বিজ্ঞাপন

বাঙালি দেখলেই গুলি করে হত্যা করে হানাদাররা

March 30, 2019 | 1:35 am

সুমন ইসলাম

৩০ মার্চ ১৯৭১। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা পূর্ব বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। কেবল রাজধানীতে নয়, মফস্বল শহর ও গ্রামেও তারা হত্যা-অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের জঘন্য কাজে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সহজ-সরল মানুষগুলোর ওপর নেমে আসে চরম নির্মমতা। ভারতে অটল বিহারী বাজপায়ীর নেতৃত্বে প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘের মিছিল হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। প্রগতিশীল বামপন্থী সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ অব্যাহত কোলকাতা ও দিল্লিতে। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস দলীয় মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় রাস্তায় নামেন উদ্বাস্তুদের ত্রাণের চাঁদা তুলতে। নক্সালকর্মীরাও এগিয়ে আসেন সহায়তায়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি মন্ত্রীদের পরদিন জরুরি বৈঠকে যোগ দিতে খবর পাঠান। বাংলার স্বজনদের কাছে যেতে আগের দিনের মতো সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করে পশ্চিমবাংলার তরুণরা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- বিশেষ বিমানে করে বঙ্গবন্ধুকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়

চট্টগ্রামের লালখান বাজারে পাকিস্তানি বাহিনী এবং বিহারি ও রাজাকাররা মিলে হত্যা করে কয়েক হাজার বাঙালি। ওয়াসার মোড়ের কল থেকে পানি দেওয়া হচ্ছে— এমন প্রতারণামূলক গুজব রটিয়ে জড়ো করা হয় বাঙালিদের। এরপর হানাদার সেনারা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে শত শত বাঙালিকে। রক্তে লাল হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। দুপুর থেকে বাঙালি দেখলেই গুলি করে হত্যা করতে থাকে হানাদাররা। রাতেই চলে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মানুষ হত্যা। চট্টগ্রামের লালখান পুরো মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠে।

শুধু লালখান নয়, সারাদেশে চলতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ। অপরদিকে ‘যার যা আছে তাই নিয়ে’ বীর বাঙালি স্থানে স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গাংনী উপজেলায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে আনসার-মুজাহিদ ও সাধারণ জনগণের লড়াই হয়। নাটোরের লালপুরে ‘ময়নার যুদ্ধে’ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সুদৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলে সাঁওতাল ও বাঙালিরা। এই সম্মুখযুদ্ধে সাঁওতাল তীরন্দাজসহ ৪০ জন বাঙালি শহিদ হন। মুক্তিপাগল জনতা, ইপিআর ও আনসার বাহিনীর হাতে পর্যুদস্ত হয় ২৫ নম্বর পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। ময়নার যুদ্ধের সময় তিনটি জেট বিমান আকাশে চক্কর দিতে থাকে। একটি হেলিকপ্টার থেকে খাদ্য ও রসদ জোগান দেয় হানাদারদের। এই যুদ্ধে ৪০ জন শহীদ হলেও ১৫ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। অন্যদিকে, ক্ষেতের মধ্যে তীর ও গুলিবিদ্ধ সাত পাকিস্তানি সেনার লাশও পাওয়া যায়। পাকিস্তানি বাহিনী রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে রংপুর শহর ও সংলগ্ন গ্রামগঞ্জের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে বহু লোক প্রাণ হারায়। পাশাপাশি পাকিস্তানি বাহিনী আগুন জ্বালিয়ে বাড়িঘর-মহল্লা-গ্রাম ধ্বংস করে এবং পাশবিক অত্যাচার চালায়।

বিজ্ঞাপন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাদের পার্লামেন্টে বলেন, পূর্ব বঙ্গের সাড়ে সাত কোটি লোক তাদের স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম শুরু করেছেন, ভারত তাকে সাহায্য না করে পারে না। ভারত তাই সংগ্রামে সাহায্য করেই যাবে।

সকাল ৮টায় ১০৭তম ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার এস এ আর দুররানী যশোর সেনানিবাসের অস্ত্রাগারের চাবি নিজের কাছে নিয়ে নেয়। বিকেল ৫টার দিকে মতিন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস দখল করেন। গোদাবাড়ীতে অবস্থানরত ইপিআর বাহিনীর ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর সর্বাত্মক আক্রমণে সিপাহি আবদুল মালেক শহীদ হন। যশোরের খণ্ডযুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসে পাকসেনারাই ঊর্ধ্বতনদের জানান, মুক্তিসেনাদের বীরত্ব। নতুন করে সাতক্ষীরাসহ আরো কিছু এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটির খবরে উদ্বিগ্ন পাকজান্তা সারাদেশে পাঠাতে শুরু করে রিজার্ভ সেনাদের। তবে এদিন খোদ ঢাকায় চোরাগুপ্তা হামলা করতে গিয়ে ধরা পড়ে দুই গেরিলা, ঢাকাতেও আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তল্লাশি শুরু হয়।

সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সাহায্যের জন্য বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক সরকার ও জনগণের প্রতি পুনরায় আবেদন জানায়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন