বিজ্ঞাপন

৮ বছর পর গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল, লক্ষ্য ৩

April 25, 2019 | 12:12 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দীর্ঘ ৮ বছর পর বিশেষ কাউন্সিলে বসতে যাচ্ছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। পুনর্গঠনের মাধ্যমে দলকে তৃণমূল পর্যন্ত চাঙ্গা করা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন করে আয়োজনের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারসহ জনগণের সামনে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরা— এই তিনটি প্রধান লক্ষ্য নিয়েই আয়োজন করা হচ্ছে এই বিশেষ কাউন্সিল। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ, দলীয় নির্দেশ অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া দলের দুই নেতাকে নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়গুলোও থাকবে আলোচনায়। এছাড়া রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও কাউন্সিলে আলোচিত হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আগামীকাল শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ১০টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে গণফোরামের এই কাউন্সিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে গণফোরাম দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সঠিক দিকনির্দেশনা নিয়ে হাজির হবে।

দল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গত বছরের শেষের দিকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছিল গণফোরাম। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ওই সময় গণফোরামের সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়গুলো উঠে আসেনি। কিন্তু গত আট বছরে কাউন্সিল না হওয়ায় দলের সাংগঠনিক শক্তি অনেকটাই খর্ব হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই যেমন মারা গেছেন, তেমনি দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন নতুন অনেকে। বিভাগীয় ও জেলা কমিটিগুলোও একেবারেই সক্রিয় নয় বললেই চলে। এ পরিস্থিতিতে দলকে পুনর্গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এর আগে, গণফোরামের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে। এরপর গত আট বছরে কাউন্সিল না হওয়ায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম একেবারেই স্থবির হয়ে পড়ে। কেন্দ্রসহ বিভাগীয় ও জেলা ইউনিটগুলো কর্মসূচির মধ্যেও নেই। ফলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলকে পুনর্গঠন করে চাঙ্গা করে তোলাই গণফোরামের এই কাউন্সিলের প্রধানতম লক্ষ্য।

বিজ্ঞাপন

তবে দল পুনর্গঠনই কেবল নয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে পুনঃনির্বাচনের দাবি রয়েছে গণফোরামের। কিন্তু সেই দাবি আদায় করতে হলে সারাদেশে দাবির পক্ষে জনসমর্থন সংগ্রহ করতে হবে এবং সেই জনমত নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ কাউন্সিলে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতারা। কাউন্সিল থেকে এ বিষয়ে সারাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণারও কথা রয়েছে।

এর বাইরে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে চায় গণফোরাম। দেশের মানুষের সামনে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা তুলে ধরতে চায় দলটি। শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও বিশেষ বার্তা দিয়ে চায় এই দল। আর সেই লক্ষ্যে কাউন্সিল থেকে দলের একটি লিখিত বক্তব্য প্রচারের কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

জানতে চাইলে গণফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জগলুল আফ্রিদ সারাবাংলাকে বলেন, ২০১১ সালের পর থেকে দলের কোনো কাউন্সিল হয়নি। দলকে পুনর্গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। গত আট বছরে অনেকেই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, আরও অনেকে যুক্ত হবেন। তাদের কার ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন আছে। সারাদেশের সবার কাছ থেকে মতামত নিতে হবে এ জন্য।

বিজ্ঞাপন

জগলুল আফ্রিদ আরও বলেন, রাজনৈতিক দলের কাউন্সিলে রাজনৈতিক বক্তব্যও থাকবেই। আমাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বার্তা দেওয়া হবে, এমনটিই পরিকল্পনা রয়েছে।

দলের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুর রহমান বলেন, অনেকদিন থেকেই দলের কার্যক্রমে কোনো গতি নেই। এ কারণেই বিশেষ কাউন্সিল আয়োজনের পক্ষে সবাই মত দিয়েছেন। কাউন্সিলে দলকে পুনর্গঠনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাছাড়া আমাদের যে রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা, তার সপক্ষে সারাদেশে জনমত গড়ে তোলার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

গণফোরাম মনে করছে, পুনঃনির্বাচনে যে দাবি রয়েছে দলটির, সে দাবি আদায় করতে হলে শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো প্রয়োজন। সেটিকেই কাউন্সিলে প্রাধান্য দেবে গণফোরাম। পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে, বিএনপির সঙ্গে কোন কোন ইস্যুতে যৌথ আন্দোলনে গণফোরাম মাঠে থাকবে— এসব বিষয়ও গুরুত্ব পাবে এই কাউন্সিলে।

এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের বিজয়ী দুই প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান এরই মধ্যে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। সুলতান মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর মোকাব্বির খানকে শোকজ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় এই দুই নেতা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে কাউন্সিলেই।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের কেন্দ্রীয় একজন নেতা বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে আমরা বিএনপির সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু সব বিষয়ে আমরা একমত নই। কিছু কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ভবিষ্যতে বিএনপির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী হবে, সেটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। কাউন্সিল থেকে সবার কাছে এ বিষয়ে মতামত নেওয়া হবে।

দলের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, দলকে পুনর্গঠন করাই এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান কাজ। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে মারা গেছেন, নতুন অনেকে যুক্ত হয়েছেন। তাদের নিয়ে দলকে পুনর্গঠন করা হবে। এছাড়া কাউন্সিল থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি আসবে। সারাদেশে সভা-সমাবেশ, আমাদের দাবি-দাওয়ার প্রতি জনসমর্থন আদায়— এসব বিষয়গুলো সামনে রয়েছে।

সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, বর্তমানে যে সামাজিক অবক্ষয় চলছে, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে, একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছে— এগুলোর বিরুদ্ধে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর দেশব্যাপী আন্দোলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আরও কাকে কাকে যুক্ত করা যায় কিংবা কাউকে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বাদ দিতে হবে কি না— কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমেই এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা এই কাউন্সিলের পরেই সারাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত সংগ্রহ করে আন্দোলন গড়ে তুলব।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর/জেডএফ 

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন