বিজ্ঞাপন

রাত গভীর হয়, শত ক্লান্তিতেও থামে না উদ্ধার কাজ

March 29, 2019 | 5:40 am

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাত তখন ৩টা। পুরো রাজধানী ক্লান্তির চাপ নিয়ে ঘুমিয়ে। ঠিক তখনও বনানীর কামাল আতাতুর্ক সড়কের ২২ তলা ভবন এফআর টাওয়ারের সামনে-পিছনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সমান তৎপর উদ্ধার প্রচেষ্টায়। দিনের অর্ধেকেরও বেশি সময়ের আপ্রাণ চেষ্টায় আগুন নেভাতে সমর্থ হওয়ার পরই এতটুকু বিশ্রামের ফুসরত মেলেনি তাদের। তাই তো ক্লান্তি আর শ্রান্তিতে দু’চোখ বুঁজে আসতে চায় তাদের। হঠাৎ হঠাৎ বসেও পড়েন সড়কের পাশের ফুটপাতে, একটু হেলান দেন দেয়ালে। কিন্তু ক্ষণিক বসেই ফের উঠে পড়েন, ছুটে যান আগুন তাণ্ডবে দগ্ধ এফআর টাওয়ারে, যে আগুনের তাণ্ডব কেড়ে নিয়েছে ১৯টি তাজা প্রাণ।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘বুকের ভেতরে আছে মস্ত বড় এক কলিজা’

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দিবাগত রাতে এভাবেই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের সক্রিয় দেখা গেল আগুনে পোড়া ভবনটিতে। আগুন নেভানো হয়ে গেলেও রাতভর উদ্ধার তৎপরতায় এতটুকু ঘাটতি নেই তাদের।

শ্রান্তি ভাঙাতে এক টুকরো বিশ্রাম

চোখ-মুখে ক্লান্তির চাপ নিয়ে সড়কের পাশের ফুটপাতে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রামের চেষ্টা করছিলেন ফায়ার সার্ভিসের বারিধারা ইউনিটের ফায়ারম্যান মো. ইউছুফ। কিন্তু বিশ্রাম নিতে গিয়েও বিশ্রাম নেওয়া হয় না, ভবনের ভেতরে আর কেউ আটকা পড়েছে কি না, কিংবা কোনো মরদেহ পড়ে আছে কি না, সেই ভাবনা উঠে পড়েন একটু পরই। ছুটে যান কোনো একটি তলায়, নিচে ফিরে এসে অন্য সহকর্মীদের কাছে জানার চেষ্টা করেন কোন তলায় পরিস্থিতি কী।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় ১৯ লাশ উদ্ধার: ফায়ার সার্ভিস

মো. ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগুন নেভানোর পর উদ্ধার কাজের সহযোগীদের অনেকে চলে গিয়েছে। কিন্তু আমরা তো আর যেতে পারি না, সম্পূর্ণ অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের দায়িত্ব শেষ হবে না। যদি একজন মানুষও আটকা পড়ে থাকেন কোথাও, তাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার না করতে পারলে তো এত পরিশ্রম সবই বৃথা। আবার কোনো মরদেহ যদি কোথাও থেকে উদ্ধার করা যায়, তাহলেও অন্তত ওই ব্যক্তির পরিবার সান্ত্বনাটুকু তো পাবে। এর সবটুকুই তো আমাদের কাজের ওপরই নির্ভর করে। তাই আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই। সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে।

বুঁজে আসে চোখের পাতা

বারিধারা ইউনিটের এই ফায়ারম্যান আরও বলেন, আমরাও তো মানুষ। আমাদেরও ঘুম-বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। দেখেন, যারা কাজ করছি সবার চোখ-মুখজুড়ে ক্লান্তির ছাপ। টানা কাজ করে সবাই ক্লান্ত। কিন্তু উদ্ধার কাজ তো আর থামিয়ে রাখার সুযোগ নেই। তাই একজন একজন করে ৫/১০ মিনিটের জন্য একটু বিশ্রাম নিচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- এফআর টাওয়ারের আগুনের তদন্তে ৪ কমিটি

পাশেই থাকা ক্রেনের চালকের চেম্বারে ছিলেন ফায়ার সদর দফতরের উপসহকারী পরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ভবনের ভেতরে আমাদের কর্মীরা এখনও উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। আগামীকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে উদ্ধার কাজ চলবে।

এদিকে, রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুড়ে যাওয়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ অপসারণে হঠাৎ ভবনটির সামনে এসে হাজির হন ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ভবন থেকে ভেঙে পড়া কাঁচসহ অন্যান্য বস্তুগুলো তারা তুলে নেন ভ্যান গাড়িতে।

চলাচলের উপযোগী করতে হবে সড়ক, তাই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের তৎপরতা

পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. কামাল সারাবাংলাকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এগুলো সরিয়ে নিতে। তাই আমরা এগুলো সরিয়ে নিচ্ছি। কাল সকালে তো এই রাস্তাতেই গাড়ি চলবে। তাতে যেন কোনো সমস্যা তৈরি না হয়, সে কারণেই এগুলো নিয়ে যাচ্ছি আমরা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ঢামেক মর্গে ৭ মরদেহ, শনাক্ত ৬টি হস্তান্তর রাতেই

এদিকে বাড়তে থাকে রাত। সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্লান্তি-শ্রান্তি। তবু বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টা জ্বলতে থাকা যে আগুন ১৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তার লেলিহান শিখা এফআর টাওয়ারের কোথায় আর কতটুকু তার চিহ্ন রেখে গেছে, তার সন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী বাহিনীর কোনো অবসর নেই।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে আগুন লাগে বনানীর এফআর টাওয়ারে। ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেওয়া হয় চার জনকে, এর মধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুই জনকে মৃত ঘোষণা করেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেওয়া হয় ৪২ জনকে, এর মধ্যে এক শ্রীলংকার নাগরিককে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেওয়া পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এর বাইরে উদ্ধার হওয়া মরদেহ মিলিয়ে এফআর টাওয়ারের আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ জন। এছাড়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৭০ জন।

সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন