বিজ্ঞাপন

বিএনপিশূন্য মাঠে শান্তিপূর্ণ ভোট

June 26, 2018 | 4:33 pm

।। গোলাম সামদানী, আসাদ জামান ও নৃপেন রায় ।।

বিজ্ঞাপন

গাজীপুর থেকে: সকাল ৭টা ৫০ মিনিট। টঙ্গী মুন্নু নগর টেক্সটাইল মিল উচ্চ বিদ্যালয় গেটে ভোটাদের দীর্ঘ লাইন। প্রায় সবার গলায় নৌকা প্রতীকের কার্ড ঝোলানো। বিএনপি কার্ডধারী একজনেরও দেখা নেই!

ভোটগ্রহণ শুরুর পর কার্ডধারী বিএনপি নেতাকর্মীশূন্য এ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেয় সবাই। ঢাকা থেকে সবচেয়ে কাছের এ কেন্দ্রটিতে সাংবাদিক, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঢুঁ মেরে যান। কোনো গোলযোগের ঘটনা সারাদিনেও ঘটেনি মুন্নু নগর টেক্সটাইল মিল উচ্চ বিদ্যালয়ের এই কেন্দ্রে।

অথচ কেন্দ্রের বাইরে নেই বিএনপির কোনো নেতাকর্মী বা এজেন্ট। তাদের এই অনুপস্থিতির সুনির্দিষ্ট কারণও কেউ বলতে পারলেন না। তবে বেশিরভাগ মানুষের মতামত, বিএনপিকর্মীরা ভয়ে কেন্দ্রে আসেননি। যারা এসছেন, নীরবে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

কথা হয় গলায় নৌকার কার্ড ঝোলানো মো. জামাল উদ্দীনের সঙ্গে। সারাবাংলা’কে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেই, আসবে কোত্থেকে? দুয়েকজন যা আছে, তাদের কোনো আওয়াজ নেই।’

টঙ্গীর আরো দুইটি কেন্দ্র শফিউদ্দিন একাডেমি ও বশির উদ্দীন উদায়ন একাডেমির অবস্থাও প্রায় একই রকম মনে হয়েছে। তবে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বশির উদ্দিন উদায়ন একাডেমি কেন্দ্রে ভোট দিতে এলে তার সঙ্গে বেশ কিছু নেতাকর্মী-সমর্থককে ধানের শীষের কার্ড ঝোলানো অবস্থায় দেখা যায়।

এদিকে, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে একবার এবং দুপুর ১টার দিকে আরেকবার সাংবাদিকদের কাছে হাসান উদ্দিন সরকার অভিযোগ করেন, তার পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, বের করে দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় দফা সংবাদ সম্মেলনে ভোট বন্ধের দাবিও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

তবে সকাল সাড়ে ১০টায় গাজীপুর মালেকবাড়ি শরিপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ছয়টি বুথের প্রতিটিতেই বিএনপি এজেন্ট আছেন। কোনো কোনো বুথে নৌকার এজেন্টদের পাশে বসে দায়িত্ব পালন করছেন ধানের শীষের এজেন্ট।

শরিপপুর সরকারি প্রাথমিম বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার ওয়াজিউর রহমান সারাবাংলা’কে বলেন, ‘এ কেন্দ্রে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের এজেন্ট পাশাপাশি বসে কাজ করছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।‘

ধানের শীষের এজেন্টরাও একই কথা জানান সারাবাংলা’র প্রতিনিধিদের। তারা বলেন, ‘কেন্দ্রে আসার আগে ভেতরে ভয় কাজ করলেও আসার পর কোনো সমস্যা হয়নি।’

৯৯ নম্বর কেন্দ্র ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও সবগুলো বুথে বিএনপি এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন। ৩২০১ ভোটারের এ কেন্দ্রে ৯টি বুথে ৯ জন নৌকার এজেন্টের পাশে ৯ ধানের শীষের এজেন্টও ছিলেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে কেন্দ্র ও কেন্দ্রের আশপাশে বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থকদের সরব উপস্থিতি না থাকলেও কাস্ট হওয়া ভোটের একটা বড় অংশ বিএনপি প্রার্থী পাচ্ছেন বলে বুথ ফেরতদের অভিমত। তারা বলছেন, ঝামেলা এড়াতে অনেকে গলায় নৌকা ঝুলিয়ে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন ধানের শীষে!

ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে কথা হয় রুহুল আমীনের সাথে। গলায় নৌকা ঝোলানো রুহুল আমীন সারাবাংলা’কে বলেন, ‘ঝামেলার ভয়ে সবাই নৌকা ঝুলিয়েছে। তবে সব ভোট নৌকায় পড়বে না। ধানের শীষেও পড়বে।’

জয়দেবপুর টিঅ্যান্ডটি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯টি বুথেই বিএনপির এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন। ২৯৯৪ ভোটারের এই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির হারও ছিল সন্তোষজনক। আবাসিক এলাকার এ কেন্দ্রটিতে এজেন্ট বের করে দেওয়া বা ঢুকতে বাধা দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে টিঅ্যান্ডটি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করে যান একজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রান্ড স্টেশন সংলগ্ন এ কেন্দ্রটিতে পর্যটকদের আনাগোনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এ কেন্দ্রে।

এদিকে, গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে স্থনীয় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে কিছু সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ ব্যহত হয়।

এই কেন্দ্রসহ চার/পাঁচটি কেন্দ্র নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত হয়েছি এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেছি।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে কয়েকটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোট নেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রাণী রাসমণি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ছিল অন্যতম। এ কেন্দ্রটিতে নারী ভোটাররা স্বচ্ছন্দ্যে ইভিএমে ভোট দেন। ডিজিটাল এই ভোটিং সিস্টেমের সাথে পরিচিত হতে পেরে অনেকেই সন্তোষ জানান।

ভোটার রাশিদা বেগম সারাবাংলা’কে বলেন, ‘ইভিএমে ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে। প্রথম প্রথম সমস্যা মনে হলেও দেখিয়ে দেওয়ার পর ভালো মতোই ভোট দিতে পেরেছি।’

নির্বাচন পর্যবেক্ষক, সাধারণ ভোটার, স্থানীয় জনগণসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষেরা বলছেন, দুয়েকটি বিচ্ছন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তবে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বন্ধের দাবি জানান। যদিও তিনি ভোট বর্জনের পথে হাঁটেননি। বরং নির্বাচন শেষে এই মুহূর্তে তিনি নিজ বাসায় ফলাফলের অপেক্ষা করছেন।

সারাবাংলা/জেএস/এজেড/এনআর/টিআর

আরও পড়ুন-

‘সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বিএন‌পি’

ইভিএমে ভোট দিতে পেরে খুশি ভোটাররা

নির্বাচন বন্ধের দাবি হাসান উদ্দিন সরকারের

সবচেয়ে ভালো নির্বাচন গাজীপুরে হবে: এসপি হারুন

‘সিইসি অসহায়, মাঠ পর্যায়ে অভিযোগের পরামর্শ দিয়েছেন’

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন