বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গাদের হাতে স্মার্টফোন, অপব্যবহারের আশঙ্কা

March 19, 2019 | 9:42 am

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

কক্সবাজার: নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা গত প্রায় দেড় বছর ধরে বাংলাদেশে বাস করছেন। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে এইসব রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, লেখাপড়াসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ সরকার।

বিজ্ঞাপন

তবে গত কিছুদিন ধরে মাদক পাচার, খুন, ধর্ষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন রোহিঙ্গারা। প্রচলিত আইন না মেনে আশ্রয় শিবির থেকে পালিয়ে অবৈধভাবে স্থানীয়দের মধ্যে মিশে যাচ্ছেন বলেও প্রমাণ মিলছে।

জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩১ টি আশ্রয় শিবিরে সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাস করেন। এদের অনেকেরই সময় কাটে ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে। রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই তেমন শিক্ষিত না হওয়ায় এই মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা খবর ছড়ালে তাতে তাদের প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিষয়টি নজরে আসে সম্প্রতি একটি ভিডিও রোহিঙ্গা শিবিরে ভাইরাল হওয়ার পর।

বিজ্ঞাপন

কিছুদিন আগে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন মালয়েশিয়া প্রবাসী রোহিঙ্গা আব্দুল খালেক। তিনি মিয়ানমারের বলিবাজার এলাকার আবদুস সালামের ছেলে। তার ভাই-বোনসহ আত্মীয়-স্বজনরা কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।

উস্কানিমূলক এই ভিডিওটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এরইমধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়েছে বা ছড়িয়ে পড়েছে।

দেশের নিয়ম অনুযায়ী মোবাইল ফোনের সিমকার্ড কিনতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। সেই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা কিভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, একটি অসাধু চক্র রোহিঙ্গাদের হাতে উচ্চমূল্যে সিমকার্ড ও ফোন তুলে দিচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে জানা যায়, অনেক রোহিঙ্গাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।

এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হক চৌধুরী জানান, আইডি কার্ড প্রদর্শনসহ নানা প্রক্রিয়ার কারণে বাঙ্গালিদেরই সিমকার্ড পেতে হিমসিম খেতে হয় আর সেখানে রোহিঙ্গারা কিভাবে সিমকার্ড পাচ্ছে তা বুঝতে পারছেন না তিনি। বলেন, এই অব্যবস্থাপনার জন্য নিশ্চয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আর প্রশাসন দায়ী। রোহিঙ্গাদের এই বিষয়টা অবহেলা করলে চলবে না। দিন দিন তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের নেটওয়ার্ক মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, মিয়ানমারসহ সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে। আর এই নেটওয়ার্ক দিন দিন শক্তিশালী হয়ে পড়ছে।

শরণার্থী

সময় থাকতেই রোহিঙ্গাদের মোবাইল ব্যবহারের উপর প্রশাসনের বিধি নিষেধ জারির অনুরোধ জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজারের স্থানীয়দের অধিকার আদায়ের সংগঠন ‘আমরা কক্সবাজার বাসী’র সমন্বয়ক কলিম উল্লাহ কমিল বলেন, ‘আমাদের প্রধান দুইটি দাবি রয়েছে। প্রথম হল রোহিঙ্গারা যেন কোনওভাবে বাংলাদেশি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে না পারে এবং কোনো উন্নয়ন সংস্থা যেন তাদের চাকরি না দেয়।

এছাড়া ক্যাম্প এলাকায় নজরদারী বাড়ানোর ওপরও জোর দেন কলিম উল্লাহ। তা না হলে এই এলঅকায় জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘একজন মানুষ মোবাইল ব্যবহার করতেই পারে। কিন্তু একটি সঠিক নিয়মের মাধ্যমেই তা করতে হবে। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তা আদৌ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসব বিষয় এখন ভাবতে হবে। এ বিষয়ে তেমন কোনো আইন এখনো প্রয়োগ করা হয়নি।’

তবে মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে যেন কোনো ধরনের নাশকতা কেউ করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ক্যাম্প এলাকাতেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এসব ছাড়াও পুলিশের ছয়টি ক্যাম্পে ৯৯০ জন পুলিশ নিরাপত্তা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে সিমকার্ড ব্যবহারের বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানালেন এই কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/এসএমএন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন