বিজ্ঞাপন

‘আমাদের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে’

April 22, 2024 | 11:59 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সময় ফুরিয়ে আসছে বলে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এই এক্সপোর মাধ্যমে সকালে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই বার্তা আমরা স্পষ্টভাবে দিয়েছি। এখানে ১০৪টি দেশের প্রতিনিধি আছেন। তারাই বলছেন, এটি এখন পর্যন্ত আয়োজিত সর্ববৃহত ন্যাপ এক্সপো। কিন্তু উনারা এমন একটা সময়ে এসেছেন যখন আমাদের হাতে সময় নেই। কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সোমবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো ২০২৪’-এর উদ্বোধনী দিনের বিভিন্ন কর্মসূচির ফাঁকে সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সকালে ন্যাপ এক্সপো উদ্বোধনের পর স্টলগুলো ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নানাভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এর প্রভাবে মোকাবিলায় একদিকে যেমন প্রয়োজন দ্রুত পদক্ষেপ, তেমনি অভিযোজনের জন্য দরকার অর্থায়ন। যে পরিমাণ অর্থায়ন আমরা এতদিন পেয়ে আসছি, তা চাহিদার তুলনায় কিছুই না। এই আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এই বার্তাটিও আমরা স্পষ্ট করতে চাই।

বিজ্ঞাপন

ন্যাপ এক্সপোর লক্ষ্য ও গুরুত্ব প্রসঙ্গে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এখানে শুধু স্বল্পোন্নত দেশ বা ছোট দ্বীপরাষ্ট্রই না, উন্নত বিশ্বেরও অনেক প্রতিনিধি এসেছেন। আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিরা আসছেন। তাই আমার মনে হয় এক ধরনের আন্তর্জাতিক সংগতি তৈরি হয়েছে। কারণ শুধু বাংলাদেশ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের শিকার নানাভাবে উন্নত বিশ্বও হচ্ছে। সুতরাং এখন আমার মনে হয় এমন একটি জায়গায় যাচ্ছি যেখানে সবাই বিষয়টি উপলব্ধি করেছে এবং তাদের সচেতনতা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা আশা করব, এর ফলে আমরা যে পরিমাণ অর্থায়নের দাবি করছি, যে মানের অর্থায়নের কথা বলছি, আগামী কপ সম্মেলনে তার একটি বহির্প্রকাশ আমরা দেখতে পারব।

সম্মেলন বিষয়ে ন্যাপ গ্লোবাল নেটওয়ার্ক রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর ডেভিড হফম্যান বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্টের (আইআইএসডি) অধীনে আমরা গত ১০ বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নে সাহায্য করে আসছি। এর জন্য সরকারগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তাও করে থাকি। বাংলাদেশ এটি আয়োজন করায় আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা মনে করি, বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে জলবায়ু অভিযোজনের চ্যালেঞ্জ ও অভিযোজন নিয়ে আলোচনার একটি সুযোগ এই এক্সপোর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। একে অন্যের সঙ্গে জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।

ন্যাপ এক্সপোর স্টলগুলোতে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। ছবি: সারাবাংলা

এই এক্সপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ কী পেতে পারে— জানতে চাইলে ডেভিড হফম্যান বলেন, নেটওয়ার্কিং ছাড়াও অন্যান্য দেশ এসব চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করছে, তা জানতে পারে বাংলাদেশ। একেক দেশের চ্যালেঞ্জ একেক রকম, মোকাবিলার পদ্ধতিও ভিন্ন। নিজেদের মধ্যে এসব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করলে সবাই লাভবান হবে। যেমন— বাংলাদেশ ছাদবাগান করে পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলার চেষ্টা করছে, যা অনেকেই জানে না। এভাবে অন্য দেশের অভিযোজন পরিকল্পনা থেকেও বাংলাদেশ নতুন কিছু শিখতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

চার দিনের এই এক্সপোর প্রথম দিনের আয়োজনে সকালে ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এক্সপো উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধে অর্থ ব্যয় না করে সেই টাকা জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় খরচ করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধে অস্ত্র ও অর্থ ব্যয় না করে সেই টাকাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে যদি ব্যয় করা হতো, তাহলে বিশ্ব রক্ষা পেত।

ন্যাপ এক্সপোর একটি সেশনে বক্তব্য রাখছেন পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। ছবি: সারাবাংলা

পরে ‘হাই-লেভেল ট্রান্সফরমেশনাল ডায়ালগ: আ ট্রান্সফর্মড ন্যাপ ফর দ্য ফিউচার’ শীর্ষক অধিবেশনে পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সংসদই প্রথম আইনসভা, যারা প্ল্যানেটারি ইমার্জেন্সি নিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। আমরা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নকে মূলধারায় নিয়ে এসেছি। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা দুর্বলতা থেকে স্থিতিস্থাপকতা থেকে সমৃদ্ধির পথ রচনা করেছি। এছাড়াও বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের (বিসিডিপি) মাধ্যমে বিশ্বে প্রথমবারের মতো একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি তো দেয়ইনি, এমনকি অভিযোজন তহবিলে ভারসাম্যও আনেনি। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (ইউএনএফসিসিসি) কাছে আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করি, যেন এই সংস্থার প্রতি বৈশ্বিক বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্যতা আবারও ফিরে আসে।

বিজ্ঞাপন

প্রথম দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও সাতটি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নৃত্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকৃতি, পাহাড়, বৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরা হয়।

আরও পড়ুন-

শুরু হলো ৪ দিনব্যাপী ন্যাপ এক্সপো

যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় ব্যবহারের আহ্বান

‘বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লেও জলবায়ু অভিযোজনের খরচ বাড়বে’

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন