বিজ্ঞাপন

এক কেজি খেজুরে ১৩০০ টাকা লাভ!

March 13, 2024 | 7:45 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীতে আমদানি করা খেজুর কেজিপ্রতি ১৩০০ টাকা লাভে বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসন। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া আরেকটি হিমাগারে মজুত প্রায় ১০০ মেট্রিকটন প্যাকেটজাত খেজুর সাতদিনের মধ্যে বাজারে সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে নগরীর ফলমণ্ডিতে খেজুরের বাজারে অভিযান করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত, যিনি তিনদিন আগে খাতুনগঞ্জে চিনি-এলাচের বাজারে অভিযান চালিয়ে আলোচনায় এসেছেন।

অভিযানে গিয়ে জেলা প্রশাসনের টিম আলী জেনারেল স্টোর নামে এক আমদানিকারকের কাছে থাকা খেজুরের মজুত এবং আমদানিমূল্য ও বিক্রয়মূল্যের রশিদ যাচাই-বাছাই করেন। দেখা যায়, একবছর আগে ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ এ আমদানিকারক ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় এক মেট্রিকটন মায়াবী মাবরুম খেজুর আমদানি করেছেন। এতে প্রতি কেজি খেজুরের দাম পড়েছে ২৮৫০ টাকা।

কিন্তু গত ১০ মার্চে বিক্রির নথিতে দেখা যায়, মিজান এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান তার কাছ থেকে প্রতি কেজি খেজুর বিক্রির জন্য কিনেছেন ৪১৫০ টাকায়। আমদানিমূল্য ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে তফাৎ ১৩০০ টাকা।

বিজ্ঞাপন

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি বা ক্রয়মূল্যের সঙ্গে যদি ২০ শতাংশ খরচ ও মুনাফা ধরা হয়, তা-ও প্রতিকেজি ২৮৫০ টাকার খেজুর ৪১৫০ টাকায় বিক্রির কোনো যুক্তি নেই। এত বাড়তি দামে খেজুর বিক্রির কোনো সঠিক কারণও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আমাদের জানাতে পারেনি। এজন্য আলী জেনারেল স্টোরকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া কেনা-বেচার রশিদ ও মূল্যতালিকা সংরক্ষণ না করায় সাফা মারওয়া ড্রাই ফ্রুটসকে ৫ হাজার এবং আরোবা এন্টারপ্রাইজকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর জেলা প্রশাসনের টিম ফলমণ্ডিতে ইস্ট-এশিয়াটিক কোল্ড স্টোরেজ নামে একটি হিমাগারে অভিযান চালায়। সেখানে ১০০ মেট্রিকটন খেজুর মজুত পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, আল্লাহর রহমত ট্রেডার্স নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সেখানে সিংহভাগ খেজুর মজুত রেখেছেন। আরও ৩-৪টি প্রতিষ্ঠান ২০০-৩০০ কার্টন করে খেজুর মজুত রেখেছে। সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে সাতদিনের মধ্যে তাদের খেজুর বাজারে সরবরাহের নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সাতদিন পর ওই হিমাগারে আবারও অভিযান চালানো হবে। এসময়ের মধ্যে হিমাগার খালি না করলে অর্থাৎ সব খেজুর বাজারে ছেড়ে না দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তখন মজুত অবস্থায় খেজুর পাওয়া গেলে সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে।

এর আগে, গত ১০ মার্চ দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চিনি ও এলাচের আমদানি ও পাইকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান চালান ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। চিনি নিয়ে কারসাজির প্রমাণ পাওয়ায় চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আলমগীর পারভেজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘আর এম এন্টারপ্রাইজকে’ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। একই অভিযোগে চিনির শীর্ষস্থানীয় সরবরাহকারী নাবিল গ্রুপকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এছাড়া আমদানি করা এলাচ অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগ পেয়ে এ বি ট্রেডার্স নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানে দেড় হাজার টাকায় আমদানি করা এলাচ প্রতিকেজি ২২০০ টাকা থেকে ৩১০০ টাকায় এলাচ বিক্রি হচ্ছিল। প্রতিষ্ঠানটিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এ বি ট্রেডার্সে অভিযান শুরুর পর প্রতিষ্ঠানটির মালিক অমর কান্তি দাশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে কাগজপত্র উপস্থাপনের জন্য ‘হোল্ড অন’ শব্দ উল্লেখ করে অপেক্ষা করতে বলেন। ব্যবসায়ী অমরের বলার ভঙ্গিতে ক্ষুব্ধ হন ম্যাজিস্ট্রেট। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশের একটি ভিডিও ফুটেজ ওইদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে এ নিয়ে নানামুখী প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মহল থেকে ক্রমাগত আক্রমণাত্মক আচরণের শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেছেন, এরপরও মজুতদারি, ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এবং অহেতুক দাম বাড়ানো প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের চলমান অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।

এরপর মঙ্গলবার (১২ মার্চ) জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এবার ‍শুধু জরিমানা নয়, প্রয়োজনে জেলেও পাঠাবেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন