বিজ্ঞাপন

জামায়াত ও শপথ ইস্যুতে ঐক্যে ফাটল!

January 18, 2019 | 4:35 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পরই প্রশ্ন উঠেছিল— জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য আর কত দিন? নির্বাচনে ভরাডুবির পর অটুট থাকবে তো জোটের ঐক্য? সম্পূর্ণ ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল নিয়ে ভোটের আগে গড়ে তোলা ‘নির্বাচনি জোট’ শেষ পর্যন্ত টিকবে তো?

এসব প্রশ্নের উত্তর তখন না মিললেও মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে অনেক কিছুই এখন পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। নির্বাচনে ভরাডুবির পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আর কোনো প্রয়োজন আছে কি না— সে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির একাধিক নেতা। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব নিয়েও প্রকাশ্যে কথা বলছেন দলটির অনেকেই।

এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিতে থাকা বিএনপির দুই নীতিনির্ধারক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এই জোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নির্বাচনের পর থেকে এড়িয়ে চলছেন জোটের সব ধরনের কর্মকাণ্ড।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: সোমবার সিলেট যাচ্ছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা

লিয়াজোঁ কমিটিতে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবীব ও মনিরুল হক চৌধুরীকেও নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই কেবল জোটের বৈঠকগুলোতে হাজিরা দিয়ে আসছিলেন।

তবে বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত হননি মির্জা ফখরুলও। বৈঠকে কোনো প্রতিনিধিও পাঠায়নি বিএনপি। তাদের অনুপস্থিতি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা আ স ম আবদুর রব ও মোস্তফা মোহসীন মন্টু দিয়েছেন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য।

বিজ্ঞাপন

আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ‘আজকের বৈঠকে বিএনপির একজন আসতেছেন— অন দ্য ওয়ে। আমাদের প্রত্যেকেরই কাজ আছে, মামলা-টামলা করতে হবে। এ জন্য ব্যস্ততার কারণে দেরি না করে আমরা চলে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুন: নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে যাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেছেন, ‘আমি মির্জা ফখরুলের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি অসুস্থ। এজন্য আসতে পারেননি। আসার কথা ছিল ড. মঈন খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের। উনারা একটা জায়গায় আটকা পড়েছেন। নেক্সট মিটিংয়ে আমরা একসঙ্গে বসব।’

কিন্তু তাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। আ স ম আবদুর রব ও মোস্তফা মোহসীন মন্টুর বক্তব্যের পরই ড. মঈন খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো মিটিংয়ের খবর তিনি জানেন না।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির ওই বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মহসাচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের থাকার কথা ছিল।

কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরামের পক্ষ থেকে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার আলটিমেটাম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী গণফোরামের দু’জনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আট সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ব্যারিস্টার ওমদুদ আহমদ ও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর তাদেরকে রাজি করাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুলও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

আরও পড়ুন: ঐক্যফ্রন্টের ‘ঐক্য’ আর কত দিন

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কৌশলগত কারণে দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে কিছুতেই ছাড়তে চাচ্ছে না বিএনপি। জামায়াতকে সঙ্গে রেখেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টা করছে দলটি। কিন্তু নানা মহল থেকে প্রশ্ন ওঠায় ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিকরা চাচ্ছে জামায়াতের ব্যাপারে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিক বিএনপি। জামায়াতকে সঙ্গে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য ধরে রাখা সম্ভব নয়।

এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অনেক প্রশ্ন আছে। রাজনীতিতে প্রশ্ন থাকবেই। প্রশ্ন না থাকলে রাজনীতি হবে না। রাজনীতিতে এগুলো চর্চার প্রয়োজন আছে।’

তিনি বলেন, ‘কোন পরিস্থিতিতে, কোন পর্যায়ে কোন উদ্যোগ সঠিক, কোন উদ্যোগ বেঠিক— সে বিষয়ে আলোচনা আছে। সে আলোচনার জন্য বিভিন্ন ফোরামও রয়েছে। আমরা আশা করব, সে সমস্ত ফোরামে সঠিকভাবে আলোচনা হবে।’

জোট শরিকদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘একটি কথা আপনাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা যে কথাই মনে করুন না কেন, ঐক্যর কোনো বিকল্প নাই। ২০ দলীয় ঐক্যজোট যখন গঠন হয়, তখনো একই কথা ছিল, ঐক্যফ্রন্ট যখন গঠন করা হয়, তখনও একই প্রশ্ন এসেছে। তারপরও ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা হয়েছে। এর প্রয়োজন অবশ্যই ছিল, ঐতিহাসিকভাবে প্রয়োজন ছিল।’

আরও পড়ুন: ইসিতে স্মারকলিপি দিলেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের একদিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া এই বক্তব্যের মধ্যে জামায়াত না ছাড়ার পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে। আর সে কারণেই নির্ধারিত দিনের বৈঠকে আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না আসতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে বৈঠকের তারিখ পরিবর্তন করা হয়। আর পরিবর্তিত তারিখে অনুষ্ঠিত বৈঠক বর্জন করে বিএনপি।

শুধু জামায়াত ইস্যু নয়, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সাত জন এবং উদীয়মান সূর্য নিয়ে একজনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ী আট সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণ নিয়েও বিএনপির সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছে বলে জানা গেছে। শপথ গ্রহণের ব্যাপারে বিএনপি এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে না। কিন্তু গণফোরাম চাচ্ছে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং টিভি টকশোতে প্রকাশ্যেই বলেছেন, সংখ্যায় কম হলেও বিএনপির উচিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংসদে যাওয়া। গণফোরামের দুই সংসদ সদস্য সুলতান মো. মনসুর ও মোকাব্বীর খানও শপথ নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আর এ কারণেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর নীতির সঙ্গে বিএনপি নীতির বিরোধ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তারই ফল হিসেবে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে দেখা যায়নি বিএনপিকে— যা ছিল ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর প্রথম ঘটনা।

আরও পড়ুন: প্রার্থীরা নয়, ইসিতে স্মারকলিপি দেবে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দল

পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে আমি যেতে পারিনি। এছাড়া জোটে আর কোনো সমস্যা নেই।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিতে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সম্পর্কে আমার কাছে কোনো খবর নেই। তারা কোথায়, কখন মিটিং করেছে, সে সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ও বরকত উল্লাহ বুলু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এলাকায় (নোয়াখালী) থাকার কারণে নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি। ফ্রন্টের কোনো নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ হয়নি। সুতরাং ফ্রন্টের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

আরও পড়ুন

নির্বাচন বাতিলের এজেন্ডা থাকলে সংলাপে বসবে ঐক্যফ্রন্ট

নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট: রণজিত রায়

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন