বিজ্ঞাপন

‘বাধা অতিক্রম করাই মানুষের কাজ’

March 7, 2019 | 7:00 pm

মেধা শ্রম কাজে লাগিয়ে নারীরা এখন সব পেশায় নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করছেন কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সমান তালে কাজ করে নিজের জায়গা তৈরি করে নিচ্ছেনসার্জেন্ট মহসিনা খাতুন তাদেরই একজন আন্তর্জাতিক নারী দিবসে  সারাবাংলা কথা বলেছে তার সাথে, তুলে এনেছে তার জীবনের সংগ্রাম ও সাহসীকতার গল্প সার্জেন্ট মহসিনা খাতুন রাজধানী ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট হিসেবে কাজ করছেন সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিথি চক্রবর্তী

বিজ্ঞাপন

 সার্জেন্ট মহসিনা খাতুন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৯৮৭ সালে জন্ম নেন। কারমাইকেল কলেজ থেকে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৫ সালে তিনি পুলিশ সার্জেন্ট পদে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ট্রাফিক পশ্চিম ডিভিশনের মিরপুর পল্লবী জোনে কর্মরত।

সারাবাংলা: এই পেশায় আগ্রহী হলেন কেন?

মহসিনা: যখন স্কুল, কলেজে যেতাম, তখন রাস্তায় নারী পুলিশ দেখতাম। পুলিশের ইউনিফর্ম পড়া এই নারীদের দেখে খুব ভাল লাগতো। আর মনে হতো, আমি যদি এমন পোশাক পরতে পারতাম! আজ সত্যি সত্যি ইউনিফর্ম পরেই আমি দাঁড়িয়ে আছি।

বিজ্ঞাপন

বাবা আমাকে সবসময় উৎসাহ দিতেন। আমার এই ইচ্ছার প্রতি বাবার পুরো সমর্থন ছিল। বাবা বলতেন, ‘মেয়ে হয়েছো, তাতে কি? ছেলেরা যা করে, সেগুলোই তোমাকে করতে হবে। মেয়ে বলে কোন কাজেই তুমি পিছিয়ে থাকবে না।’

অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই বাবা আমাকে বাইক চালানো শিখতে বলেছেন। বাবার এই উৎসাহ আমার পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হয়েছে।

 

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: পেশা নিয়ে সামাজিক কোন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি?

মহসিনা: যখন প্রথম চাকরি শুরু করি, তখন অনেকেই এই পেশা মেনে নিতে পারতেন না। আশেপাশের মানুষ নানা ধরনের কথা বলতেন। মেয়ে হয়ে রাস্তায় দাঁড়াবে, কাজ করবে- এমন অনেক কথাই শুনতাম। কিন্তু এতে কিছু মনে করিনি আমি। কাজ করে গেছি। এখন দেখছি আমাদের কাজের প্রশংসাই বেশি। আমরা পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে কাজ করছি। নারী হওয়ার কারণে পুরুষের তুলনায় কোন অংশে পিছিয়ে নেই। এখন আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশিসহ আশেপাশের পরিচিত সবাই আমার প্রশংসা করেন।

 

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: কর্মক্ষেত্রে কোন সমস্যায় পড়েন?

মহসিনা: অনেক সময় টয়লেটের সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ আমাদের কাজ হলো রাস্তায়। অফিসে তেমন যেতে হয় না। আমি এখন পল্লবী জোনে কাজ করার ফলে আপাতত এই সমস্যায় পড়ছি না। তবে অনেক নারী সার্জেন্ট এই সমস্যায় পড়েন। এমনকি আমি নিজেও আগে কিছু কিছু জায়গায় কাজ করতে গিয়ে এই সমস্যার পড়েছিলাম।

সারাবাংলা: পেশাগত ব্যস্ততা সত্ত্বেও পারিবারকে সময় দেন কীভাবে?

মহসিনা: আমাকে সংসার, বাচ্চা সবকিছুই সামলাতে হয়। আমাকে ৮ ঘন্টা ডিউটি করতে হয়। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ডিউটি করি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৮ ঘন্টা বাদ দিলে বাকি ১৬ ঘন্টা বাচ্চার সাথেই থাকি।

তবে আমার স্বামী খুব সহযোগিতা করেন আমাকে। তার সহযোগিতার কারণেই আমি ভালোভাবে চাকরি করতে পারছি। আমার স্বামী শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। সাংসারিক নানাকাজে তিনি আমাকে সহযোগিতা করেন।

শুধু আমি না, চাকরিজীবী প্রত্যেক নারীর সহযোগিতা দরকার। তাছাড়া চাকরি করা সম্ভব না। পরিবারের অন্যান্য সদস্য আমার এই পেশা মেনে নিয়েছেন।

 

সারাবাংলা: কাজ করতে গিয়ে কখনও হতাশা আসে কিনা?

মহসিনা: আমার লক্ষ্যই ছিল পুলিশ হবো। তাই পেশা নিয়ে আমার হতাশা আসেনি। তাছাড়া কাজ করতে এসে দেখলাম, পুরুষ সহকর্মীরাও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেন। সন্তান জন্মের সময় সহকর্মীদের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। তাছাড়া অসুস্থ হলে সহকর্মীদের বললে তারা সহযোগিতা করেন।

 

সারাবাংলা: নারীদের জন্য কোন বার্তা দিতে চান?

মহসিনা: যে কোন পেশায় মেয়েদের যাওয়া দরকার। মেয়েদের জন্য আরও কর্মসংস্থান বাড়ানো দরকার। কারণ এখন মেয়েরা পিছিয়ে নেই। আমি মনে করি, এখন নারীদের জন্য কোন কিছুই কঠিন না। আর যেকোন সমস্যা হলে সমাধান নিজেকেই করতে হবে। অন্য কেউ সমাধান করে দেবে না। মানুষের সব কাজেই বাধা আসতে পারে। এই বাধাগুলো অতিক্রম করাই মানুষের কাজ।

 

ছবি- আবদুল্লাহ আল মামুন এরিন

সারাবাংলা/টিসি/ এসএস

 

 

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন