বিজ্ঞাপন

সীমান্তে আহত আরও ৫, রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা প্রতিহত

February 7, 2024 | 11:17 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

কক্সবাজার: মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গেলালাবারুদের শব্দে প্রকম্পিত সীমান্তবর্তী এলাকায়। মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। মার্টর সেল ও গুলি এসে পড়েছে বসতঘরে। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী ১৮০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষের পর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যসহ ২৬৪ জন পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে এসেছেন। তারা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হেফাজতে রয়েছেন। এছাড়া ৬৫ জন রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা প্রতিহত করেছে বিজিবি। সীমান্তে সর্তক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি’র টহল দল।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবন জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু-ঢেকুবনিয়া ও কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী থেকে টেকনাফের হ্নীলা পর্যন্ত এখনো শুনা যাচ্ছে মর্টার শেল আর গুলির শব্দ। মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে সীমান্তে এপারে বসত ঘরে। গত সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত সীমান্তের ২টি বসত ঘরে মর্টার শেল এবং ৫টি ঘরে গুলি এসে আঘাত হেনেছে। মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন বাংলাদেশি।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীর দেওয়া তথ্যমতে, মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে গতকাল মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন থেকে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পাঁচজন নাগরিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঘুমধুম সীমান্তে একজন, উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতরা হলেন— পালংখালী ইউনিয়নের নলবনিয়া এলাকার আয়ুবুল ইসলাম, রহমতেরবিল এলাকার আনোয়ার হোসেন, পুটিবনিয়া এলাকার মোবারক হোসেন ও মো. কাল। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আজকে টানা ৫-৬দিন ধরে সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছে এলাকাবাসী। তুমব্রু পশ্চিমকুল পাহাড় পাড়া থেকে আশ্রয় কেন্দ্র উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় ওপার থেকে গুলি এসে আহত হন মো. সৈয়দ আলম নামের একজন। তিনি তুমব্রু পশ্চিমকুল পাহাড় পাড়ানিবাসী কাদের হোসেনের ছেলে। এছাড়া সীমান্তের ঘুমধুমের নজরুল ইসলামের বাড়ি, রহমতবিল সংলগ্ন অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নানের বাড়িসহ ৫টি বাড়িতে গুলির আঘাত লেগেছে।

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন। পরিদর্শন শেষে ডিসি শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, ঘুমধুম সীমান্তের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সীমান্ত এলাকার ২৪০ পরিবারের লোকজন ঝুঁকি রয়েছেন। এর মধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যান তাদের নিরাপদে সরে যেতে সহযোগিতা করছেন। ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী ১৫০ পরিবার নিজ উদ্যোগে নিকট স্বজনদের বাড়ি চলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। জলপাইতলী এলাকা থেকে ৩০ পরিবারেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার ঝুঁকি মাথায় রেখে দুটি স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে অন্যান্যরাও যেন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এটা প্রশাসনের পক্ষে অনুরোধ। সার্বিক বিষয়ে প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

সীমান্তের ওপার থেকে ছুটে আসা বুলেট ও বোমার অংশে তাৎক্ষণিকভাবে হাত না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ডিসি শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। এ সময় গত সোমবার মিয়ানমার থেকে উড়ে আসা মর্টারশেল বিস্ফোরণে নিহত হোসনে আরা বেগমের বাড়িতে যান এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিয়ে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন তিনি। বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেন, জেলা প্রশাসন ও বিজিবি’র সঙ্গে পুলিশও সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানিয়েছেন, মিয়ানমারে সংঘাত বেড়েছে। মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে সীমান্তের এপারে বসত ঘরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার নিদের্শনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মিয়ানমার থেকে এখন পর্যন্ত পালিয়ে আসা ২৬৪ জন বিজিবি’র হেফাজতে রয়েছেন। এর মধ্যে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস কর্মী ও আহত সাধারণ নাগরিকরা রয়েছেন। বিজিবি’র সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, হেফাজতে থাকা ২৬৪ জনের মধ্যে বিজিপি, সেনাসদস্য’সহ অন্যান্যরাও রয়েছেন।

বিজিবি’র অপর একটি সূত্র জানায়, ২৬৪ জনের মধ্যে মিয়ানমার বিজিপি’র সদস্য ২২২ জন, সেনা সদস্য ২ জন, সিআইডি ৪ জন, লোকাল পুলিশ ৫ জন, স্পেশাল ব্রাঞ্চের ৯ জন, ইমিগ্রেশন বিভাগের ২০, অসামরিক ২ জন রয়েছেন। আশ্রয় নেওয়া বিজিপি’র সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আহত রয়েছেন। তাদের বিজিবি’র তত্বাবধানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জনকে গত সোমবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আশিকুর রহমান।

এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৬৫ জন রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকাকে প্রতিহত করেছেন বিজিবির সদস্যরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টায় টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার দমদমিয়া নাফনদী জিরো লাইনে এ ঘটনা ঘটে। টেকনাফ-২ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সীমান্তে সর্তক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

সারাবাংলা/ওএফএইচ/এনএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন