বিজ্ঞাপন

ভোগান্তির শেষ নেই জাবি গ্রন্থাগারে

October 13, 2018 | 8:24 am

।। তহিদুল ইসলাম, জাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও (জাবি) শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার জন্য রয়েছে তিন তলা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। কিন্তু সেখানে নেই প্রয়োজনীয় সব বই, পর্যাপ্ত আসন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যান। একইসঙ্গে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব, স্যাঁতসেঁতে ওয়াশরুম, বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। ফলে গ্রন্থাগার ব্যবহার করা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি যেন নিত্যসঙ্গী। প্রশাসনের উদাসীনতায় গ্রন্থাগারের এই বেহাল দশা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ জাবি শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আবাসিক হলে থাকেন। তবে অধিকাংশ আবাসিক হলে রিডিং রুম না থাকায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ওপরই নির্ভর করতে হয় তাদের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গ্রন্থাগারে প্রয়োজনীয় বই পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। বেশিরভাগ সময়ই কাঙ্ক্ষিত বইটি খুঁজে পাওয়া যায় না। বই খোঁজার পদ্ধতিও এখনো মান্ধাতার আমলের। তাছাড়া অনেক সময় প্রয়োজনীয় বই পাওয়া যায় না। আর পর্যাপ্ত আসন না থাকায় গ্রন্থাগারে লেগে থাকে শিক্ষার্থীদের লাইন। কেউ একজন পড়া শেষ কখন উঠে যাবে, সে অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় বাকিদের।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, গ্রন্থাগারের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদারের মেয়াদে জায়গা স্বল্পতার মধ্যেও দ্বিগুণেরও বেশি আসন বেড়েছে। তবে তাতেও খুব বেশি লাভ হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। বরং অপরিকল্পিতভাবে গ্রন্থাগারে আসন বাড়ানোর পর অতিরিক্ত ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়নি। বিভিন্ন স্থানে পড়ার টেবিলের ওপর কোনো ফ্যান নেই। এমনকি যেসব ফ্যান আছে তার অনেকগুলোই অকেজো। এতে বিশেষ করে একটু গরম পড়লেই পড়ালেখায় মনযোগ দেওয়ার মতো অবস্থা থাকে না তাদের।

জবি গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। প্রায়ই পানিতে ময়লা পাওয়া যায় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য কিছুদিন আগে ফিল্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন সেগুলোও পরিত্যক্ত। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। আবার গ্রন্থাগারে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও না থাকায় লোডশেডিংয়ের সময় শিক্ষার্থীরা গ্রন্থগারের ভেতরে টিকতে না পেরে বাইরে বের হয়ে আসেন। এই সময়টুকু তাদেরকে অলস কাটাতে হয়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রায় দুই ডজন টয়লেট রয়েছে— এর অর্ধেক ছেলেদের, বাকি অর্ধেক মেয়েদের। তবে এই টয়লেটগুলোর অধিকাংশই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ওয়াশরুমগুলোও অন্ধকারাচ্ছন্ন ও স্যাঁতসেঁতে। সেখানে সবসময় নোংরা পানি জমে থাকে।

ক্ষোভ জানিয়ে জাবির অর্থনীতি বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ওবায়দুল সারাবাংলাকে বলেন, লাইব্রেরির অনেক ফ্যানই নষ্ট। কোনোমতে চলছে। ওয়াশরুম নোংরা। বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই। পানি আনতে গেলে ময়লা পাওয়া যায়। এসব সমস্যা সমাধানে প্রশাসনকে বারবার বলা হলেও কোনো সমাধান আসেনি।

এদিকে, গ্রন্থাগারে হুড়োহুড়ি ঢুকতে গিয়ে প্রায়ই ছোট-খাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা রোধে শিক্ষার্থীরা লাইন ধরে গ্রন্থাগারে প্রবেশের নিয়ম চালু করেছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় গ্রন্থগারের আসন ধরার প্রতিযোগিতা। আর দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ভোগান্তি এড়াতে শিক্ষার্থীরা বেছে নিয়েছেন ব্যাগ বা বই রেখে লাইন ধরার পদ্ধতি। আগে এলে আগে লাইনে ব্যাগ রাখতে পারবেন— এই ভিত্তিতে ব্যাগ লইনে রাখেন সবাই। এতে অনেকে খুব ভোরে এসেও কাঙ্ক্ষিত আসন পান না বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।

বিজ্ঞাপন

এসব বিষয়ে গ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাই না। অনেক ফ্যান আমার নিজের টাকায় কেনা। যখন যেভাবে পেরেছি, লাইব্রেরির আসন বাড়িয়েছি। আগে আসন ছিল ২৫০টি, এখন প্রায় ৬শ। আমাদের সুইপার আছে দুইজন। লোকবলের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। তবে প্রশাসন তা বাতিল করে দিয়েছে।’

আরও পড়ুন-

জাবির শিফট ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় ‘বৈষম্যের’ অভিযোগ

সারাবাংলা/এমএইচ/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন