বিজ্ঞাপন

আশ্রয়শিবির থেকে এনে জয়পুরহাটে রোহিঙ্গা নারীর বিয়ে

January 16, 2024 | 3:47 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

জয়পুরহাট: সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হন সবুজ মিয়া নামে এক ব্যক্তি। সেই কথা মতো ওই নারীর মা সেই টাকা দিয়ে তা নিয়ে পালিয়ে যান সবুজ। পরে আয়নাল হোসেন নামে এক যুবকের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে হয়েছে। বর আয়নাল রোহিঙ্গা নারীর মা আমেনা বেগমের ধর্ম ভাই হারুনুর রশিদের ফুফাত ভাই। এরপর থেকে ওই রোহিঙ্গা নারী তার স্বামীর বাড়িতে বসবাস করছেন।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার লকইর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজারের উখিয়া আশ্রয়শিবির থেকে আসা ওই নারীর নাম রুমা খাতুন।

এ খবর এলাকার লোকজন জানলেও তা ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতে বানদীঘি গ্রামে গেলেও তাদের আটক না করে সেখান থেকে ফিরে আসেন। গত ১১ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাতে উপজেলার বানদীঘি গ্রামে মামুনুর রশিদের বাড়িতে গোপনে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়।

সরেজমিনে লকইর গ্রামে আয়নালের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, প্রায় বছরখানেক আগে বানদীঘি গ্রামে শিশু ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি হারুনুর রশিদ ও সবুজ মিয়া গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে কক্সবাজারের রামু উপজেলাতে যান। সেখানে আয়েশা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। সে সূত্র ধরে তারা দু’জন যাতায়াত করতেন ওই নারীর বাড়িতে। আয়েশা বেগমের ঘরে ছিল ২১ বছর বয়সের মেয়ে রুমা খাতুন। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার বিষয়ে হারুনুর রশিদ ও সবুজের সঙ্গে আলোচনা হয়। এ সময় সবুজের ছেলের সঙ্গে সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে রুমার বিয়ে ঠিক হয়। কথামতো রুমার মা সাড়ে তিন লাখ টাকাও দেন সবুজ মিয়ার হাতে।

বিজ্ঞাপন

আরও জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি রুমাকে নিয়ে তাদের (হারুনুর ও সবুজ) সঙ্গে বানদীঘি গ্রামে আসেন আয়েশা বেগম। ওঠেন হারুনুর রশিদের বাড়িতে। এরপর টাকা নিয়ে সবুজ পালিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে বিপদে পড়েন হারুনুর। একপর্যায়ে সবুজকে না পেয়ে আয়েশা বেগম ও তার মেয়ে রুমাকে একই গ্রামে ছোট ভাই মামুনুর রশিদের বাড়িতে রাখেন হারুনুর। কাবিনের সময় জন্ম সনদের প্রয়োজন হয়। তাই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে রুমার নামে ভুয়া জন্ম সনদ তৈরি করেন। এরপর একই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের লকইর গ্রামে তার ফুফাত ভাই আব্দুল মোমেনের ছেলে আয়নাল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দেন হারুনুর।

রুমার মা আয়েশা বেগম বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা এটা সত্য। তবে আমাদের ছেলে-মেয়ের কি বিয়ে হবে না? হারুনুর আমার ধর্ম ভাই। সে সুবাদে সবুজের ছেলের সঙ্গে আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে এসেছি। বিয়ে বাবদ সবুজকে সাড়ে তিন লাখ টাকাও দিয়েছি। এখানে আসার পর আমাদের ফেলে সবুজ পালিয়ে গেছে। এখন বাধ্য হয়ে ধর্ম ভাই হারুনুর আমার মেয়েকে তার ফুফাত ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। এতে আপনাদের অসুবিধা কোথায়?’

জন্ম সনদ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যা করার সবকিছুই হারুনুর রশিদ করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

রুমা বলেন, ‘আমার কি অপরাধ? মা ও হারুন মামা আমাকে এখানে এনে বিয়ে দিয়েছেন। মা সবুজ মামাকে বিয়ের জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকাও দিয়েছেন। তিনি আমাদের রেখে পালিয়ে গেছেন। হারুন মামা স্থানীয় এক নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আমাদের বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করেছেন। এখন আমি আয়নালের সঙ্গে ঘর সংসার করছি।’

রুমা আরও বলেন, ‘আমার মতো আরও তিন থেকে চারজন রোহিঙ্গা মেয়ের বিয়ে হয়েছে এই জয়পুরহাটে, কেন আপনারা শুধু আমার দোষ ধরছেন?’

বর আয়নাল হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা মেয়ে জেনেই বিয়ে করেছি। তবে আইন অনুযায়ী যে রোহিঙ্গা মেয়েকে বিয়ে করা যাবে না, তা জানা ছিল না। যা হবার তাতো হয়েই গেছে। এখন করার কি আছে আপনারাই বলেন।’

হারুনুর রশিদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা হয়েছে তাতে কি হয়েছে? আমি ওর সকল কাগজপত্র ঠিক করে প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই এ বিয়ে দিয়েছি। এখন যা হবার তাই হবে।’ নিকাহ রেজিস্ট্রারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম-ঠিকানা কিছুই বলা যাবে না।’

বিজ্ঞাপন

আয়নালের চাচা ও সাবেক ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান বলেন, ‘বলা নেই কওয়া নেই, গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে আয়নাল বিয়ে করে বউসহ বাড়িতে আসে। তাতেই আমার সন্দেহ হয় যে, আয়নাল কোথায় বিয়ে করল। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে রোহিঙ্গা এক মেয়েকে বিয়ে করেছে।’

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জজ কোটের আইনজীবী রায়হান আলী বলেন, ফরেইনার্স অ্যাক্ট অনুসারে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে পারে না। এ ছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে রোহিঙ্গাদের বিয়ে করা যাবে না। এ ঘটনায় তারা দুটি অপরাধ করেছেন। ওই মেয়েকে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে নিয়ে এসেছেন। আবার নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করেছেন। সরকার দয়া করে আশ্রয় দিয়েছে বলে তারা এ দেশের আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করার চিন্তাভাবনায় রয়েছেন। এখনই রোধ করতে হবে।’

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, ‘জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। সেখানে পুলিশ পৌছার আগে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। মেয়েটি রোহিঙ্গা কি না তা পুলিশের জানা নেই।’

সারাবাংলা/এসকে/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন