বিজ্ঞাপন

এমপি-মন্ত্রীর রাজত্ব কায়েমের সুযোগ আওয়ামী লীগে নেই

April 27, 2024 | 11:42 am

অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তৃণমূল থেকে উঠে আসা পোড় খাওয়া রাজনীতবিদ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও যুগ্ম সাধারণ পদ পেরিয়ে এখন জায়গা পেয়েছেন সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীতে। ঢাকা-১৩ আসনের এই সংসদ সদস্য বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি সারাবাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় কৌশল এবং সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণের বিধান রয়েছে। কিন্তু রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন বর্জনের কৌশলে এই নির্বাচনেও প্রার্থী দেয়নি। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও প্রার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দল থেকে কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি। ফলে দলের যে কারও জন্য এই ভোট উন্মুক্ত। তবে দলের এই কৌশলকে সুযোগ হিসেবে নিতে দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকার কিছু সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক বলয় নিজেদের কবজায় রাখতে তারা আত্মীয়-স্বজন, এমনকি স্ত্রী-সন্তানকে পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করছেন। দল থেকে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন করায় নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ রকম কেউ নির্বাচন করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। তারপরও কোনো কোনো এলাকায় এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে দেখা যায়নি প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে। একই পরিস্থিতি পরবর্তী ধাপগুলোতেও থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়েই সারাবাংলার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়

সারাবাংলা: বিধান থাকলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? বিএনপি নির্বাচনে না আসায় শুধুই প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোই কি লক্ষ্য?

বিজ্ঞাপন

জাহাঙ্গীর কবির নানক: আওয়ামী লীগ দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের দেশের সার্বিক যে পরিস্থিতি তাতে আমাদের ভালো নেতৃত্ব বের হয়ে আসা দরকার। উপজেলা নির্বাচন হলো কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। এই স্থানীয় সরকারে ভালো নেতৃত্ব আসা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য প্রয়োজন। প্রতীক ছাড়া এই নির্বাচনটিতে সেই সুযোগ রয়েছে কি না এবং থাকলে কী পরিমাণ রয়েছে— সেটি বোঝার জন্যই আমরা এই প্রতীকবিহীন নির্বাচনে গিয়েছি।

আমরা বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের জন্য ভালো একটি নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। এই নেতৃত্ব স্থানীয় সরকারে তাদের কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে সরকারের যে স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন, প্রধানমন্ত্রীর সেই ভিশন ও মিশন বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা একটি কারণ। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটিই।

সারাবাংলা: আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের স্বজনদের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সেটি অনেকেই অনুসরণ করছেন না বলে আমরা দেখছি। এ বিষয়ে কী বলবেন?

বিজ্ঞাপন

জাহাঙ্গীর কবির নানক: আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়, তথা দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে এ বিষয়ে। যারা আমাদের দল করবে, তাদের এই নির্দেশনা আমলে নিতে হবে। এমপি হোক বা মন্ত্রী হোক বা যে-ই হোক, প্রত্যেককেই এই নির্দেশনা আমলে নিতে হবে, অনুসরণ করতে হবে। তা করলে ধরে নিতে হবে, তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেই মনে করি।

সারাবাংলা: যেসব দলীয় এমপি-মন্ত্রী দলের সিদ্ধান্ত কর্ণপাত করছেন না, তাদের প্রতি কী আহ্বান জানাতে চান?

জাহাঙ্গীর কবির নানক: আমি এমপি-মন্ত্রী মহোদয়দের বলব, আপনারা আত্মহনের পথ বেছে নিয়েছেন। কী কারণে এ কথা বলছি, সেটি ব্যাখ্যা করি। আগামীতে ঢাকা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হবে। এখন আমি ঢাকা-১৩ এলাকার সংসদ সদস্য। একটি ওয়ার্ডে যদি (কাউন্সিলর পদে) পাঁচজন নির্বাচন করেন, আমি কার পক্ষ নেব? পাঁচজন নির্বাচন করলে কি আমি একজনের পক্ষ নেব? বাকিরাও যদি আমার দলের একান্ত নিষ্ঠাবান নেতা বা কর্মী হন, তার প্রতি কি অবিচার করা হবে না?

কাজেই আমার জন্য সমীচীন হলো কারও পক্ষই না নেওয়া। আমি বা কোনো সংসদ সদস্য বা কোনো মন্ত্রী যদি কোনো ব্যক্তির পক্ষ নেন, সেটি তাই তার জন্য আগামীতে বুমেরাং হয়ে যাবে। কাজেই আমি অনুরোধ করব— যারা এ পথে রয়েছেন, যারা আত্মীয়-স্বজনকে রেখে এককেন্দ্রিক রাজনীতি করতে চান— আপনারা দয়া করে এই পথ পরিহার করুন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: এমপি-মন্ত্রীদের স্বজন বা স্ত্রী-সন্তানদের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করার এই দলীয় সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত কতটা বাস্তবায়নযোগ্য হবে বলে মনে করছেন?

জাহাঙ্গীর কবির নানক: দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন স্ট্যান্ড নিয়েছেন, আমাদের নেতাকর্মীদেরও আশ্বস্ত হতে হবে যে এই দলে এমপি-মন্ত্রীর রাজত্ব কায়েমের কোনো সুযোগ নেই। কারও ব্যক্তিগত রাজত্ব কায়েমের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে না। আওয়ামী লীগ সবসময় দলের রাজনৈতিক কৌশলেই পরিচালিত হয়, হবে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি সবসময় দলের জন্য হবে। ফলে যারা দলের জন্য ত্যাগ-তিতীক্ষা স্বীকার করেছে, জেল-জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন, তারা এখন আশার আলো দেখছেন। তারা বুঝতে পারছেন যে এই দলের রাজনীতি তারা নির্বিঘ্নে করতে পারবেন। এর বাইরে যারা চিন্তা করবেন, তাদের সতর্ক হয়ে যেতে হবে এখনই।

সারাবাংলা: উপজেলা নির্বাচন বানচাল বা বিতর্কিত করার জন্য কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র তা তৎপরতা রয়েছে বলে মনে করছেন কি?

জাহাঙ্গীর কবির নানক: নির্বাচন বানচালের জন্য চেষ্টা নেই, তা নয়। একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা নির্বাচন বানচালের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা যখনই এ চেষ্টাটা করে, দেশের গণমানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ফলে তারা সফল হয়নি। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা এই দেশে রক্ষা করা হচ্ছে। সেই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার কারণে এই অসাংবিধানিক সাম্প্রদায়িক শক্তি-অপশক্তিগুলো পরাজিত হয়েছে, হচ্ছে। তারা কোণঠাসা হয়ে গেছে। তারা ইস্যুবিহীন হয়ে পড়েছে। এই দলগুলো অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে বাধ্য। তাই নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্র বা তৎপরতা থাকলেও সেগুলো নিয়ে আমরা ভাবছি না। জনগণই তাদের প্রতিহত করবে।

সারাবাংলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

জাহাঙ্গীর কবির নানক: সারাবাংলাকে ধন্যবাদ। সারাবাংলার পাঠকদের জন্য শুভকামনা।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন