়ায় চালের দাম বাড়ছে। আমরা এসব বিষয় নজরদারি শুরু করেছি।’
‘চট্টগ্রামে তো চালের আড়ত নেই। কুষ্টিয়া, নওগাঁ, দিনাজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ— এসব এলাকার আড়ত থেকে চাল আসে। আড়ত থেকে যেন চালের সরবরাহটা স্বাভাবিক থাকে, সেজন্য আমাদের জেলা প্রশাসক স্যার সংশ্লিষ্ট ডিসি স্যারদের টেলিফোন করে অনুরোধ করেছেন। আশা করছি, দ্রুতই চালের বাজার স্বাভাবিক হবে,’— বলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক।
জানা গেছে, এ মুহূর্তে সরকারি গুদামে ১৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৩৩ মেট্রিক টন চাল ও ১৬ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন ধান মজুত আছে।
পাহাড়তলীর মেসার্স আবদুল মান্নান সওদাগর অ্যান্ড সন্সের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সরকারের কাছে চালের যে মজুত আছে, তার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি মজুত আছে চালকলগুলোতে। সেখানে হাত দিলে বাজারে সংকট ও দাম বাড়ার আসল কারণ বের হবে।’
একই অভিযোগ তুলে চালের আড়তে অভিযান চালানোর দাবি জানিয়েছেন পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহসভাপতি জাফর আলম।
পাহাড়তলী বাজারের মেসার্স আজমির স্টোরের মালিক এস এম নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আড়ত থেকে বাজারে প্রতিদিন যে পরিমাণ চাল আসে, এখন সেভাবে আসছে না। আমাদের ধারণা, এর পেছনে করপোরেট হাউজগুলো জড়িত। কারণ, এ মুহূর্তে তো চালের কোনো সংকট নেই। করপোরেট হাউজগুলো চাল মজুত করে রেখেছে। পরে দাম বাড়লে আস্তে আস্তে ছাড়বে।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিলার ও আড়তদারেরা মিলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে মনিটরিং শুরু হয়েছে। চালের কৃত্রিম সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছি। এতে উৎপাদনশীল অঞ্চলগুলোতে চালকল ও আড়তে মজুত এবং অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বেনামে চাল মজুতের বিষয়টি খতিয়ে দেখা যাবে।’
এদিকে পাহাড়তলী বাজারে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টাঙানো চালের মূল্যতালিকা ও বিক্রয়মূল্যে হেরফের পেয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক ও প্রতীক দত্ত। সেখানে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। একটি আড়তকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং সব আড়তকে মজুতের বিষয়ে সতর্ক করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর