বিজ্ঞাপন

রাজধানীতে মা-মেয়ে হত্যা : সি‌সি টি‌ভি ফুটেজ পু‌লি‌শের হা‌তে

March 21, 2018 | 8:10 am

শামীম রিজভী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুরের একটি বাসায় গারো সম্প্রদায়ের দুই নারী হত্যাকা‌ণ্ডের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেগুলো এখন বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। গারো সম্প্রদায়ের দুই নারীর নাম- বেসেথ চিরান (৬৫) ও তার মেয়ে সুজাতা চিরান (৪২)। পু‌লিশ ও প্র‌তি‌বে‌শিরা ধারণা কর‌ছেন, পা‌রিবা‌রিক কার‌ণে এ হত্যাকাণ্ড হ‌য়ে‌ছে। মঙ্গলবার (২০ মার্চ) দুপু‌রে বাসায় আসা সুজাতার ভা‌গ্নে সঞ্জিত ও তার বন্ধুরা এ হত্যাকা‌ণ্ড ক‌রে থাক‌তে পা‌রে। ওইদিন বিকেল ৪টা থেকে সা‌ড়ে ৫টার মধ্যে তাদের খুন করা হয়।

‌বি‌কে‌লে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে আসে গুলশান থানা পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে- দুই রুমের ওই বাসায় একটি রুমের খাটের ওপর থেকে সুজাতার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারাল অস্ত্র দিয়ে তার গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তার পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পাশের রুমের একটি খাটের নিচে থেকে বেসেথের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ওই ফ্ল্যা‌টে মা বে‌সেথ, স্বামী, তিন মে‌য়ে ও এক মে‌য়ের স্বামীকে নি‌য়ে সুজাতা থাক‌তেন।‌ সুজাতার বোনের ছেলে সঞ্জিত ও তার বন্ধুরা এই জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত। তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সুজাতার স্বামীর নাম আশীষ মানকিন। তাদের তিন মেয়ে মায়াবী চিরান, মাধবী চিরান ও সুরভী চিরান। তাদের মধ্যে মায়াবীর বিয়ে হয়েছে। তার স্বামীর নাম পেলেস্তার। তারা সবাই কালাচাঁদপুরের ক- ৫৮/২ নম্বর বাসার চতুর্থ তলায় থাকতেন। ঘটনার সময় সুজাতা ও তার মা বেসেথ ছাড়া বাসায় কেউ ছিলেন না। দুপুরে সঞ্জিত দুই থে‌কে তিন জন বন্ধু নিয়ে বাসায় এসেছিল। তখন সুজাতার দুই মেয়ে লা‌ঞ্চে বাসায় এ‌সে‌ছিল। দুপুরের পর তারা কাজে যাওয়ার সময় সঞ্জিত ও তার বন্ধুদের আপ্যায়ন করে যায়। ধারণা করা হচ্ছে এই জোড়া হত্যাকা‌ণ্ডের স‌ঙ্গে সঞ্জিত ও তার বন্ধুদের সম্পৃক্ততা র‌য়ে‌ছে। ওই বাসার মুল ফটকে একটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। পুলিশ সেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। এই ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

আশেপাশের একাধিক প্রতিবেশি জানান, ওই বাসায় কয়েকদিন ধরেই খুব উচ্চ স্বরে ঝগড়া হত। তবে কী কারণে ঝগড়া হত তারা জানাতে পারেননি।

গুলশান থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ‌বি‌কেল সাড়ে ৫টার দিকে সুজাতার মেয়ে মায়াবীর স্বামী পেলেস্তার বাসায় ফিরে দেখেন ঘরের দরজা বাইরে থেকে লাগানো। ছিটকিনি খুলে ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন তার শ্বাশুড়ি সুজাতার গলাকাটা লাশ খাটের ওপর পড়ে আছে। তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়। তি‌নি মায়াবী ও আশীষকে খবর দেন। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আ‌সে। তখন তারা কেউ জানেন না খাটের নিচে সুজাতের মা বেসেথের লাশ রয়েছে। এক ঘন্টা পর তারা খাটের নিচে বেসেথের লাশ পান। সুজাতার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আর বেসেথকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউ‌ন্সিলর জা‌কির হো‌সেন বাবু সারাবাংলা‌কে জানান, আমার এ ওয়া‌র্ডে সা‌ড়ে ৪ হাজার গা‌রো ভোটার র‌য়ে‌ছে, ক‌খনো কোথাও এমন ঘটনা ঘ‌টেনি। হত্যাকা‌ণ্ডের স‌ঙ্গে সঞ্জিত ও তার বন্ধুদের সম্পৃক্ততা র‌য়ে‌ছে ব‌লে ধারণা করা হ‌চ্ছে। বা‌ড়ি‌তে সি‌সি টি‌ভি ক্যা‌মেরা লাগা‌নো আ‌ছে। ওই ক্যা‌মেরায় মানুষ আসা-যাওয়ার সব ফু‌টেজ র‌য়ে‌ছে। পু‌লিশ ফু‌টেজ দে‌খে স‌ন্দেহভাজন‌দের শনা‌ক্তের চেষ্টা কর‌ছে।

বা‌ড়ির মা‌লিক জাহা‌ঙ্গির আলম সারাবাংলা‌কে জানান, ১৭ মাস ধ‌রে এই প‌রিবার‌টি আমার বা‌ড়ি‌তে ভাড়া আ‌ছে। তারা চার তলায় থাকত। সুজাতা ও বে‌সেথ ছাড়া বা‌কি সবাই বা‌হি‌রে কাজ করত। প্রথ‌মে চিৎকার শু‌নে পা‌শের ফ্ল্যা‌টের বা‌সিন্দারা দা‌রোয়ান জালাল‌কে খবর দেয়। জালাল আমা‌কে খবর দি‌লে আ‌মি কাউ‌ন্সিলরকে ঘটনা জানাই। প‌রে কাউ‌ন্সিলর পু‌লি‌শ‌কে খবর দি‌লে লাশ উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা মে‌ট্রোপ‌লিটন পু‌লি‌শের গুলশান বিভাগের উপ-ক‌মিশনার (ডি‌সি) মোস্তাক আহমেদ ব‌লেন, পুলিশ দুজনের লাশ পেয়েছে। তাদের দুজনকেই হত্যা করা হয়েছে। তাদের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে বলা যাবে এর পেছনের কারণ কী এবং কারা হত্যা করেছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসআর/টিএম

আরও পড়ুন

গুলশানে দুই গারো নারীর লাশ উদ্ধার

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন