বিজ্ঞাপন

গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

April 25, 2024 | 10:25 am

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রাশিয়ান বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধ গোপনে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, তারাই এগুলো কিয়েভকে সরবরাহ করেছে। এসব অস্ত্রই গত মার্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুমোদন করা ৩০ কোটি ডলার সহায়তা প্যাকেজের অংশ। চলতি এপ্রিল মাসেই এগুলো কিয়েভের হাতে পৌঁছেছে।

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ক্রিমিয়াতে রুশ বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে এর মধ্যে অন্তত একবার হলেও নতুন এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

এর আগে জো বাইডেন ইউক্রেনের জন্য ৬১ বিলিয়ন ডলারের নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজে সই করেছেন। বিলটি এরই মধ্যে কংগ্রেসে পাসের পর সিনেটেও অনুমোদিত হয়েছে।

ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র সহায়তা দেবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল। এর আগে কিয়েভকে মধ্যম পাল্লার সামরিক কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বা এটিএসিএমএস সরবরাহ করা হয়েছিল। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় নিয়ে উদ্বেগ থাকায় এর চেয়ে শক্তিশলী ক্ষেপণাস্ত্র দিতে অনাগ্রহী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে বাইডেন গত ফেব্রুয়ারিতে গোপনে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেন, যা ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ভেদান্ত পাটেল বলেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রেসিডেন্টের সরাসরি নির্দেশনাতেই দূরপাল্লার এটিএসিএমএস সরবরাহ করেছে। ইউক্রেনের অনুরোধে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।

এ তথ্য স্বীকার করলেও ইউক্রেনকে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহ করেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দেশটির নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ওয়াশিংটন এ ধরনের আরও অস্ত্র পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ক্রিমিয়াতে একটি রুশ বিমান বাহিনীর মাঠে গত সপ্তাহেই প্রথমবারের মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে কিয়েভ। এ ছাড়া রুশ সৈন্যদের দখল করা বার্দিয়ানস্কে গত মঙ্গলবার রাতভর এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস খবর দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অস্ত্রের মজুত কমে আসা ও রুশদের কিছু অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে গত কিছুদিন ধরেই কিয়েভ পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছিল সহায়তা বাড়ানোর জন্য। কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণে গত কয়েক মাসে সেই সহায়তা বাড়াতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত সেই অচলাবস্থা কেটেছে। কিয়েভের জন্য নতুন সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজ যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদনের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, প্রায় দেড় বছরের বিতর্ক ও সন্দেহের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে এখন আমরা সবকিছুই করব। রাশিয়ার দখলদাররা এ সময়ের মধ্যে যাই করুক না কেন, পুতিন যা-ই পরিকল্পনা করুক না কেন, আমাদের অবশ্যই তাদের রুখে দিতে হবে।

সামনের সপ্তাহগুলোতে ফের রাশিয়া আক্রমণ শুরু করতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন জেলেনস্কি। বলেছেন, এর আগে গত শীতে ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে তাদের আভডিভকা শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

ইউক্রেনের সেনারা অস্ত্রের স্বল্পতা ও আকাশসীমায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বেশকিছু সংকটে ভুগেছেন গত কয়েক মাস ধরে। কর্মকর্তারা প্রাণহানি ও ভূখণ্ড হারানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের বিলম্বকে দায়ী করে আসছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সহায়তা প্যাকেজ পশ্চিমাদের নিয়ে এরকম নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইউক্রেন, ইসরায়েল ও তাইওয়ানের জন্য অনুমোদন করা ওই সহায়তা প্যাকেজ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের। এ সংক্রান্ত বিলে সই করে বাইডেন বলেন, এটি আমেরিকাকে নিরাপদ করবে। এটি বিশ্বকে নিরাপদ করবে।

এই সহায়তা প্যাকেজের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৫ বিলিয়ন ডলার) কেবল ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ। বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই নতুন অস্ত্র ও উপকরণ পাঠিয়ে রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কিয়েভকে সহায়তা করবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, এটি গণতন্ত্রের রক্ষক ও মুক্ত বিশ্বের নেতা হিসেবে আমেরিকার ভূমিকাকে জোরদার করবে।

দুই বছর আগে ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এরপর গত দুই বছর দুই মাস সময়ে দুপক্ষের লাখো মানুষ হতাহতের শিকার হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন