বিজ্ঞাপন

ছয় জনের ওপর এলাকার চাপ

April 19, 2019 | 8:07 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: শপথ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে অনড় বিএনপি। দলটির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও নির্বাসনে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকেও মিলছে না ‘গ্রিন সিগন্যাল’। কিন্তু শপথ গ্রহণের ব্যাপারে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির ছয় প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় কর্মী-সমর্থকরা।

বিজ্ঞাপন

বিজয়ী ছয় প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকার কয়েকজন বিএনপি নেতা, নির্বাচনের সময় ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা কর্মী-সমর্থক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, যারা বিএনপির সমর্থন নিয়ে বিভিন্ন সময় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শপথের ব্যাপারে দলের সর্বশেষ অবস্থান জানার জন্য সম্প্রতি ঢাকায় আসার আগে বিজয়ী ছয় প্রার্থী নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকার বিএনপি নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওইসব বৈঠকে শপথ নেওয়া না নেওয়ার ব্যাপারে সবার অভিমত জানতে চান তারা।

 আরও পড়ুন: সময় মাত্র ১৩ দিন, কী করবে বিএনপি?

সূত্রমতে, ওইসব বৈঠকে শপথ নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা বিজয়ী প্রার্থীদের জানান, নির্বাচনের আগে ধানের শীষ প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করায় প্রতিপক্ষের কাছে তারা চিহ্নিত হয়ে আছেন। ফলে, এমপি হিসেবে শপথ না নিলে তারা হয়রানির শিকার হবেন। তাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা বাড়বে। আর যদি বিএনপির বিজয়ী প্রার্থী শপথ নেন, তাহলে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা বিএনপির কর্মী সমর্থককে সমীহ করবেন। নির্বাচিত সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে তারা বিশেষ মর্যাদা পাবেন।

বিজ্ঞাপন

ওইসব বৈঠকে কোনো কোনো প্রার্থীকে তার কর্মী-সমর্থকরা হুমকি দিয়ে এ-ও বলেছেন, ‘শপথ না নিলে, আমরা আর থাকব না আপনার সঙ্গে।’

বগুড়া-৪, কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন। ১৯৭৩ (আওয়ামী লীগ), ১৯৮৬ (জাতীয় জাতীয় পার্টি) ২০১৪ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ছাড়া বাকি সব নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে বিজয়ী দল বিএনপি। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই এ আসনটি ছাড়তে চায় না দলটি। স্থানীয় বিএনপির ৯০ ভাগ কর্মী-সমর্থকই বিজয়ী নেতার শপথের পক্ষে।

জানতে চাইলে বগুড়া-৪ আসন থেকে বিজয় বিএনপি প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই। মিডিয়ায় কথা বলা বারণ আছে। যারা ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন।’

বিজ্ঞাপন

বগুড়া-৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত নন্দীগ্রাম পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র সুশান্ত কুমার শান্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চাই মো. মোশারফ হোসেন শপথ নিক। সংসদে গিয়ে কথা বলুক। এ আসনটি বিএনপির। এটা আমরা ছাড়তে চাই না। শপথ না নিলে এ আসনটিও আওয়ামী লীগের হয়ে যাবে। আমাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন বেড়ে যাবে।’

ঠাকুরগাঁও-৩, পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে বিজয়ী হয়েছেন স্থানীয় বিএনপির প্রবীণ নেতা মো. জাহিদুর রহমান। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচন ছাড়া এ আসনটিতে বিএনপি কোনোদিন জেতেনি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুর্গে প্রথম জয় পাওয়ায় উল্লসিত স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা। তারা সবাই চান মো. জাহিদুর রহমান শপথ নিয়ে যেন সংসদে যান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. জাহিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘‘দল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে, ‘শপথ নেবে না’। কিন্তু এলাকার সবাই চায়, আমরা শপথ নেই। দলের প্রতি আমাদের যেমন দায়িত্ব আছে। এলাকার সাধারণ মানুষের প্রতিও তো আমাদের দায়িত্ব আছে। হতাশার কারণে তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন দল কী করবে?’’

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সামিউল আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মো. জাহিদুর রহমান এমপি নির্বাচিত হওয়ায় পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈলে বিএনপির গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি শপথ না নিলে অনেকেই তার সঙ্গে আর কাজ করবে না। তাই আমরা চাই, তিনি শপথ নিয়ে সংসদে যান।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: সময় মাত্র ১৩ দিন, কী করবে বিএনপি?

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটিতে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার। এই আসন থেকে এর আগে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। মন্ত্রিত্বও পেয়েছেন একবার। সুতরাং মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পাওয়া জয় হাতছাড়া করতে চায় না স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের অবস্থান শপথের পক্ষে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উকিল আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ আসনে আমি নতুন এমপি নই। এবার দিয়ে মোট চার বার আমি নির্বাচিত হলাম। এলাকার লোকজন আমাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখেই অভ্যস্ত। তারা চায় আমি শপথ গ্রহণ করি।’

এছাড়া চাপাইনবাগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত মো. আমিনুল ইসলাম ও চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মো. হারুনুর রশীদের ওপরও এলাকার লোকজন চাপ অব্যাহত রেখেছে। এ দু’টি সংসদীয় আসনের বিএনপি নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটাররা চায় তাদের নির্বাচিত প্রার্থী শপথ গ্রহণ করুক।

জানতে চাইলে মো. আমিনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সত্য বলতে কী, এলাকার সবাই চাপ দিচ্ছে শপথগ্রহণের জন্য। তারা চায়, আমি সংসদে গিয়ে কথা বলি। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে সেটা করতে পারছি না।’

তবে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সারাবাংলা/এজেড/এমএনএইচ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন