বিজ্ঞাপন

‘মানুষকে সুন্দর জীবন দিয়ে অপকর্মের জবাব দেয় আ.লীগ’

February 14, 2024 | 4:38 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের অপকর্মের জবাব দিয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলন-সংগ্রাম করতে দলের অনেক নারী নেতাকর্মী বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংগ্রাম-আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের অনেকে নির্যাতিত হয়েছেন। আমাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকে নির্যাতিত হয়েছেন। বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার হয়েছেন অনেক মা-বোন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমরা দেশের সার্বিক উন্নয়ন করে জবাব দেই। জবাব দেই দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে। মানুষকে একটা সুন্দর জীবন উপহার দিয়েই আমরা ওদের অপকর্মের জবাব দিয়ে থাকি।’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমারা নির্যাতিতদের সব সময় মূল্যায়ন করি। পর্যায়ক্রমে সবাইকে কোনো না কোনো জায়গায় স্থান করে দেই। সাংগঠনিকভাবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রেও যাতে আমাদের মেয়েরা স্থান পায়, সেই ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি। তবে যখন নির্বাচিত করব তখন শুধু এক জায়গায় না, সারাদেশের প্রত্যেক বিভাগ থেকেই প্রতিনিধি দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। সেই কঠিন কাজটাই আমাদের করতে হবে। ১৯৯৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বহু নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলেছি। তাদের জাতীয় সংসদে নিয়ে এসেছি। সেভাবে আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, জ্বালাও-পোড়াও ও অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাক্ষী দিতে হবে। তারা যাতে উপযুক্ত শাস্তি পায় সেই ব্যাপারে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আবেদনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে আওয়ামী লীগের ফান্ডে অনেক টাকা এসেছে। সেজন্য বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একটা ফিক্সড ডিপোজিট করে ওখান থেকে পাওয়া লভ্যাংশ পার্টির কাজে লাগবে। আমাদের অনেক দুস্থ মানুষকে সহযোগিতা করতে পারব।’

মনোনয়ন না পাওয়া নেত্রীদের উল্লেখ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নমিনেশন দেব। কেউ পাবেন, কেউ পাবেন না। সেজন্য মন খারাপ করার কিছু নেই। এবার না হলে আগামীতে হবে। কথায় আছে, একবার না পারিলে দেখ শতবার।’

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতির কথার পরিপ্রেক্ষিতে গণভবনে উপস্থিত এক নেত্রী কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন। তাকে থামিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে জবরদস্তি করে কিছু হয় না, গলাবাজি করেও হয় না— এটা মাথায় রাখতে হবে। তুমি একাই নির্যাতিত না, আরও বহু নির্যাতিত আছে। সেটা মাথায় রেখে চলবা।’

তিনি বলেন, ‘কতজনের বাবাকে ১৯৭৩ সালে গুলি করে মেরেছে। কি কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের জীবন কাটাতে হয়েছে ১৯৭৫ সালের পর, তা আমি জানি, তোমরা জানো না। আমাকে সেসব খবর নিতে হয়। বহু পরিবারের মেয়েদের তুলে এনেছি। তারা হারিয়ে যাচ্ছিল রাজনীতি থেকে, হারিয়ে যাচ্ছিল ইতিহাস থেকে। কষ্ট জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করে এই দেশ স্বাধীন করেও তারা কিছু পায়নি। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আজকে সুযোগ এসেছে। তাদের মূল্যায়ন করি, এটা মাথায় রাখতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের কথা ভুললে চলবে না। ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যে গোয়েন্দা প্রতিবেদন হয়েছে তা প্রকাশ করেছি। ওটা পড়ে দেখলে অনেক নাম পাবে। তারা দিনের পর দিন কত অত্যাচার সহ্য করেছে। আর তাদের পরিবার? বাবা জেলে গেলে একটা পরিবারের কি অবস্থা হয় তা আমরা জানি। তোমরাও জানো, যারা রাস্তায় কাজ করছো। কাজেই সেভাবে চিন্তা করতে হবে। আর এক জায়গায় না হলে অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করতে পারব।’

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাব। ১ হাজার ৫৫৩ মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাই প্রমাণ করে নারী জাগরণ ঘটেছে। তারাও এগিয়ে এসেছে। তবে এতো প্রার্থীর মধ্যে ৪৮ জনকে বেছে নেওয়া কঠিন কাজ। আপনাদের (বাছাই করতে) দিলে তা করতে পারবেন কি?’

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালে দেশের ফেরার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দেশে ফিরে আমি পেয়েছিলাম সারি সারি কবর। সেই কবরের মাটি ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এ স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। এ স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেব না।’

তিনি বলেন, ‘আমার যাত্রাপথ এত সহজ ছিল না। নানা ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছিল, এখনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল জনসভায় বলেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার। দেশের জনগণই আমার আপনজন। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যেভাবে আমার বাবা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, যেভাবে আমার মা-ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন। আমিও বুকের রক্ত ঢেলে দেব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার চলার পথে প্রতি পদে পদে বাধা। এখনো মনে পড়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আমাদের কতজন জীবন দিয়েছেন। কত রকম অত্যাচার হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেই, সংগ্রাম করে আমরা ক্ষমতায় ফিরতে পেরেছি। কোনো জায়গা থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমাদের একমাত্র শক্তি মানুষের সমর্থন। মানুষের ভালোবাসাই হলো আমাদের প্রেরণা।’

সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্যের জন্য নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশায় ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন স্তরের নেত্রী ও পেশাজীবী মিলে ১ হাজার ‍৫৪৯ জন ফরম সংগ্রহ করেন। আওয়ামী লীগের দফতর থেকে জানানো হয়, দলটির তহবিলে মহিলা সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি বাবদ ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হয়েছে। এবার সংরক্ষিত আসনে দলের প্রতিটি মনোনয়ন ফরমের মূল্য ৫০ হাজার টাকা, যা একাদশ জাতীয় সংসদের ক্ষেত্রে ছিল ৩০ হাজার টাকা।

এবার আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের অংশের নারী প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার উপর ন্যস্ত করেছেন। তবে জাতীয় পার্টি তাদের ১১টি আসনে এককভাবে নির্বাচন করবে। তাই আইন অনুযায়ী জাতীয় পার্টি ২টি আসন এবং আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র ও তাদের ১৪ দলীয় জোট মিলিয়ে মোট ৪৮টি আসনে মনোনয়ন প্রদান করতে পারবে।

এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। পরে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য মনোনীত করতে বোর্ড সভায় বসে।

সারাবাংলা/এনআর/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন