বিজ্ঞাপন

প্রবাসী শ্রমিকদের বয়ে আনা এইডস নিরীক্ষণের পথ নেই

November 30, 2018 | 5:31 pm

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে এইডস থেকে মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে ১ ডিসেম্বর সারাদেশে পালিত হবে বিশ্ব এইডস দিবস। এই দিবসটি পালন উপলক্ষে দেশের মধ্যে নেওয়া হবে নানা কর্মসূচি। এমনকি এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত রোগীদেরও দেওয়া হবে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ।

এদিকে, এইডসের অন্যতম বাহক প্রবাসী শ্রমিকদের এইচআইভি নিরীক্ষণ শুধু কষ্টসাধ্য নয়, নিয়ম বহির্ভূতও।

বাংলাদেশে যত এইডস রোগী আছে তাদের মধ্যে ৩১ শতাংশ এইডস রোগী জীবনে কোনো না কোনো সময় প্রবাসে ছিলেন শ্রমিক হিসেবে। তারা অধিকাংশই কাজ করতেন মধ্য প্রাচ্যের কোনো দেশে। বিদেশ যাওয়ার পথে তাদের এইডসসহ অন্যান্য রোগের পরীক্ষা করা হলেও দেশে ফিরে আসার পরে হয় না কোনো বাধ্যতামূলক পরীক্ষা। কেউ যদি নিজে অনুভব করে পরীক্ষা করা জরুরি, তবেই তারা জানতে পারেন তাদের এইডস আছে কি নেই।

বিজ্ঞাপন

কেমন ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশে থেকে প্রতিবছর প্রায় সাত থেকে দশ লাখ শ্রমিক বৈধ পথে বিদেশে যায় জীবীকা অন্বেষণে। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ১০ লাখ ৮ হাজার, ৫২৫ জন। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৬ লক্ষ ১৪ হাজার ৫৮৫ জন বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। যার মধ্যে ৮১ হাজার ২৫০ জন নারী। গত বছর ১ লাখ ২১ হাজার ৯২৫ জন নারী শ্রমিক পাড়ি দিয়েছিলেন প্রবাসে। তাদের অনেকেই ফিরে এসেছেন যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়ে। সেসব নারীদেরও পার হতে হয়নি কোনো এইডস বা অন্য কোনো পরীক্ষার মধ্য দিয়ে।

এইডস-এসটিডি কর্মসূচির ডেপুটি ডিরেক্টর ড. বেলাল হোসেন সারাবাংলাকে জানান, ২০১৭ সালে ৮৬৫ জন এইড রোগীকে শনাক্ত করা হয়—যাদের মধ্যে ২৬৯ জন ছিল প্রবাসী। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৬৭ জন। তারা প্রত্যেকেই চিকিৎসকের কাছে এসেছিলেন শারীরিক সমস্যা নিয়ে। বিভিন্ন পরীক্ষায় ধরা পড়ে তারা এইচআইভি পজেটিভ।

বিজ্ঞাপন

ইতোমধ্যে দেশের ২৩টি জেলা এইডসের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই জেলাগুলো হচ্ছে, ঢাকা, গাজীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, সিলেট ও মৌলভীবাজার।

প্রবাসীদের পরীক্ষণ করা সম্ভব হয় না কেন?

বাংলাদেশ থেকে যখন প্রবাসীরা বিদেশে যায় তখন তাদের সকলের এইডসের জীবাণু পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু তারা যখন ফিরে আসেন তখন সেভাবে তাদের এইডসের পরীক্ষা করা হয় না।

এ বিষয়ে ড. বেলাল হোসেন বলেন, ‘২০০২ সালে নিরাপদ রক্তসঞ্চালন আইন অনুযায়ী কারও অনুমতি ছাড়া শরীর থেকে রক্ত নেওয়া এবং পরীক্ষা করা সম্ভব না। বিমানবন্দরে পুলিশ ও অন্যান্য প্রশাসন এ বিষয়ে সচেতন থাকলেও নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় বিমানবন্দরে আসা শ্রমিকদের রক্ত পরীক্ষা করা হয় না। আমরা নিয়মিত অন্তঃনগর বাসও টার্মিনাল, রেলস্টেশনে স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে এইচআইভি পরীক্ষা করি। কিন্তু আমাদের বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা এমন নয় যে সেখানে এ ধরণের পরীক্ষা করা যায়।’

বিজ্ঞাপন

এইডস-এসটিডি প্রোগ্রামের পরিচালক ড. শামিউল ইসলাম বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো হতো যদি বিমান বন্দরেই রক্ত পরীক্ষা করে এইচআইভি পরীক্ষা করা যেত। তবে এই পরীক্ষাই সব নয়। এখানে অনেক শ্রমিকই আছেন যারা কয়েকটি দেশ হয়ে অবৈধ্য পথে প্রবাসে যান। এদের যেহেতু হিসেবে আনা যায় না তাই এভাবে কাউকে খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য।’

কী ধরণের ব্যবস্থাপনা নিচ্ছে সরকার

ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন,  ‘এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে এইডস নির্মূল করতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রতিবছর এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ জনে নামিয়ে আনতে কাজ করছি আমরা। এইডস রোগীদের একটা বড় অংশ সূইয়ের মধ্যমে শিরায় মাদক নেয়, তাদেরকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সেভ দ্য চিলড্রেন, কেয়ার বাংলাদেশ এবং অন্যান্য কয়েকটি এনজিওর মাধ্যমে নিয়মিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নারী ও অন্তঃসত্ত্বাদের পরীক্ষা করে থাকে।’

ড. ইসলামের মতে, যেহেতু প্রত্যক্ষভাবে পরীক্ষা করা সহজ নয় তাই পরোক্ষভাবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এভাবেই প্রবাসীদের মাধ্যমে আসা এইচআইভি সংক্রামণ ঠেকাতে কাজ করছে সরকার।

যাদের মধ্যে এইডসের জীবাণু পাওয়া যায় তাদের নিয়মিত ওষুধ প্রধান করা হয়, এ ছাড়াও আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদের নির্দিষ্ট সময় পর পর পরীক্ষণ করা এবং এইডসের বিষয়ে তাদের সচেতন করা হয়।

শুধু দেশ নয়, বিদেশ থাকা শ্রমিকদেরও মধ্যেও এইডস সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করি জানিয়ে ড. বেলাল বলেন, ‘এই জন্য আমরা যেসব দেশে শ্রমিকরা যান সে দেশগুলোর বিভিন্ন সংগঠন যেমন উপসাগরীয় দেশগুলোর সংগঠন গালফ অ্যাপরুভড মেডিকেল সেন্টারস (গামকা)-এর মতো সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে শ্রমিকদের সচেতন করি।’

দরকার নিয়মিত পরীক্ষা, দরকার সচেতনতা

এইডস আক্রান্তদের শনাক্তকরণে শুধু এয়ারপোর্টের চিকিৎসা যথেষ্ট না বলে জানান ড. রহিমা। তিনি কাজ করেন সেভ দ্যা চিল্ড্রেনের এইচআইভি ও এইডস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যসেবা এবং পরামর্শ কেন্দ্রে। ড. রহিমা বলেন,  ‘একজন মানুষ এইচআইভি ভাইরাসের বাহক কি-না এটা জানতে মোট তিনটা পরীক্ষা করা লাগে। কেউ যদি এইডসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করেন তবে সাথে সাথেই তার পরীক্ষায় জীবাণু শনাক্ত করা সম্ভব নাও হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরে তাকে পরীক্ষা করে পরে নিশ্চিত হওয়া যায় সে আসলেই এইডসে আক্রান্ত কি-না।’

‘কেউ যদি এইডসের ঝুঁকিতে থাকে, এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন না থাকে এবং পর্যবেক্ষণে না থাকে তাহলে সে নিজের ক্ষতি তো করেই। রোগ বিস্তারেও ভূমিকা রাখতে পারে’—বলেন তিনি।

ড. বেলাল বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি শ্রমিকদের রক্ত পরীক্ষার চেয়েও জরুরি কাজ হচ্ছে তাদের সচেতন করা। রক্ত পরীক্ষা করা হোক না হোক এই সমস্যা তাদের নিজেদের। অন্য সবার মতো তাদের এই রোগ সম্পর্কে জানতে হবে এবং এ রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে শিখতে হবে। এভাবেই রোগের বিস্তার বন্ধ করা সম্ভব হবে।’

সারাবাংলা/এমএ/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন