বিজ্ঞাপন

‘আইসিটি খাতের উন্নয়নে কর অব্যাহতি বহাল রাখতে হবে’

April 24, 2024 | 5:29 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি উঠিয়ে নিলে খাতটির প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হয়ে যাবে। কর্মসংস্থান হারাতে পারে অনেকেই। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও তা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। কর অব্যাহতির কারণে আইসিটি ও সফটওয়্যার খাত থেকে সরকার ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে যে প্রতিবেদন তৈরি করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), প্রকৃতপক্ষে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কর অব্যাহতির কারণে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার বেনিফিট (সুযোগ) পাচ্ছে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে কর অব্যাহতি বহাল রাখতে হবে। পাঁচ বছর পর থেকে পাঁচ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্স বসানো যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ‘ট্যাক্স পলিসি সাজেশনস ফর প্রমোটিং লোকাল টেক স্টার্টআপস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ইডিটেক ও আইআইডি যৌথভাবে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডি জবসের প্রতিষ্ঠাতা ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর ও স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্নেহাশীষ বড়ুয়া (এফসিএ)। আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ভিসিপিইএবি) সভাপতি ও বেসিসের সাবেক সভাপতি শামীম আহসান, বেসিসের বর্তমান কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সামিরা জুবেরী হিমিকা, কনটেন্ট ম্যাটার্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এ এস এম রফিক উল্লাহ ও বন্ডস্টাইন টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শাহরুখ ইসলাম প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘এনবিআর হিসাব করছে কর অব্যাহতি থাকার কারণে আইসিটি খাত থেকে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। আমাদের হিসাব হচ্ছে, আমরা সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার বেনিফিট পাচ্ছি। ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার বেনিফিট যদি সরকার কেড়ে নেয়, যে ক্ষতিটা হবে, সেই ক্ষতি ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকারও অনেক বেশি। ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার যে হিসাবটা উনারা দিয়েছেন, তারমধ্যে ডাটাগত অনেক অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। আমরা মনে করি সেটি সঠিক হিসাব নয়।’

বেসিসের আরেক সাবেক সভাপতি শামীম আহসান বলেন, ‘আমাদের ইজেনারেশন একটি এসএমই কোম্পানি। আমরা প্রতিবছর এখন এআইটি, ভ্যাট ও ট্যাক্স মিলিয়ে তিন কোটি টাকা দিচ্ছি। কর্মীরা আরও ৫০ লাখ টাকা ট্যাক্স দিচ্ছে। পাঁচ বছর আগে হয়তো রাজস্ব দিতাম ১ কোটি টাকা, সেটা এখন তিনগুণ হয়েছে। কর্মীদের দেওয়া করও তিনগুণ হয়েছে। আমি হিসাব করেছিলাম আরও পাঁচ বছর যদি কর অব্যাহতি থাকে, পরের পাঁচ বছর যদি পাঁচ শতাংশ করে কর্পোরেট ট্যাক্স দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, আমাদের মতো একটি এসএমই কোম্পানি সরকারকে আগামী ১০ বছরে ১০০ কোটি টাকা ট্যাক্স ভ্যাট দিতে পারবে। আবার সরকার যদি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, কর্পোরেট ট্যাক্স এখন আমাদের মতো কোম্পানির উপর আরোপ করে, হিসাব করে দেখেছি- প্রবৃদ্ধিটা বন্ধ হয়ে যাবে। সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও হতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘কর অব্যাহতি উঠিয়ে নিলে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে, কর্মসংস্থান বাড়াতে পারবো না, তাহলে আগামী ১০ বছরে মাত্র ৪০ কোটি টাকা ট্যাক্স দিতে পারবো। আর যদি এখনকার মতো কর অব্যাহতির সুযোগ থাকে আমাদের মতো একটি কোম্পানি প্রায় আড়াই গুণ বেশি কর দিতে পারবে। তাই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগামী ৫ বছর শূন্য করের সুযোগ রেখে আমাদের বড় হওয়ার সুযোগ দেব কিনা, না আইসিটি খাতের এগিয়ে চলার গতি মন্থর করে দেবে।’

বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সামিরা জুবেরী হিমিকা, ‘কর অব্যাহতি তুলে দিলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের যে ক্ষতি হবে, সেই হিসাব ও ডাটা তৈরি করে সরকারের কাছে আমাদের তুলে ধরতে হবে। কর অব্যাহতির এই সুযোগ অব্যাহত রাখতে এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে আমাদের সহায়তা করতে হবে। আর এই কাজটি আমাদের আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই করতে হবে। আমরা এখন সেই কাজটি করছি।’

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতই বাংলাদেশকে বড় করেছে, বেসরকারি খাতই বাংলাদেশকে বড় করবে, সরকার সেখানে নীতিগত সহায়তা দেবে। আশা করছি সরকার দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতে দেওয়া বর্তমানের সব সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখবে।’

বিজ্ঞাপন

কন্টেন্ট ম্যাটার্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এ এস এম রফিক উল্লাহ বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি উঠিয়ে দেওয়ার কথা এমন এক সরকার বলছে, যে সরকার নিজেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার চেষ্টা করছে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত আজকে যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, এই সরকারের কারণেই তা হয়েছে। আইএমএফ-এর চাপ থাকতে পারে, তবে আমার মনে হয়, আমরা এনবিআরকে হয়তো বিষয়টি সঠিকভাবে বুঝাতে সক্ষম হইনি। আমাদের প্রয়োজন সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা। অ্যাকসেস টু ফাইন্যান্স এর মতো অ্যাকসেস টু গর্ভমেন্টও দরকার।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন